প্রিপেইড মিটারের সুবিধা অসুবিধা

সরকার গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ বিল শতভাগ আদায়ের লক্ষ্যে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে । আগামী ৫ বছরের মধ্যে সারা দেশে প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা  রয়েছে সরকারের।বর্তমানে প্রি-পেমেন্ট মিটারসমূহ আরো আধুনিকায়ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে ২.০ কোটি প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রিপেইড মিটারের সুবিধা অসুবিধা

প্রিপেইড মিটার

প্রতিবছর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার যথাযথ হিসাব রাখা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব । এছাড়া কখনো কখনো গ্রাহক পর্যায়ে নানা কারণে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ নষ্ট হয়। এ সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপেই শতভাগ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাই বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে এবং বিদ্যুতের যথাযথ হিসাব রাখতেই নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রিপেইড মিটার সিস্টেম বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে অপচয় প্রায় শূন্য ভাগে নামিয়ে আনবে।

প্রিপেইড মিটারের সুবিধাগুলো হলো

১। প্রি-পেমেন্ট মিটারের গ্রাহক সদস্যগণ তাদের বিদ্যুৎ বিলের উপর ১% ডিস্কাউন্ট পাবেন।

২। প্রি-পেমেন্ট মিটারের মাধ্যমে নতুন সংযোগ প্রদান এবং লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জামানত গ্রহণ করা হবে না।

৩। প্রি-পেমেন্ট মিটারের ক্ষেত্রে বিল দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হবে না। পর্যায়ক্রমে নিজের মোবাইল দ্বারা ঘরে বসে বিল পরিশোধ করতে পারবেন।

৪। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হবে না, ফলে লাইন কাটার টেনশন থাকবে না এবং অতিরিক্ত ডিসি/আরসি ফি ১২০০ টাকা এবং ৫% এলপিসি লাগবে না।

৫। যেকোন সময়ে গ্রাহক দেখতে পারবেন তার কত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে আর কত টাকা অবশিষ্ট আছে।

৬। প্রি-পেমেন্ট মিটার ব্যবহারে অযথা ভোল্টেজ উঠা-নামার ফলে বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির উপর প্রভাব পড়বে না।

৭। ভুল মিটার রিডিং এর কারণে অতিরিক্ত ভোতিক বিল প্রদানের কোন ঝামেলা নাই। গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহার অনুযায়ী মিটার থেকে টাকা কাটা হবে।

৮। অনেক সময় মালিকানা ঝামেলায় বিল জমা রেখে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দেন, প্রি-পেমেন্ট মিটারের সেই সুযোগ থাকবে না।

৯। গ্রাহকের অসুবিধার কথা চিন্তা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন, অন্যান্য বিশেষ ছুটির দিন ও ফ্রেন্ডলি আওয়ারে (বিকাল ৪ টা থেকে পরের দিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত) মিটারে টাকা না থাকলেও মিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে না। এই সময় মিটার ক্রেডিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

১০।গ্রাহক প্রয়োজনে মোবাইল কার্ডের মতো রিচার্জ কার্ড কিনে বা দরকার পড়লে ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে নিজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন।

 

প্রিপেইড মিটারের অসুবিধাঃ

কিন্তু প্রিপেইড মিটারের টাকা রিচার্জের কেন্দ্র (ভেন্ডিং স্টেশন) চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

রাজধানীর লালবাগ ও আজিমপুরসহ কয়েকটি এলাকার একাধিক বাসিন্দা এ অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ভেন্ডিং স্টেশন কম থাকায় প্রতিদিন দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে টাকা রিচার্জ করতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে।

এ বিষয়ে রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রিপেইড মিটারে ভোগান্তির শেষ নেই। দেড়মাস আগে বেলা পৌনে ৪টার দিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে দ্রুত ভেন্ডিং স্টেশনের আজিমপুর শাখায় গেলে জানানো হয়, বিকেল ৪টায় বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীকাল আসেন। রিচার্জ করতে না পারায় একরাত ও পরের দিন বেলা ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মধ্যবিত্তের কাছে সব সময় টাকা থাকে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে রিচার্জ করা যায় না। ফলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া সঙ্গে রিকশা কিংবা বাসে করে ভেন্ডিং স্টেশনে যাওয়া যায় না। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আজিমপুরের বাসিন্দা খায়রুল হাসান বলেন, রিচার্জ করাসহ বিভিন্ন স্তরের কার্যক্রমে  ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রিপ্রেইড মিটার ব্যবহারের ৬০০ টাকা বিল আসতো এখন ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দিতে হয়।

তিনি আরো বলেন, পর্যাপ্ত রিচার্জ কেন্দ্রসহ মিটারের লিমিট বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহক অসন্তোষ কমবে। গ্রাহক ভোগান্তি দূর করতে সেলফোনে সেবা প্রদানের ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

বংশালের বাসিন্দা কালাম খান বলেন, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার রাজধানীতে জন্য অনুমোদিত ব্যাংক ও শাখা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে দীর্ঘলাইন দিতে হচ্ছে। কম কমিশন পায় বলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলো প্রিপেইড মিটার রিচার্জের জন্য ডেস্কের সংখ্যা সীমিত রাখছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি-সহায়তা সংস্থার (পাওয়ার সেল) মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মিটারের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের শাখা ও ভেন্ডিং স্টেশন সংখ্যা বাড়ানো এবং সাধারণ দোকান থেকে রিচার্জ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রিচার্জ করার পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment