বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ও ট্যুর প্লানের সকল তথ্য জানুন!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত দার্জিলিং শহর। ভৃ-পৃষ্ট থেকে ৭১০০ ফুট উচ্চতায় এই শহরটি অপরূপ সোন্দার্যের আধার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দার্জিলিংকে“পাহাড়ের রানী” নামে অভিহিত করা হয়। দার্জিলিং শহরটি হিমালয় পাহাড়ের পাদদেশ জুড়ে দাড়িয়ে আছে ফলে সারা বছর জুড়ে এখানে ঠান্ডা থাকে। আকাশের উপরে চকচকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘূর্ণায়মান পাহাড়গুলির মধ্যে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের চিত্তাকর্ষক সূর্যোদয় দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করেন।

প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে পর্যটক বেড়াতে যায়। যে পরিমাণ পর্যটক দার্জিলিং শহর ঘুরতে যায় তার বড় একটি অংশ হল বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে যায়। অনেক পর্যটক প্রথম ঘুরতে গেলে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয় থাকে, তাদের সুবিধার জন্য আমরা তুলে ধরেছি দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ও ট্যুর প্লানের সকল বিস্তারিত তথ্য।

বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং ভ্রমণ খরচ

বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং বেড়াতে প্রতি বছর অনেক পর্যটক যেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং বাসে ও ট্রেনে যেতে পারবেন। বাস ও ট্রেনে যাওয়ার মোটামুটি ছোট একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

এই বাজেট অনুযায়ী ৬৫০০ টাকা প্রতিজন হয় তবে, সাধারণ খাওয়া দাওয়া ও সাইড সিন শেয়ার গাড়িতে করলে ৬০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে ।

বাস যাত্রা

ঢাকার গাবতলী থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু নন এসি এবং এসি অনেক গুলি বাস ছেড়ে যায়। বাংলাদেশের বুড়িমারী ও ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত নন-এসিতে ভাড়া ৬০০ থেকে ৬৫০-এর মধ্যেই পড়বে। আর এসিতে ভাড়া পড়বে ৮৫০ টাকা।

আপনি যদি শ্যামলি বাসে যেতে চান তবে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে আপানার যাতায়াত ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকার মত। তবে সরাসরি আপনি শ্যামলী বাস যোগে যেতে পারবেন না, বর্ডার পর্যন্ত নিয়ে তারপর অপর একটি বাসে আপনাকে নিয়ে যাবে।

ট্রেন যাত্রা 

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোন ট্রেন দার্জিলিং যায় না। সেক্ষেত্রে আপনাকে মিতালি এক্সপ্রেসের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যেতে হবে।

মিতালী এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে চলাচল করে। মিতালী এক্সপ্রেস ক্যান্টনমেন্ট থেকে জলপাইগুড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এসি বাথ ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিট ৩ হাজার ৮০৫ টাকা, এসি চেয়ার ২ হাজার ৭৫ টাকা। নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকা।

চ্যাংড়াবান্ধায় পৌঁছে জিপগুলোতে চেপে দার্জিলিং যেতে হবে সেক্ষেত্রে ১৫০০ রুপির মত খরচ হতে পারে।

হোটেল খরচ 

হোটেল খরচ কত হতে পারে সে বিষয়টা নির্ভর করে আপনি কেমন হোটেল থাকবেন এবং কতদিন থাকবেন সাথে খাবার খরচ কেমন করবেন। দার্জিলিঙে সস্তায় অনেক হোটেল আছে। দামি হোটেল থাকতে চাইলে ম্যালের চারপাশে খুব সহজে হোটেল পেয়ে যাবেন। তবে কম দামে হোটেলে থাকতে চান তাহলে আপনাকে একটু দূরের দিকে নিতে হবে যেমন ট্রয়ট্রেন স্টেশনের কাছে বা বাতাসিয়া লুপ এর দিকে অথবা ম্যাল রোড থেকে নেমে ঘোড়ার আস্তাবলের দিকে যে রোডটি গিয়েজেম এই সকল জায়গায় সস্তায় হোটেল পেয়ে যাবেন।

দার্জিলিং এ ১০০০ টাকায় ভাল মানের হোটেল পাবেন। চমৎকার হোটেলে খোলা বারান্দাসহ রুম ভাড়া ১,৩০০ রুপির মধ্যে পাবেন। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে মধ্যম হোটেল রুম পেয়ে যাবেন আবার একটু ভাল মানের হোটেল নিতে চাইলে খরচ পড়বে ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।

