বান্দরবান জেলার রুমা সদর এবং বান্দরবান সদরে চিম্বুক পাহাড় অবস্থিত।চিম্বুক পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ ফুট উচ্চতায় এর অবস্থান। আর পাহাড় কাকে বলে সেটা দেখতে হলেও যেতে হবে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটনের প্রাণ বান্দরবান। বান্দরবান ভ্রমণ গাইড ও খরচ এর নিয়মিত ব্লগে এবার চিম্বুক ভ্রমণ গাইড নিয়ে পোস্ট করা হচ্ছে। চিম্বুককে বলা হতো বাংলার দার্জিলিং।
এই সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয় ভিউ পয়েন্টে। সম্প্রতি চিম্বুকের সেই হারানো যৌবন দারুণভাবে ফিরিয়ে এনেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। গত দু’বছর আগেও চিম্বুক চূড়ায় বিদ্যুৎ-টেলিফোনের সুউচ্চ টাওয়ার আর গুটিকয়েক গাছ ছাড়া আর কিছু চোখে পড়তো না। অথচ এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখা ছাড়াও ১৮০ ডিগ্রিতে পুরো পাহাড়গুলাকে দেখা যায় খুব ভালোভাবে। চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০০ ফুট।
চিম্বুক ভ্রমণ গাইড
বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ শত ফুট। চিম্বুক যাওয়ার রাস্তার দুই পাশের পাহাড়ী দৃশ্য খুবই মনোরম। চিম্বুকে যাওয়ার পথে সাঙ্গু নদী আপনার ভ্রমণকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে তুলেবে। পাহাড়ের মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়ার সময় মনে হবে গাড়িতে করে বুঝি চাঁদের বুকে পাড়ি জমাচ্ছেন।
২৫০০ ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে এ অপরূপ বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন চিম্বুকে। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন নিচে ভেসে যাচ্ছে মেঘের ভেলা। পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম এর বিভিন্ন উপজেলাগুলোকে দেখা যায় এখান থেকে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য ভাসছে চিম্বুক।
কিভাবে যাবেনঃ
বান্দরবান জেলার রুমা সদর এবং বান্দরবান সদরে চিম্বুক পাহাড় অবস্থিত। বান্দরবানে পৌছানোর বেশকিছু উপায় আছে। বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস চলাচল করে যেমনঃ সাউদিয়া, এস আলম, শ্যামলী, ইউনিক, ডলফিন ইত্যাদি। এসব বাসে ভাড়া প্রায় ৬৫০/- টাকা। ঢাকা থেকে বান্দরবানে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টায় পৌছাতে পারবেন। এছাড়া ব্যাক্তিগত অথবা ভাড়া গাড়িতেও আপনি বান্দরবানে যেতে পারেন। আপনি জীপ বা চাঁদের গাড়িতে চড়ে এখানে যেতে পারেন। এখানে চাঁন্দের গাড়ি/ঝীপ/মাইক্রোবাস/পাবলিক বাস যোগে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
বান্দরবানে থাকার জন্য হোটেল ও গেস্টহাউজগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১। হিলসাইড রিসোর্ট
ঠিকানাঃ চিম্বুক সড়ক, বান্দরবান
যোগাযোগঃ ০১৭৩০০৪৫০৮৩, ০২-৯৮৮৬৯৮৩
২। হোটেল গ্রিনহিল
ঠিকানাঃ প্রধান সড়ক, বান্দরবান-৪৬০০
যোগাযোগঃ +৮৮০১৮৫৬৬৯৯৯১০, +৮৮০১৮৫৬৬৯৯৯১১
৩। হোটেল পূরবী
ঠিকানাঃ ভিআইপি রোড, বান্দরবান সদর, বান্দরবান
যোগাযোগঃ ০১৮২৩-৩৪৬৩৮৩, ০৩৬১-৬২৫৩১
৪। হোটেল পাহাড়িকা
ঠিকানাঃ প্রধান সড়ক, বান্দরবান
যোগাযোগঃ ০৩৬১-৬২১৫৫
কি দেখবেনঃ
পাকা সড়ক বেয়ে একেবারে চূড়ায় যে কোনো বাহন ওঠে। উঠেই দক্ষিণে সিঁড়ি নেমে গেছে বিশাল এক চত্বরে। চত্বরটির নাম দেওয়া হয়েছে নব চত্বর। শরতে এই ভিউ পয়েন্ট থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিশাল মেঘের সমুদ্র। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপেও হিম বাতাস গা জুড়িয়ে দেয় এখানে। পাহাড়-আকাশ কত বিশাল তা এই চত্বরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়।সিঁড়ির পূর্বে রয়েছে দুই স্তরের দু’টি ছোট ভিউ পয়েন্ট। কেউ যদি নিচে নামতে না চায় তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবে সৌন্দর্য।
সিঁড়ি যেখানে শেষ সেখানে পশ্চিম পাশে রয়েছে তিনটি কংক্রিটের সুদৃশ্য চেয়ার-টেবিল। গাছের ছায়া পড়ে তাতে। বিকেলের শেষ রোদে বসে আড্ডা দেওয়া কিংবা একান্ত সময় উপভোগ করার জন্য পূর্ব পাশেও রয়েছে বসার ব্যবস্থা।
