অযোধ্যার দর্শনীয় পাহাড়গুলি ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে সকল তথ্য দেওয়া হল।

অযোধ্যা পাহাড়, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের একটা পর্যটন কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের রুক্ষ মালভূমি অঞ্চলের মধ্যে অযোধ্যা পাহাড় হল মানবদেহের ফুসফুসের মতো। প্রকৃতি মায়ের কোলে মানুষের খুশি হওয়ার সব উপকরণই আছে অযোধ্যা পাহাড়ে। আছে পাহাড়ের বুকে শীতল, স্বচ্ছ জলের জিল, মাটির সোঁদা গন্ধ, হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘাসের গালিচামোড়া শাল-সেগুনের বনবীথি!

অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ গাইড

 

অযোধ্যা পাহাড়

কথিত আছে রামচন্দ্র যখন সীতাকে নিয়ে বনবাসের উদ্দেশে রওনা হন তখন ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা চলে আসেন আজকের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। এখানেই রয়েছে সেই সীতাকুণ্ড, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার কারণে তৃষ্ণার্ত সীতা জলের জন্য ছটফট করছিলেন সেইসময় তীর দিয়ে মাটি খুঁড়ের স্ত্রীর জন্য জল নিয়ে আসেন রামচন্দ্র।

পুরাণের সঙগে পুরুলিয়ার অয়োধ্যা পাহাড়ের ভালরকম যোগসূত্র রয়েছে।জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে দলমা পাহাড়ের একটি অংশ ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ অযোধ্যা পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২০০০ফুট। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গটি হল গোরগাবুরু। এই অঞ্চলটি ছোটো নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নিচু ধাপ। বাঘমুন্ডি বা অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশের অঞ্চলটি হল একটি সম্প্রসারিত মালভূমি।শাল, শিরিষ, মহুয়া, সেগুনে ছাওয়া সবুজ অরণ্যভূমি আর ছোট-বড় ঝোরা নিয়ে মনোরম পরিবেশ।

পাহাড়ের ঢালে আদিবাসী গ্রাম, চাষের ক্ষেত। ট্রেকিংয়ের জন্যই অযোধ্যা পাহাড় বেশি পরিচিত। এর একটা এন্ট্রি পয়েন্ট পূর্ব দিকে সিরকাবাদ, অন্যটি পশ্চিমে বাঘমুন্ডি। দু’টি দিক দিয়েই ট্রেকিং করে পাহাড়ে ওঠা যায়। পাহাড়ে ট্রেকিং করা ছাড়াও ঘুরে নেওয়া যায় ছৌ শিল্পের পিঠস্থান চোড়িদা গ্রাম, চাণ্ডিল ড্যাম, পাখি পাহাড়, সীতা কুণ্ড, টুরগা ফলস প্রভৃতি।

কিভাবে যাবেনঃ
কলকাতা থেকে (হাওড়া স্টেশন) ট্রেনে পুরুলিয়া। পুরুলিয়া থেকে চারচাকা গাড়িতে আরষা হয়ে অযোধ্যা পাহাড়।

কোথায় থাকবেনঃ

১।অযোধ্যা পাহাড়ের যুব আবাসের বুকিং কলকাতার বিবিডি বাগের পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিস্ট ব্যুরোর কার্যালয় থেকে করা যায়।

২।পুরুলিয়া শহরের হোটেলে রাত্রিবাস করে সকালে অযোধ্যা পাহাড়ের চারচাকা গাড়ি ধরেও পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া যায়।

গন্তব্য মুরি, চেনা মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা হয়ে আছে , তাঁর মোটর বাইকটা নিয়ে দু দিন ঘুরে বেড়াবো। মুরি থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের বাঘমুন্ডি মাত্র ৫০ কিমি সুন্দর পিচ ঢালা রাস্তা। বাঘমুন্ডিতে শোনকুপি বানজারা ক্যাম্পটা দেখার ইচ্ছা ছিল।ঝালদা থেকে জনহীন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৩৫ কিমি রাস্তায় মাঝে মাঝে কয়েকটা ছোট গ্রামের আদুরে নরম রোদ পোহানো আর দূরের ঝাপসা পাহাড়ের হাতছানি দেখতে দেখতে বাঘমুন্ডি পৌঁছেগেলাম। গুগলে ভরসা করে শোনকুপি যেতেগিয়ে ভুল রাস্তায় ঢুকে বুঝলাম গুগলের এদিকটা ভালো জানা নেই।
স্থানীয় মানুষের কাছে খোঁজখবর করে শাল পিয়ালের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মাটির রাস্তা দিয়ে পৌঁছলাম পলাশে ঘেরা মাঠা পাহাড়ের পায়ের কাছে। সদা হাস্যময় সঞ্জীবদার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়েউঠেছে প্রায় ১৭ টা ডাবল বেড তাঁবু। ভাড়া ১৫০০ টাকা।
পরবর্তী গন্তব্য খৈরাবেরা। মোটামুটি ২৫ কিমি। ভাবলাম লোয়ার ও অপার ড্যাম হয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের মাথা দিয়ে গুগলের দেখানো রাস্তায় ঠিক পৌঁছে যাবো। রোদ মাখা পাহাড় আর উপত্যকার মধ্যে দিয়ে সুন্দর সরু রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে ইচ্ছা জাগে লাল মাটির সুঁড়ি পথ গুলোর শেষ দেখতে। মাঝে মাঝে জঙ্গল বা পাহাড়ের চোরা রাস্তা গুলোর সঙ্গে খেলতে খেলতে খেয়াল হলো জনমানুষ বা আমার গন্তব্যের কোনো চিহ্ন নেই।
ফোনের ম্যাপের নীল দাগ অনুযায়ী তো আমি ঠিকই যাচ্ছি। ডান দিকে চাঁদের পাহাড়ের মতো অবিকল দেখতে পাহাড়টা দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। ভাবতে থাকি হলোটা কি ? রাস্তায় বেশ গুঁড়ো বালি বা ধুলো জমেছে তাই সাবধানে বাইক চালাতে হচ্ছিলো , তার মানে এ রাস্তাদিয়ে গাড়ি খুব একটা চলে না। আরো একটু এগিয়ে এক কাঠুরে ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হলো , জানলাম এখানে আমার গন্তব্যে যাবার কোনো রাস্তা নেই।
একটা পায়ে চলা রাস্তা আছে বটে তবে তা দিয়ে বাইক যাবে না। বুঝলাম দ্বিতীয়বার গুগল বিভ্রাট। অলগারের রাস্তায় চলে এসেছি , এদিকে মনেহয় খুব একটা কেউ বেড়াতে আসেন না , অনেক দূরে দূরে কয়েকটা ঘর নিয়ে গ্রাম। সূর্যের আলো রং বদলানো শুরু করেছে , আরো কিছু পরে এখানে পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়বে ঝিঁঝিঁর ডাকের সুরে। একটু দূরে চাটুমঘুটু গ্রামে আলাপ হলো বুলেট ও গোবরাদের সঙ্গে। পথ চলার সময় মুঠো ফোনে ধরে রেখেছি এক মুঠো প্রকৃতি। গুগল থেকে জেনেছি অযোধ্যা পাহাড়ের এই অপূর্ব উত্তর অংশের নাম গাজাবুরু।

Leave a Comment