এমন অপরূপ দৃশ্য আর শান্ত পরিবেশ দেখলেই মন জুড়ায় যায় একদম।সুন্দরবন মূলত ঘুরা হয় শিপ দিয়ে কিন্তু তাতে অনেক খরচ হয়ে যায়।কিন্তু সব কয়টা স্পট ভিজিট করতে হলে শিপ এর বিকল্প কিছু নেই।কিন্তু যদি বাজেট ট্রাভেলার হন আর কম খরচে সুন্দরবন কয়েকটি স্পট দেখে আসতে চান তাহলে তাহলে ৬ জন এর একটা গ্রুপ করে নিন। কম হলেও সমস্যা নেই আমরা ৩ জন ছিলাম।সুন্দরবনে আপনি মেইনলি ২ ভাবে যেতে পারেন, নিজ উদ্যোগে বা কোন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে।
ঢাকা থেকে মংলা এর ডিরেক্ট নন এসি বাস আছে এগুলাতে মংলা আসতে পারেন। অথবা এসি বাস এ খুলনা এসে খুলনা থেকে মংলার বাস আছে ৭০ টাকা করে। মংলা এসে নদি পার হবেন প্রতি জন ২ টাকা আর ঘাট এ ১ টাকা দিতে হয়। তারপর আমরা যে কটেজ এ ছিলাম ( বাদাবন ইকো কটেজ, দেখতে খুব ই সুন্দর এবং পরিষ্কার) সেখান থেকে অটো এসে নিয়ে গিয়েছে। মংলা থেকে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লাগে।
যাওয়ার সময় আপনি আশেপাশে খালি মাছের ঘের আর জংগল দেখতে পাবেন সাথে স্থানীয় এর ঘরবাড়ি।
কটেজ এ পৌছায় দুপুর এ তাদের পুকুর এ সাতার কাটতে পারেন সাতার না পারলেও তাদের Lifeguard তা দিয়ে পুকুর উপভোগ করতে পারবেন।
দুপুর এর খাবার এর পর পাশে বন এর সাথে খড়মা নদী আছে সেখানে সরু ও আকাবাকা পথ দিয়ে বন এর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
কিভাবে ১-২ ঘন্টা পার হয়ে যায় বলা যায়না এতো সুন্দর আর নির্জন জায়গা।
বিকালে ফিরে লোকাল বাজার এ ঘুরতে পারেন এবং বৈদ্যমারী ইউনিয়ন পরিষদ দেখতে পারেন।
সন্ধ্যায় ফিরে কটেজ থেকে সানসেট উপভোগ করতে পারেন। এবং রাতে বার-বি-কিউ এর ব্যবস্থা আছে, আপনি যদি মাছ বার-বি-কিউ করতে চান তবে আগে থেকেই ( সকালে অথবা আসার আগে) বলে দিবেন কটেজ মালিক ই সব ব্যবস্থা করে দিবে। এবং আসার সাথে সাথে পরের দিন করমজল ও হাড়-বাড়িয়া ঘুরার কথা বলে নিবেন কেমন কি পরবে। সাধারণত জালি বোট এ করে নিয়ে যাবে।
যাওয়ার সময় বোট এ চার পাশে সুন্দরবন উপভোগ করতে করতে যান।
বনের মধ্যে হরিণ দেখতে চাইলে ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখুন অনেক প্রানি ই দেখতে পাবেন।
নদীতে শুশুক দেখতে পারবেন একটু পর পর উপরে উঠে একটা তো আমাদের বোট এ ধাক্কা দিতে নিয়েছিলো।
অনেক সময় নদীর পাশে কুমির এর ও দেখা পাওয়া যায় নাকি যদিও আমরা পাইনি।
হাড়-বাড়য়া তে কাঠের ট্রেইল আছে অনেক বড় সিকিউরিটি এর অভাব ফিল হলে বন বিভাগ থেকেই অস্ত্রধারী কর্মী আছে তাদের নিয়ে নিবেন।
এখানে গোলপাতা, সুন্দরী এবং অনেক ঘরনের গাছ দেখতে পারবেন সাথে অনেক বন্য প্রাণির পায়ের ছাপ, ছোট ছোট লাল কাকড়া।
