সীতাকুন্ড ট্যুর গাইড – সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান

ভৌগলিকভাবে এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। মিরসরাই সীতাকুন্ড অঞ্চলকে বলা হয় বাংলাদেশের ঝর্নার স্বর্গ। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম পাহাড় ও ঝর্না হলো সীতাকুন্ড পাহাড়। এই ভ্রমণ ব্লগে সীতাকুন্ড ট্যুর গাইড ও সকল সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। সীতাকুন্ড যাওয়ার জন্য ট্রেনে মেইল ছাড়া অন্য কোন ট্রেন না থাকায় পুরনো ভালোবাসা চট্টগ্রাম মেইলে উঠলাম। যাত্রার শুরুতে আবারও ধরা। ১০০ টাকার টিকেট কাউন্টার থেকে ১১০ টাকায় কাটতে হলো।

সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান

সীতাকুন্ড ট্যুর গাইড নিয়ে বলার আগেই বলে রাখি গ্রুপভাবে এসব ট্রেইল ট্যুর করা উচিৎ। তাহলে আমাদের গল্পটা এবার শুনুনঃ ঢাকা থেকে আমরা চারজন রওনা হলাম। সকাল ৬.৩০ মিনিটে সীতাকুন্ডে পৌঁছে গেলাম। সীতাকুন্ড রেলস্টেশন নেমে সেখানেই ফ্রেশ হয়ে তন্দুর রুটি, সবজি দিয়ে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা শেষে হেঁটে রওনা হলাম সীতাকুন্ড বাজারের দিকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম।
সীতাকুন্ডে দর্শনীয় স্থান 
  • চন্দ্রনাথ পাহাড়
  • ঝরঝরি ট্রেইল
  • বাঁশবাড়িয়া সী বিচ
  • গুলিয়াখালী বিচ
  • মহামায়া লেক
  • ঝরঝরি ট্রেইল
  • কমলদহ ট্রেইল
  • সীতাকুন্ড সমুদ্র সৈকত ও কুমিরা ফেরিঘাট
১। চন্দ্রনাথ পাহাড়ঃ বাজার থেকে সিনএজিতে উঠার পর গোড়ায় সিএনজি নামিয়ে দিলো। আহা! ট্রেকিং শুরু! কিছুদূর গিয়ে ১০টাকা করে বাঁশ কিনে নিলাম। বাম পাশের আধো পাহাড়, আধো মনুষ্য তৈরি সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসলাম। যতটা উঁচু বা কষ্ট হবে ধারনা করেছিলাম সেটা না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলাম বলা চলে। তবে প্রচন্ড বাতাস সে হতাশা দূর করে দিলো অনেকখানি। অতৃপ্তি ছিলো শুধু পরিষ্কার দৃশ্য দেখতে না পাওয়া। দুপুর ১১.৩০ পর্যন্ত থেকেও কুয়াশা না কাটায় সাগর দেখা হয় নাই।নামার সময় ডান পাশের সিঁড়ি পথে নামলাম। এই পথ আসলেও অনেক খাড়া এই পথে উঠলে কি অবস্থা হতো চিন্তা করেও প্যারা খাচ্ছিলাম। বেশিরভাগ মানুষ এই পথেই উপরে উঠে এবং অর্ধেক পথে গিয়ে ফিরে আসে!
সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান

২।ঝরঝরি ট্রেইলঃসীতাকুন্ড মীরসরাই রেঞ্জের যে কয়েকটা এডভেঞ্চারাস ও সুন্দর ট্রেইল রয়েছে তারমধ্যে ঝরঝরি ট্রেইল অন্যতম। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা শান্ত শীতল ঝিরিপথ ধরে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে যখন ঝর্ণার কাছে পৌছাবেন বিশ্বাস করুন আপনার সকল ক্লান্তি তখন গ্যাস বেলুনের মত উড়ে যাবে। ঝরঝরি ঝর্ণার পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপড়ে উঠে গেলে বেশ কয়েকটি ক্যাসকেড ও ঝর্ণা আপনাকে আরো মুগ্ধ করবে বিশেষ করে স্বর্গের সিড়ি না অসম্ভব সুন্দর একটি ক্যাসকেড আছে যা সিড়ির মত ধাপে ধাপে খাজকাটা। এই ট্রেইলের শেষে রয়েছে মুর্তি ঝর্ণা। ঝরঝরি ঝর্ণা পর্যন্ত ট্রেইলটি খুব একটা কঠিন নয়, অনেক মহিলা এবং শিশু ট্রাভেলার কেউ যেতে দেখেছি সেখানে। এখনই ঝর্ণায় যাবার বেস্ট সময় আর এই সময় ঝর্ণায় পানির ফ্লো বেশ ভালো।

