বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমণ গাইড। কোথায় কোথায় ঘুরবেন?

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে আবহমান বাংলার রাতজাগা প্রাণ চাঞ্চল্যতার নাম বরগুনা, বঙ্গোপসাগরের কুলঘেষা ছোট জেলা শহর বরগুনা, পায়রা নদীকে পিঠে নিয়ে বয়সের দিক দিয়ে দীঘ্ পথে হাটা এই জেলা অনেক আদি, গ্রাম বাংলা ঐতিহ্যগত কিছু সংস্কৃতি এখনো এখানে দেখা যায়।বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার গল্প শুনেছি অনেক,পাথরঘাটা থেকে সুন্দরবন নাকি অনেক কাছে সেইসাথে পাথরঘাটার হরিণঘাটাতেও আছে ম্যানগ্রোভ বন,আছে সাগরসৈকত!!

বরগুনা জেলার দর্শনীয় স্থান

borguna jela

ঢাকা থেকে বরগুনার লঞ্চ ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায়।তবে আমি বলব বরিশালের লঞ্চে যেতে,সেখান থেকে বরগুনা যেতে।কেন বলেছি সেটা বরিশাল আর বরগুনার লঞ্চ দেখলেই বুঝবেন।আর যারা সময় বাঁচাতে চান তারা বরগুনার লঞ্চ ধরবেন।

বরগুনা জেলার নবগঠিত উপজেলা শহর তালতলী থেকে ১৮ কি.মি দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সোনাকাটা ইউনিয়নে এই দর্শনীয় স্থানটি। এই বণ ভুমির মধ্যে রয়েছে ইট বিছানো পায়ে চলার পথ, এই পথের শেষে রয়েছে ৩ কি.মি দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত । পথের দীর্ঘ প্রায় ৫ কি মি । এই সৈকতের বেলাভূমিতে দাড়িয়ে অবলোকন করতে পারবেন সূর্য উদয় ও অস্তমিত হওয়ার স্বর্গীয় দৃশ্য।

কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সড়ক কিংবা নৌপথে আপনি যেতে পারবেন। তবে নৌপথের যাত্রা অনেক আরামদায়ক। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য এটা হতে পারে নতুন অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকালে একে একে নৌযান যাত্রা করে পটুয়াখালীর/ আমতলীর উদ্দেশ্যে ।ডেক ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। কেবিন সিঙ্গেল ১০০০/১১০০ আর ডাবল ১৮০০ টাকা। ফ্যামিলি কেবিন ২৫০০ টাকা। পরিবার সাত-আটজন মিলে যেতে চাইলে নিতে পারেন ভিআইপি কেবিন, ভাড়া ৪০০০/৫০০০ টাকা। এখানে আমতলীর লঞ্চের (সুন্দরবন ৬, প্রিন্স হাসান হোসেন ১, এম ভি ইয়াদ) ভাড়া দেওয়া হল। পটুয়াখালীর লঞ্চ এ উঠলে। লঞ্চ থেকে নেমে আপনি আমতলীর বাসে উঠে পড়বেন। এছাড়াও মোটর বাইক রয়েছে। আমতলী আসলে মোটর বাইক/ ইজি বাইক করে সোনাকাটা চলে যেতে পারবেন।
সড়কপথে ঢাকা (গাবতলী) থেকে তালতলী বাস রয়েছে। রাতে বাস ছাড়ে। সময় লাগবে স্বাভাবিকভাবে ১৩-১৪ ঘণ্টা। ভাড়া পড়বে নন-এসি (সাকুরা/সার্বিক) ৭০০ টাকা, এসিতে( সাকুরা) আসতে পারবেন আমতলী পর্যন্ত ভাড়া ১০০০ টাকা।
কি খাবেন?
বনের পাশে ফকিরের হাট নামে একটা বাজার আছে সেখানের খাবারের দোকান গুলোতে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস ভুনা পাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা?
বনটিতে ঢুকার আগে চোখে পড়বে শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও এর পাশে বাংলোর মতো একটা বাড়ি। এটা আমতলী ফরেস্ট রেঞ্জের রেস্টহাউস। ওখানকার কর্তা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
কোথায় কোথায় ঘুরবেন
১। লালদিয়া বনঃবরগুনা হতে বাসযোগে পাথরঘাটা যাওয়ার পর মোটর সাইকেলে অতি সহজে লালদিয়া বনে যাওয়া যাবে। এছাড়াও পিরোজপুর হয়ে পাথরঘাটায় যাওয়া যায়।
২।টেংরাগিরি ইকোপার্কঃআমতলী ও তালতলী সড়ক হয়ে তালতলী যাওয়ার পর মোটর সাইকেল যোগে অতি সহজেই গন্তব্য স্হলে যাওয়া যায়।
৩।রাখাইন পল্লীঃআমতলী- তালতলী সড়ক হয়ে অতি সহজে তালতলীর রাখাইন পল্লীতে যাওয়া যায়।
৪।হরিন ঘাটা ইকোপার্কঃহরিণঘাটার বন বা লালদিয়ার চরে আসতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়ক বা নদীপথে প্রথমে বরগুনা আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাস, টেম্পু বা নৌকায় করে তালতলী হয়ে যাওয়া যাবে হরিণঘাটায়।
৫।সিডর স্মৃতিস্তম্ভঃ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াল থাবায় বরগুনা জেলা ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সম্মুখীন হয়।বরগুনার প্রায় অধিকাংশ এলাকা প্রচন্ড জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় মৃতদেহ দাফনের জন্য উঁচু ভূমির সংকট দেখা দেয়। এই বিপর্যয়ের মুখে বরগুনা সদরের ১০ নম্বর নলটানা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গ্রামের উঁচু স্থানে সিডরে প্রাণ হারানো ১৯ টি কবরে ২৯ জনকে সমাধিস্থ করা হয়। সিডরে আক্রান্ত সকল নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে জেলা প্রশাসন বরগুনা কর্তৃক নির্মিত হয় গর্জনবুনিয়া সিডর স্মৃতিস্তম্ভ।
কিছু নির্দেশনাঃ
১) বন বিভাগ এর নিয়ম মেনে চলুন।
২) বন এর মধ্যে হইচই করবেন না।
৩) ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন ( পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা নাই তাই সাথে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গাতে ফেলুন)
৪) সমুদ্র সৈকতে যেতে কয়েকটা ব্রীজ পার হতে হয় কিছু ভাঙ্গা রয়েছে সাবধানে পার হবেন।
৫) সাথে করে পানি ও হালকা খাবার নিতে ভুলবেন না ভিতরে এগুলোর ব্যবস্থা নাই।
৬) ইচ্ছা করলে আপনি না হেটে ট্রলারেও যেতে পারেন সমূদ্র সৈকতে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বন বিভাগের লোকদের বল্লে তারা ঠিক করে দেবে।
৭) বন্য প্রানীকে উত্যক্ত করা যাবে না

Leave a Comment