বের হয়ে কমজল যাবেন সেখানে বছর খানেক আগে নাকি একজন বাঘ দেখেছিলো এই পাড় থেকে ঐপাড় এ যেতে।
করমজল এ কুমির ও হরিন প্রজনন কেন্দ্র।
হরিন খোলাখুলি ভাবে ঘুরছে তাদের আদর করতে পারবেন ( আঘাত করা ও খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকুন)
বড় দুটা কুমির এর নাম ও আছে রোমিও ও জুলিয়েট।
অনেককে দেখি কুমির এর গায়ে বোতল ছুড়ে মারছে এসব করা থেকে বিরত থাকুন।
হরিন এর খাবার (ঘাস) কিনতে পাওয়া যায় খাবার দিতে মন চাইলে সেখান থেকে কিনে দিতে পারেন।
তারপর করমজল এর ট্রেইল আছে সেখানে যেতে পারেন। ( বন্যপ্রাণী হতে সাবধান)
সুন্দরবন ভ্রমণ করমজল
ট্রেইল এর চারপাছের গাছপালা হাড়বাড়িয়া থেকে একটু কম। তবে অপরুপ সুন্দর।
ও হ্যা গুইশাপ পাবেন অনেক বড় বড় ৫ফিট+ লম্বা।
ঐদিন সারাদিন করমজল ও হাড়বাড়িয়া তেই চলে যাবে বিকালে সানসেট দেখতে দেখতে কটেজ ফিরতে পারেন। চাইলে ঐ রাত থেকে পরের দিন সকালে ব্যাক করতে পারবন পথবা ঐদিন রাতেই চলে আসতে পারেন।
সম্ভাব্য খরচ সমুহঃ
১) ঢাকা টু মংলা নন এসি বাস ৬০০।
অথবা,
ঢাকা টু খুলনা এসি ৬০০-১২০০ বাস ভেদে এবং খুলনা টূ মংলা ৭০ টাকা।
২) মংলা টু বৈদ্যমারী ২০০ টাকা অটো, ১০০ টাকা মটরসাইকেল ( দুটাই ফুল রিজার্ভ যে কয়জন ই বসেন।)
৩) কটেজ ১২০০ টাকা সাথে সকালের নাস্তা।
৪) প্রতি বেলা খাবার ২০০
৫) বা-বি-কিউ করতে চাইলে মাছ ও মাংস ভেদের দাম নির্ভর করবে।
৬) ছোট নৌকা দিয়ে বন এর ভেতর ঘুরতে চাইলে ২০০-৩০০ এর মত যাবে।
৭) জালিবোট আমাদের থেকে নিয়েছিলো ৫৫০০ সকল খরচ সহ ( নাস্তা, লাঞ্চ, বিকালের নাস্তা, স্পট গুলার এন্ট্রি ফি সব) গাইড হিসেবে রিসোর্ট মালিক ছিলো, খুবি মিশুক আর আন্তরিক।
কিছু নির্দেশনাঃ
১) বন বিভাগ এর নিয়ম মেনে চলুন।
২) বন এর পানিতে নামবেন না।
২) বন এর মধ্যে হইচই করবেন না।
৩) ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন ( একটু পর পর ডাস্টবিন আছে)।
৪) করমজল এ বানর থেকে ব্যাগ, ক্যামেরা সাবধান, খাবার তো ভুলেও দিবেন না একবার দিলে পিছু লেগে থাকবে।
৫) করমজল এর ওয়াচ টাওয়ার এ লিখালিখি করবেন না, মানুষ পারে তো নিজের চৌদ্দপুরুষ এর নাম লিখে দিয়ে আসে, প্রেম নিবেদন, ফোন নাম্বার, বাড়ীর ঠিকানা যা পারসে লিখে দিসে এতোটা বিবেকহীন কিভাবে হয় আমি বুঝে উঠতে পারিনা, এমনকি ওয়াচ টাওয়ার এর সিলিং পর্যন্ত বাদ দেনি।
শুভ সন্ধ্যা,একটা জিনিস জানা খুবই জরুরী সপটা হল ফোন নং।আমরা বেড়াতে যেতে চাই কিন্ত যোগাযোগ করবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।বিস্তারিত জানালে খুশী হবো।
ধন্যবাদান্তে,শবনম।