তামিলনাড়ু, দক্ষিণ ভারতের, নীলগিরি পাহাড় এবং বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত। তামিলনাড়ু, তার বিশিষ্ট প্রাচীন দ্রাবিড় সংস্কৃতির সাথে, দক্ষিণ ভারতের একটি চূড়ান্ত অংশ। রাজ্যটি পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের উভয়ই সমৃদ্ধ। সমুদ্র সৈকত এবং হিলিং স্টেশনগুলিও জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। তার সংস্কৃতির কারণে, তামিলনাড়ু বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বিশেষ করে ঝগড়া-মুক্ত গন্তব্য দেখার জন্য। তামিলনাড়ুর দর্শনীয় স্থান উপভোগ করুন।
প্রাটীন দ্রাবিড় সংস্কৃতির সাথে, তামিলনাড় ভারতের একটি আকর্ষণীয় অংশ। হিল স্টেশন এবং সৈকতগুলিও তামিলনাড়ুর বিখ্যাত পর্যটন স্থান। তার সমুদ্ধ সংস্কৃতির কারণে, তামিলনাড়ু ভারতের একটি ঝামেলামুক্ত রাজ্য। তামিলনাড়ুতে দেখার জন্য এই শীর্ষ পর্যটন স্থানগুলি দেখুন যাতে আপনি সেখানে থাকাকালীন সেগুলি মিস না করেন।
তামিলনাড়ুর দর্শনীয় স্থান
তামিলনাড়ু রাজ্য কিছু আশ্চর্যজনক সমুদ্র সৈকত শহর এবং হিল স্টেশন অফার করে লোকেদের কাছে আসতে এবং দেখার জন্য। রাজ্যটি হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। তামিলনাড়ুর ঐতিহাসিক মূল্যও এটিকে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য করে তোলে। তামিলনাড়ু বহু পর্যটন স্পট সহ ভারতের একটি অবশ্যই দর্শনীয় রাজ্য।
১। মহাবলীপুরম বিচ
চেন্নাইয়ের প্রায় এক ঘন্টা দক্ষিণে, মহাবালিপুরম তার সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য ঐতিহ্যের কারণে একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান । প্রশান্তি, লোভনীয় পরিবেশ এবং অসংখ্য সুন্দর সাদা বালির সমুদ্র সৈকতের সাথে ক্যাসুয়ারিনা ঝোপে ভরা দর্শনীয় দৃশ্য এই সমস্ত যুক্তি হল কেন কেউ এই মহান শহরে যেতে চায়। সৈকতে ব্যাগপ্যাকার এবং সার্ফিং করার সুযোগ রয়েছে। পাথরের ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত, মহাবলীপুরমে হস্তশিল্পের ভাস্কর্যের জন্য কেনাকাটা করার এবং কাজের কারিগরদের দেখার একটি দুর্দান্ত জায়গা।
২। পন্ডিচেরি
তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূলে একটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পন্ডিচেরি , 18 শতকের একটি প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশ ছিল এবং এখনও সেই ফরাসি স্বাদ বজায় রেখেছে। ভারতের মধ্যে অল্প বাজেটের মধ্যে সেরা কিছু জায়গায় ভ্রমণ করতে চাইলে ফরাসি সংস্কৃতির স্বাদ এবং শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে পন্ডিচেরি আপনার জন্য পারফেক্ট। বঙ্গোপসাগরের সীমানায়, প্রোমেনেড এবং ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার হল পন্ডিচেরির সবচেয়ে আনন্দময় একটি জায়গা।
৩। চেন্নাই