সীতাকুণ্ড ভ্রমণ গাইড

৩।বাঁশবাড়িয়া সী বিচঃ সৈকত থেকে শুরু হয়ে এক লোহার ব্রীজ চলে গেছে সমুদ্রের মধ্যে অনেকখানি। ব্রীজে দাঁড়িয়ে থেকে জোয়ারের স্রোতে পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার দূশ্চিন্তা দেখা দিতেই পারে!এরপর সীতাকুণ্ড বাজারে এসে দুপুরে খেয়ে(আপন রেস্তোরাঁ, খাবারের মান ভালো) মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে রওনা। হলারের মাধ্যমে ঠাকুরদিঘি বাজার(৪০৳ জনপ্রতি) – সিএনজি দিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক (১৫৳ জনপ্রতি)

এখন সেই কাঙ্ক্ষিত মহামায়া লেক! পড়ন্ত বিকেলে কায়াকিং এর লোভে পরে যখন ১ ঘণ্টা বৈঠা বাওয়ার পর‌ও শরীরে শক্তি সম্পূর্ণ থাকে তখন উপলব্ধি হয় জীবন আসলেই সুন্দর! কায়াকিং ৩০০৳ প্রতি বোট (এক বোটে সর্বোচ্চ ২ জন), ২৫০৳ স্টুডেন্ট আইডি দেখালে।

৪।গুলিয়াখালী বিচঃস্বপ্নের মতন সুন্দর এই বিচটি।মনে হয় সৃষ্ঠিকর্তা নিজ হাতে মনের সব রং দিয়ে সাজিয়েছেন এই সৈকতটি.!!নিজের সময়গুলো একান্ত মনের মতন করে কাটাতে এই বিচের তুলনা নেই।এই বিচের পরতে পরতে ছড়িয়ে অাছে সবুজ ভালবাসা।বলা বাহুল্য, সুন্দবনের কিছুটা স্বাদ পাওয়া যায় এই বিচে।শ্বাসমূল, জোয়ার-ভাটা, নোনা জল সবমিলিয়ে এক অন্যরকম ভাললাগা।বিচে যেতেই ঘাসে ঘেরা সবুজ গালিচা অাপনাকে স্বাগতম জানাবে।বিচের পাশেই ছোট্ট আকা-বাকা খাল, চাইলে বোট নিয়ে চক্কর লাগাতে পারেন।

৫।মহামায়া লেকঃমহামায়া লেক নিয়ে বলার কিছুই নেই, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এই লেক কয়েক বছর ধরেই খুব পরিচিতি লাভ করেছে।মহা মায়ার ভরা যৌবন ফুটে উঠেছে এখন। থইথই পানি আর চারদিকে সবুজব বনে আচ্ছাদিত পাহাড়। এগারো বর্গকিলোমিটারের এই লেকে সবচেয়ে বেশি মজা পাবেন কায়াকিং করে। গহীনে ঢুকলেই পাবেন সুনসান নিরবতা। আশেপাশে কেউ নেই। আপনি ও আপনার বোটম্যাট, নিচে পানি, উপরে আকাশ, আর চারপাশে পাহাড়। প্রকৃতি যেন এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের রূপ নেয়। এছাড়াও লেকে নামার আগে দুপাশে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার রাস্তা আছে। চূড়ায় একতলা একটি ভবন আছে, তার ওপর থেকেও লেকের নৈসর্গিক রূপ দেখা যায়।

৬।ঝরঝরি ট্রেইল:যেকোনো ট্রেকিং ট্যুরে ওয়েদার কন্ডিশন বিবেচনা করেই বের হবেন।বর্ষাকাল হলো ঝরনা গুলোর যৌবন কাল।ঝরঝরি ট্রেইল টা একদম ই যাচ্ছেতাই ভেবেছিলাম। যেহেতু বড় ঝরনা নাই সেহেতু এমন ভাবাটাই স্বাভাবিক। আর কেউ এমন ছবিও এনে দিতে পারেনি। কিন্তু অপার সৌন্দর্য আর ঝিরিপথ আর সব শেষে ঝরনা ও স্বর্গের সিঁড়ি যেন সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে।

