মালদ্বীপ!! আহা নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্ফটিক স্বচ্ছ বিস্তীর্ণ নীলাভ জলরাশি আর তার বুকে জেগে থাকা শ্বেত শুভ্র বালুকা আর সমুদ্রের টানে হেলে পড়া নারিকেল বিথিকাপুর্ণ এক একটি ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপ পুঞ্জ। এই নীল সাদার অপুর্ব কাব্যে কার না হারায় মন?
মালদ্বীপ অনেক বছর ধরেই একটি জনপ্রিয় হানিমুন ডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত। কারণ এই দেশের ট্যুরিজম এভাবেই ডেভেলপ করা হয়েছে।মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই, কিন্তু এবারের ট্যুরটি শুধু মন ভোলানো নৈসর্গ আর অভিনবত্ব দিয়েই আমাদের ভ্রমন পিয়াসি মনকে পরিতৃপ্ত করেনি সেইসাথে আরো এমন কিছু অনুভুতি আর উপলব্ধি দ্বারা আমাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার পুর্ণ করেছে যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা স্মরণ করব অত্যন্ত যত্ন , ভালবাসা আর মমতা নিয়ে।
মালদ্বীপ ভ্রমণ প্যাকেজ ২০২৪
মালদ্বীপ ভ্রমণ খরচ সমূহ নিচের দিকে আলোচনা একটা ভ্রমন গল্পের মাধ্যমে আপনাদের কাছে প্রাণবন্ত করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মালদ্বীপ ভ্রমণ খরচের
মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিঃ
প্রথমে যখন মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি তখন আগে যারা গিয়েছিলো এবং কয়েকটা ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলি। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে সবাই মোটামুটি ৪-৫ টা আইল্যান্ডের কথাই বলছে ঘুরেফিরে। নিজে থেকে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম দেশটাতে আইল্যান্ড রিসোর্টের সংখ্যা ১০০০ এর উপরে। ওখানকার বেশিরভাগ আইল্যান্ডই ব্যাক্তি মালিকানাধিন এক একটা আইল্যান্ড রিসোর্ট। এর মধ্যে ফাইভ স্টার বা তার চেয়েও হাই রেটেড রিসোর্ট আছে প্রায় ৫০০ এর মত।
মালদ্বীপ ভ্রমণ খরচ কত ও গাইড
মালদ্বীপ এয়ারপোর্টঃ
মালদ্বিপের ভেলেনা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটি একদম সাগরের তীর ঘেঁসে। কিন্তু আমরা যখন প্লেন থেকে নামলাম ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই নীল সাগরের রঙে সেদিন মন না মাতলেও সাগর থেকে ভেসে আসা মিষ্টি হাওয়া কিন্তু শরিরকে বেশ চনমনে করে তুলল আমাদের। এয়ারপোর্ট হুলহুমালেতে কিন্তু আমরা প্রথম রাত থাকব রাজধানী মালেতে। এয়ারপোর্ট থেকে পিক করবে তাই মালের হোটেলের প্রতিনিধী আমাদের নিতে হাজির এয়ারপোর্টএ।
অন এ্যারাইভাল ভিসা ও হোটেলঃ
অন এ্যারাইভাল ভিসা কয়েকমিনিটেই হয়ে গেল। হুলহুমালে থেকে মালে যেতে হয় সাগর পথে, দশ মিনিটের ফেরি রাইড। ওরাই আমাদের ফেরিতে তুলে দিল। তারপর মালেতে পৌছে একটা প্রাইভেট কারে করে আমাদের হোটেল সমারসেট ইন এ নিয়ে গেল তারা। ততক্ষনে রাত হয়ে গেছে । পথেই ভালই জানজট দেখলাম আমরা। কে বলবে সাগরের বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট একটি আইল্যান্ড এই মালে? সারা রাস্তা জুড়ে শুধুই বাইক আর স্কুটির ছড়াছড়ি। সংকীর্ণ রাজপথকে যেন আরো সংকীর্ণ করে রেখেছে তারা।
হোটেলের প্রথম দিনঃ
যাই হোক, গাড়ি থেকে নামতেই সুদর্শন এক যুবক এগিয়ে এল, হঠাত কানে ভেসে এল খুব পরিচিত একটি ভাষা, “ আপনারা আসুন, ব্যাগ আমরা পরে নিয়ে আসছি।” বিদেশ বিভুই এ বাংলা কোথায় থেকে আসল? এদিক ওদিক চাইতেই বুঝলাম এই ভাষা সেই সুদর্শন এরই মুখ নিঃসৃত। মালদ্বীপের মাটিতে পা রাখতেই এই বাংলাদেশি ভাইটির সাথে সাক্ষাৎ হল আমাদের, আর সেই শুরু। এরপর যেখানেই গিয়েছি আমরা সেখানেই মালদ্বীপের নাগরিকের চাইতে বাংলাদেশীদের সাথেই বেশি দেখা হয়েছে আমাদের। সে গল্পে পরে আসছি।
সেই রাতেই দেশি খাবারের সন্ধানেঃ