দক্ষিণ ভারতের প্রবেশ পথ হিসেবে পরিচিত, চেন্নাই তামিলনাড়ুর রাজধানী। তামিলনাড়ু দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে চেন্নাই অন্যতম। বিশাল শহর ব্যস্ত, তবুও রক্ষণশীল।চেন্নাই হল একটি আকর্ষণীয়, ব্যস্ত এবং রক্ষণশীল শহর যেখানে গভীর ঐতিহ্য রয়েছে যা ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা প্রভাবকে এখনও স্থান দিতে পারেনি। দর্শনীয় শহর রাখার প্রধান কারণ হল সৈকত, মন্দির, জাদুঘর এবং গ্যালারী, পুরাতন পর্তুগিজ শৈলী গীর্জা, এবং পরিতৃপ্তি পার্ক। মেরিনা সমুদ্র সৈকত বিশেষত উত্সবের একটি জায়গা যেখানে স্থানীয়ভাবে হাতে তৈরি জিনিস বিক্রি করে শত শত দোকান। এখানকার স্ট্রিট ফুড স্টলগুলিতে কিছু সুস্বাদু স্থানীয় স্ন্যাকস রয়েছে। ভারতীয় শহরের মত, চেন্নাইতে বিশ্ব বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ বা পর্যটক আকর্ষণ নেই। তবে দক্ষিণ ভারতে যেকোনও জায়গায় আপনাকে বেড়াতে গেলে আপনি এই শহরের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
৪। কাঞ্চীপুরম
সারা ভারতের মধ্যে অসংখ্য পুরাতন মন্দির বা স্থাপনা শহর গুলির মধ্যে কাঞ্চীপুরম এর নাম সবার আগে আসবে। কাঞ্চীপুরম তার স্বতন্ত্র সিল্কের শাড়ির জন্য বিখ্যাত। শহরটি বস্ত্র ও রেশম বয়ন শিল্পের কেন্দ্রও। চেন্নাই থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার মধ্যে অবস্থিত এই শহর একসময় পল্লব রাজবংশের রাজধানী হিসাবে পরিচিত ছিল। এখানে এমন কিছু পুরাতন স্থাপনা আছে যেগুলি পৌরাণিক স্থাপত্য সৌন্দর্য বহন করে চলেছে। কাঞ্চিপুরম ভ্রমণের সময় স্থানীয় তাঁত এবং খাবারের দোকানগুলিতে স্থানীয় খাবার অবশ্যই দেখতে পারেন।
৫। মাদুরাই
মাদুরাই, তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে খুব পরিচিত। মাদুরাই , তামিলনাড়ু তথা পুরো ভারতের মধ্যে একটি পুরাতন শহর। রঙিন আভা এবং বিশিষ্ট ভাস্কর্যের জন্য পরিচিত অসংখ্য মন্দির রয়েছে। মাদুরাই শহরটি 4,000 বছরের পুরনো। এটি একটি পদ্ম ফুলের আকারে ডিজাইন ও নির্মিত হওয়ার কারণে এটি ‘লোটাস সিটি’ নামে পরিচিত। মাদুরাই ভ্রমণের সময় আপনাকে থিরুমলাই নায়ক প্রাসাদ, গান্ধী মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, আথিসায়াম, শ্রী কুডাল আজাগার মন্দির, আরুলমিগু কাল্লালগার মন্দির, ভান্দিউর মারিয়ামমান টেপ্পাকুলাম এবং সামানার জৈন পাহাড় গুলি দেখতে ভুলবেন না।
৬। নাগাপট্টিনাম
নাগাপট্টিনাম বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। শহটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত। ভেলাঙ্কন্নির দিব্যা দেশমের বাড়ি এই শহরেই অবস্থিত। নাগাপট্টিনমের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব প্রশংসার যোগ্য। অনেক বেশি সংখ্যাক মন্দির ও মসজিদ এখানে রয়েছে। সমুদ্র সৈকতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আবাসস্থল।
৭। কন্যাকুমারী
কন্যাকুমারী ভারতের মূল ভূখণ্ডের শেষ চিহ্নিত করে। কন্যাকুমারী ভারতের সর্বোচ্চতম স্থানে অবস্থিত, যেখানে বঙ্গোপসাগর আরব সাগর এবং হিন্দী মহাসাগরে মিলিত হয়। তামিলনাড়ুর এই বিখ্যাত পর্যটন স্থানটিতে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পর্যটক আসে।স্বামী বিবেকানন্দ স্মারক এবং তামিল কবি Thiruvalluvar এর বিশাল মূর্তি, তীরে একটি পাথুরে দ্বীপে অবস্থিত। এপ্রিল মাসে পূর্ণ চন্দ্র রাতে আপনি কন্যাকুমারী যান, তবে আপনি সূর্যের ঐন্দ্রজালিক দর্শনের সাথে চাঁদ দেখতে পাবেন। জনপ্রিয় আকর্ষণের স্থানগুলি হল তিরুভাল্লুভার মূর্তি, কন্যাকুমারী সমুদ্র সৈকত, মহাত্মা গান্ধী মন্ডপম, সর্বাণী শক্তিপীঠ শ্রী কন্যা কুমারী ভগবতী আম্মান মন্দির, আওয়ার লেডি অফ র্যানসম শ্রাইন, সানসেট ভিউ পয়েন্ট এবং ভাট্টকোট্টাই ফোর্ট।