মূল সড়ক বেয়ে উপরে উঠলে সোজা সড়ক ও জনপদের রেস্টহাউস। উত্তর দিক দিয়ে সড়ক চলে গেছে থানচি। পূর্বকোণ বরাবর নীলগিরি। উত্তর দিকেও কয়েক স্তরে নির্মাণ করা হয়েছে মনোরম ভিউ পয়েন্ট। একসঙ্গে হাজার লোক এলেও গোটা চিম্বুক জায়গা দিতে পারবে।
চিম্বুকের আরও একটি বিশেষত্ব হলো ঠিক নিচে রাস্তার পাশে বারো মাস মেলে পাহাড়ের ফল। পেঁপে, কলা, আখ, ডাব, শরিফা, কমলা, বরই পাওয়া যায় সিজন অনুযায়ী। তবে কলা-পেঁপে মেলে সারাবছর। সব ফলই টাটকা। সেব ধরনের কেমিক্যাল মুক্ত। পর্যটকরা এসব ফল খেতে পছন্দ করেন সবসময়।চিম্বুকের নিচে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস মারমাদের। এই পাহাড় ঘিরে তাদের অনেকের জীবন-জীবিকা চলে। তারাই মূলত এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। কিছু বার্মিজ ও আদিবাসী পণ্যও মেলে এখানে।
কোথায় থাকবেনঃ
১।হোটেল হিল ভিউ:বান্দরবানে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন শহরের সবচেয়ে বড় আবাসিক হোটেল হিল ভিউ। শহরের কাছেই এ হোটেলের ভাড়া রুমপ্রতি ১০০০-৪০০০ টাকা। ফোন: ০৩৬১-৬৩০৪৫।
২।পর্যটন মোটেল:পর্যটন স্পট মেঘলার পাশেই পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত পর্যটন মোটেল। যার ভাড়া রুম প্রতি ৮৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২।
৩।হলি ডে ইন:চারিদিকে পাহাড় আর প্রাকৃতিক লেকের কাছাকাছি থাকতে চাইলে যেতে পারেন মেঘলার কাছেই অবস্থিত হলি ডে ইন এ। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: ০৩৬১-৬২৮৯৬
৪।হোটেল ফোর স্টার :এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯।
রেশনের একটি হোটেল আছে মেঘলাতে। যার ভাড়া রুম প্রতি ৭৫০ হইতে ২০০০টাকা পর্যন্ত। বুকিং ফোন:- 0361-62741এবং 0361-62742।
৫।হোটেল থ্রী স্টার :এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন:-থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন মানিক চৌধুরী-০১৫৫৩৪২১০৮৯।
৬।হোটেল প্লাজা বান্দরবান: এটি বাজারের কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৪০০ টাকা, ডাবল- ৮৫০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩২৫২। (ভাড়ার তারতম্য হতে পারে)
৭।ভেনাস রিসোর্ট:বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত ভেনাস রিসোর্ট। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় ৫টি আধুনিক কটেজ। এছাড়াও রয়েছে ভেনাস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, যেখানে দেশি-বিদেশি মজাদার সব রকমের খাবার পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে শৈল্পিক ছোঁয়া এবং একাধিক ছোটবড় ভাস্কর্যে সাজানো হয়েছে ভেনাস রিসোর্ট। ফোন- ০৩৬১-৬৩৪০০, ০১৫৫২৮০৮০৬০।
৮।সাকুরা হিল রিসোর্ট: চিম্বুক রোডের মিলনছড়ি এলাকার কাছাকাছি এ রিসোর্ট অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। প্রাকৃতিক ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে এ রিসোর্ট এর কোন বিকল্প নেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
৯।হিলসাইড রিসোর্ট: চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা এ রিসোর্ট বান্দরবানের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। যেখানে বসে পাহাড়, নদী আর মেঘের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সহজেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৪০০০ টাকার মধ্যেই। ফোন: ০১৫৫৬৫৩৯০২২, ০১৭৩০০৪৫০৮৩।
১০।হোটেল প্লাজা: এটি বান্দরবানের অন্যতম আধুনিক আবাসিক হোটেল। বান্দরবান শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এ হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬৩২৫২।
চিম্বুক পাহাড় কোথায় অবস্থিত?
কি খাবেন:
বান্দরবান শহরে খাবার হোটেলের মান তেমন ভালো নয়। তবে যে হোটেলে আপনি থাকবেন সেগুলোতে রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা আছে কিনা দেখে নিন। ‘ফিয়েস্তা’ এবং ‘তাজিংডং’ ভালো মানের হোটেল। বান্দরবানে খাবারের মানের চেয়ে দাম বেশি। রান্নায় মসলার ব্যবহার এবং হলুদের আধিক্য রয়েছে।