৭।কমলদহ ট্রেইলঃবড় দারোগাহাট থেকে অল্প সামনে গিয়ে ডান দিকে ইটভাটার পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে হেটে রেললাইন পার হয়েই এই ট্রেইলের শুরু। ট্রেইলের প্রথম ঝর্ণাটি হল রূপসী এর উপরে উঠে ঝিরিপথ ধরে হাটলে সামনে দুইটি রাস্তা পরে একটি সোজা আরেকটি বাম দিকে চলে যায়। প্রথমে সোজা পথ ধরে বিশ মিনিট হাটলে একটি ঝর্ণা পাবেন। ঝর্ণাটির একটু আগে একটি পাথরের পাশে উপরে উঠার পথ আছে ঐ পথে ঝর্ণার উঠে ঝিরি পথ ধরে অসংখ্য ছোট মাঝারি ঝর্ণা পার হয়ে সর্বশেষ ছুরিকাটা ঝর্ণা। আবার একি পথে ফিরে আসতে হবে সেই জায়গায় যেখান হতে সোজা পথে গিয়েছিলাম। এবার বামের পথটি ধরে গেলে আবার দুটি পথ একটি ডানে আরেকটি সোজা ডানের ঝিরিপথ ধরে সামনে গেলে আরো কিছু ছোট মাঝারি ঝর্ণা পড়ে (সময়ের অভাবে পুরো যেতে পারিনি) আবার ফিরে এলাম যেখান থেকে ডানে গিয়েছিলাম। এবার সোজা পথ ধরে চলে গেলাম ছাগলকান্দায়। এটিই আমার কাছে সবচেয়ে আবেদনময়ী ঝর্ণা।

৮। সীতাকুন্ড সমুদ্র সৈকত ও কুমিরা ফেরিঘাট
সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা নামক স্থানে অবস্থিত। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা নামক স্থানে ফেরিঘাটটি অবস্থিত।তীর থেকে সমুদ্রের অভ্যন্তরের দিকে ছুটে চলা দৃষ্টনন্দন এ জেটি ব্রীজের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে পৌ’ছালে সমুদ্রের মাঝখানে আছেন বলে ভ্রম হবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সীতাকুণ্ডের সুউচ্চ পাহাড়গুলো এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখার অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারণ। কুমিরা ব্রীজ থেকে বিশাল বিশাল জাহাজের সারি দৃষ্টি এড়াবেনা কিছুতেই।

কিছু পরামর্শঃ

১।সিএনজিতে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন।
২।খাবার সময় দাম জেনে এরপর অর্ডার করবেন।
৩।সীতাকুন্ড বাজারে ভোজ রেস্টুরেন্টে আমরা বিরানী,ভাত,মাংস সব খেয়েছিলাম। এদের খাবার ভালো।
৪।পাহাড়ে উঠার সময় লাঠি নিয়ে উঠবেন। তেমন কাজে না লাগলেও মনে সাহস পাবেন।
৫।চন্দ্রনাথে উঠার সময় অবশ্যই বাম পথ দিয়ে উঠবেন এবং ডানের সিঁড়ি দিয়ে নামবেন।
৬।চন্দ্রনাথ থেকে নামার সময় ইকোপার্কের রাস্তায় যাবেন না। হাঁটতে হাঁটতে জীবন শেষ হয়ে যাবে এবং ওই রাস্তায় ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে।
৭।গুলিয়াখালী বিচে যাওয়ার সময় জোয়ার-ভাটার খোঁজ নিয়ে যাবেন। দুপুর ১-২টার দিকে জোয়ার থাকে।
৮।গুলিয়াখালীতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থেকে আসবেন সম্ভব হলে। সেইক্ষেত্রে যেই সিএনজিতে যাবেন তার ফোন নাম্বার রেখে দিবেন।
৯।গুলিয়াখালীতে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যায়।
পরিবেশ সচেতনতাঃ
১।যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।
২।পলিথিন নিয়ে যাবেন সব ময়লা একসাথে করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।

Leave a Comment