৮। উটি
উটি হল তামিলনাড়ুর সবচেয়ে বেশি চাওয়া-পাওয়া পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি। ব্রিটিশদের চেন্নাইয়ের গ্রীষ্মকালীন সদর দফতর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাহাড়ের ধারে অত্যাশ্চর্য চা বাগান এবং ধাপে চাষ দেখার মতো একটি দৃশ্য। উটির প্রধান আকর্ষণ হল উটি লেকে বোটিং, ডোডদাবেট্টা চূড়ায় আরোহণ করা এবং ২২ হেক্টর সরকারি বোটানিক্যাল গার্ডেন।
৯। তিরুভান্নামালাই
তামিলনাড়ু শহরের মধ্যে সবুজে মোড়ান একটি শহর হল তিরুভান্নামালাই। অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি বর্গ মনে করেন তিরুভান্নামালাই এবং বিশেষত অরুণাচল্লার মাটিতে একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তি বিদ্যামান। মনকে শান্ত করার ক্ষমতার কারণে পবিত্র অরুণাচল পর্বতকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নীরব স্থান। তিরুবনন্তমালাই তার অরুনাচলেশ্বর মন্দির ও শ্রী রামনা আশ্রমের কাছে তীর্থযাত্রী ও আধ্যাত্মিক দুজনকে আকর্ষণ করে।
১০। পিচাভারম
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনগুলির মধ্যে একটি, পিচাভারম বন। তামিলনাড়ুর চিদাম্বরম শহর থেকে প্রায় 50 মিনিট দূরে অবস্থিত। ভেলার মোহনা এবং কোলেরুন মোহনার মধ্যে অবস্থিত, পিচাভারম ম্যানগ্রোভ বনটি কুড্ডালোর জেলায় অবস্থিত। এই ম্যানগ্রোভ জঙ্গলটি ১১০০ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত। বিভিন্ন আকারের ৫০টিরও বেশি দ্বীপ এবং প্রায় ৪,৪০০টি বড় ও ছোট খাল রয়েছে।
১১। কোডাইকানাল
ঘন জঙ্গলময় পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার কোলে অবস্থিত, কোডাইকানাল একটি অনন্য পুরানো-জগতের আকর্ষণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উপরে অবস্থিত, এই হিল স্টেশনটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিস্ময়কর জলপ্রপাত সহ তামিলনাড়ুতে দেখার জন্য একটি আদর্শ জায়গা। হাঁটা, ট্রেকিং, ঘোড়ায় চড়া এবং নৌকায় চড়ার মত মজার ক্রিয়াকলাপ দর্শনার্থীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। অন্যতম খ্যাতিমান পর্যটন স্থান, কোডাইকানাল লেক, বিয়ার শোলা জলপ্রপাত, কোকার্স ওয়াক, ব্রায়ান্ট পার্ক, কুরিঞ্জি আন্দাভার মন্দির, ভাট্টকানাল জলপ্রপাত।
১২। ট্রাঙ্কুবার
১৬২০ সালে স্থাপিত ভারতের ডেনিশ উপনিবেশের প্রথম ট্রেডিং পোস্ট ট্র্যাঙ্কেবার ছোট শহরটি এখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা দূরে অবস্থিত। কুম্বাকোনাম করোমন্ডেল উপকূলে। এই শহরের প্রধান আকর্ষণগুলি হল একটি পুরানো গির্জা এবং ১৭ শতকের একটি দুর্গ। সমুদ্র সৈকতে, আপনি ১৮ শতকের একটি ডেনিশ ঔপনিবেশিক বাড়ি খুঁজে পেতে পারেন যা একসময় ড্যানিশ ভারতের গভর্নরের ছিল।