হোটেলেই রাতে খাব কিনা এমন জিজ্ঞেস করতেই সেই বাংলাদেশি ভাইটি আমাদের পাশেই একটি বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট এর ঠিকানা দিল । রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাত দশটার দিকে আমরা বেড়িয়ে পরলাম দেশি খাবারের সন্ধানে। একটু এগোতেই দেখা মিলল ঢাকা ফুড নামক সেই রেস্টুরেন্ট এর। সেখানে যেয়ে মনে হল ঠিক যেন দেশের কোন রেস্টুরেন্ট এ চলে এসেছি আমরা। কাস্টমার এবং মালিক সবাই প্রবাসী বাংলাদেশী। একমাত্র আমরাই ট্যুরিস্ট ওখানে। খাবারের প্রাইসও অনেক রিজনেবল। রুই মাছ, চিকেন আর নানা রকম ভর্তা আর সব্জী দিয়ে উদরপুর্তি করে বের হতে হতে বেশ রাতই হয়ে গেল। ফিরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমরা।
পরদিন গাইড প্ল্যানঃ
পরদিন ঘুম থেকে উঠে হোটেলেই কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সেরে সবার আগে গেলাম ফেরির টিকেট কাটতে। ভাবলাম পরে যদি টিকেট না পাই। তার মধ্যে আবার পরেরদিন শুক্রবার, সকল ফেরি বন্ধ। ছোট্ট শহর মালে, ফেরি ঘাট আমাদের হোটেল থেকে হাঁটা পথ তাই পদব্রজেই বেরিয়ে পরলাম আমরা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স।
সাগর বিচ ও ব্রীজঃ
আর সেই প্রথম দিনের আলোয় নীল সাগরের সাথে চাক্ষুস সাক্ষাৎ হল আমাদের। তবে শহুরে ছোঁয়ায় সাগরের নীল যেন অনেকটাই উধাও। টিকেট কেটে পাশেই একটা ছোট্ট চিল্ড্রেন পার্কে মেয়েকে নিয়ে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে ২৫ রুফিয়া তে ( বাংলাদেশি টাকায় ১৪০ টাকার মত ) চলে গেলাম আর্টিফিসিয়াল বিচ এ। এখান থেকেই মালে এবং হুলহুমালের মাঝে সংযোগকারী সমুদ্রের উপর দিয়ে নির্মানাধীন ব্রীজটির খুব কাছে যাওয়া যায়।
ইসলামিক সেন্টার ভিসিটঃ
সাগর বিচ ও ব্রীজে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে, এবার আর একটি ট্যাক্সি নিয়ে( ২৫ রুফিয়াতেই ) চলে গেলাম ইসলামিক সেন্টার এ। আমাদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এটি নির্মান করে দিয়েছিলেন বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরুপ। বেশ সুন্দর এই জায়গাটি। এখানে গেলে প্রচুর কবুতর আপনি দেখতে পাবেন। পরে শুনলাম এই কবুতর অর্থাৎ কবুতরদের পুর্বপুরুষদেরও নাকি এরশাদই উপহার দিয়েছিলেন। এখন তাদের বংশধররা প্রতিপত্তি চালিয়ে যাচ্ছে। এখানেও বেশ কিছু সময় কাটিয়ে এক দোকানে ঢুকে দুই একটা স্যুভেনিয়র কিনে ( সেখানেও এক বাংলাদেশি ভাই এর সাথে দেখা ) ফিরে এলাম হোটেলে।
সাগর ভ্রমন শুরুঃ
আবার সেই পুর্বের হোটেলে লাঞ্চ করে চেক আউট করে হোটেলের ট্রান্সপোর্ট নিয়ে চলে এলাম ফেরি ঘাটে।তিনটায় ফেরি ছাড়ার কথা এবং ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক তিনটা তখনই আমাদের নিয়ে নীল সাগরের বুকে গা ভাসাল আমাদের তরি আই মিন ফেরি। গোটা ফেরিতে যাত্রী খুব বেশি নেই। কয়েকজন লোকাল লোক আর বিদেশী পর্যটক। যা বুঝলাম টিকেট আগে না কাটলেও চলত আমাদের। এবার যথার্থই সাগর ভ্রমন শুরু হল আমাদের। নীল সাগরের বুক চিরে চলছে আমাদের ফেরি। চমৎকার একটি রাইড
গুলহি ও মাফুশী আইল্যান্ড ভ্রমণঃ
দেড় ঘন্টা পর ফেরি প্রথম পৌছল গুলহি আইল্যান্ড এ। ছোট্ট ছবির মত সুন্দর একটি আইল্যান্ড এই গুলহি। কিন্তু শুক্রবারে কোন ফেরি নেই বলে আমরা ফেরার পথে এখানে আসতে পারব না। এই আইল্যান্ড একটি গ্রেট মিস আমাদের জন্য। সেখানে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে যাত্রী ওঠানামা করে যাত্রা শুরু করে এর পর আধাঘন্টা পরে মাফুশী আইল্যান্ড। এখানে আমরা ফেরার পথে নামব। এখান থেকে যাত্রী নামানোর পর যখন আমরা গুরাইধোর পথে যাত্রা করলাম তখন পুরো ফেরিতে স্টাফ ছাড়া আমরা তিনজন আর একজন সাদা চামরার ট্যুরিস্ট মোট চার জন। বুক ছমছম আমার, এ কোন নির্জন দ্বীপে যাচ্ছি আমরা?? এ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে কি একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেললাম নাকি?? অথচ মনে মনে এতদিন এমন এক নির্জন আইল্যান্ডেই তো যেতে চাইছিলাম আমরা যেখানে থাকবে না কোন শহুরে কোলাহল, থাকবে না কোন জীবন যুদ্ধের তাগিদ।
মালদ্বীপ ভ্রমণের খরচঃ মালদ্বীপে সব কিছুই অনেক এক্সপেন্সিভ। কাজেই প্লেন ফেয়ার সহ শুধুমাত্র মালদ্বীপে যাওয়া, থাকা, খাওয়া, ঘুরাঘুরিতে আমাদের মোট খরচ হয়েছে ১২০০০০+ ৫০,০০০=১,৭০,০০০ টাকা(তিনজন)।
মালদ্বীপ ভ্রমণ ভিসা চালু আছে কী??
জি চালু আছে।