খাবার খরচ

দার্জিলিং খাবার খরচ নির্ভর করবে আপনার খাবারের মান অনুসারে। দার্জিলিং খাবারের মধ্যে বাঙ্গালী খাবার জনপ্রিয় যেমন ভাত, গরুর মাংস, ও মসুর ডাল। এছাড়াও দার্জিলিং এর স্থানীয় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন, স্থানীয় খাবারের মধ্যে গানড্রাক, মম, থুপসা, আলুর দম, নাগা প্লাটার এবং চ্যাং এই খাবার গুলি খুবই জনপ্রিয়।

দার্জিলিং দর্শনীয় স্থান সমূহ

হ্যাপি ভ্যালী চা বাগানঃ 

১৮৫ সালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান তৈরি করা হয়। হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান দার্জিলিং এর মধ্যে সব থেকে প্রাচীন একটি চা বাগান। দার্জিলিং মলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।চা খেয়ে দেখতে ও বাগানের ভিতরে ছবি তুলতে সব থেকে ভালো গোলাপ ধরা টি গার্ডেন ও হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেন।

টাইগার হিল: 

শিলিগুড়ি মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি জায়গা হল টাইগার হিল। সানরাইজ ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল টাইগার হিল। টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব কাছে মনে হয়। টাইগার হিলের আসল সৌন্দার্য দেখতে সকালে যেতে হবে। সকালে যেতে হলে আগের দিন গাড়ি বুক করে রেখে দিবেন।

সেনচাল লেক ও বন্যজীবন অভয়ারণ্যঃ 

দার্জিলিং দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে সেনচাল লেক ও বন্যজীবন অভয়ারণ্য অন্যতম। দার্জিলিং মূল শহর থেকে ১০ থেকে ১২ কিলিমিটার দূরে অবস্থিত অভয়ারণ্যটি। ভারতের প্রাচীনতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এখানে হরিণ, বন্য শুকর, হিমালয়ের কালো ভাল্লুক, ভারতীয় চিতাবাঘ, জঙ্গল বিড়াল, রিসাস বানর, আসাম মাকাক, হিমালয়ের উড়ন্ত কাঠবিড়ালি জন্য আবাসস্থল। সেনচাল হ্রদ দার্জিলিং শহরে পানীয় সরবরাহ করে থাকে।

বাতাসিয়া লুপঃ 

বাটাসিয়া লুপটি মাউন্টেনের দর্শনীয় দর্শনের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাতাসিয়া লুপ এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। এখানে বিশ্বযুদ্ধের একটি মিউজিয়াম অবস্থিত। দার্জিলিং শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দার্জিলিং আকর্ষণীয় রেল রুট বাতাসিয়া লুপ অবস্থিত। বাতাসিয়া লুপের কেন্দ্রে একটি ওয়ার মেমোরিয়াল দাঁড়িয়ে আছে। এই স্মৃতিসৌধটি জেলা সৈনিক বোর্ড, দার্জিলিং কর্তৃক সাহসী গোর্খা সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল।

দার্জিলিং চিড়িয়াখানাঃ 

দার্জিলিং চিড়িয়াখানা আয়তন ৬৭ একরের বেশি। দার্জিলিং চিড়িয়াখানা হিমালয় চিড়িয়াখানা নামেও পরিচিত। এই চিড়িয়াখানায় প্রসিদ্ধ একটি মিউজিয়াম আছে। দার্জিলিং এই চিড়িয়াখানাটি লাল পান্ডা ও স্নো লেপার্ড দের জন্য খুবই বিখ্যাত। এখানে প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু ৬০টাকা।

রক গার্ডেন এবং গঙ্গামায়া পার্কঃ 

রক গার্ডেন এবং গঙ্গামায়া পার্ক দার্জিলিং দর্শণীয় স্থান গুলির মধ্যে একটি। প্রতি বছর অনেক পর্যটক ঘুরতে যায়। ১৯৮০ এর দশকে রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি পর্যটন ব্যাহত করার পরে দার্জিলিংয়ের প্রতি লোকেদের আকৃষ্ট করে। গঙ্গা মায়া পার্কটি রক গার্ডেন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত।

মিরিকঃ 

দার্জিলিং এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণের জায়গা হল মিরিক। মিরিক হল একটি লম্বা হ্রদ। হ্রদটির আয়তন 1.25 কিলোমিটার লম্বা। ক পাশে লেক ও অন্য পাশে পাহাড়ি গাছের বন। এখানে আপনি দেখতে পাবেন রোদ ও বৃষ্টির খেলা।

অবজারভেটরি হিলঃ 

অবজারভেটরি হিল পর্যটক আসার প্রধান কারণ হল এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়। মহাকাল মন্দিরের পাশেই আছে অবজারভেটরি হিল অবস্থিত। প্রতিদিন সকালে অনেকে এখানে সকালের ব্যায়াম করতে আসে এখানকার সকালের বাতাস নেওয়ার জন্য।

 

Leave a Comment