তিন্দু , বান্দরবান ভ্রমণ গাইড ও খরচ ভ্রমণ করার সকল তথ্য।

তিন্দু বান্দারবানের থানচি উপজেলার ছোট্ট একটা ইউনিয়ন। জায়গা টা এখন ও লোক চক্ষুর প্রায় আড়ালেই রয়ে গেছে। আমি কখন ও কল্পনা করি নাই।আমাদের দেশেও এমন স্বর্গ থাকতে পারে। বান্দারবানে অনেকেই গেছেন। বগা লেক তাদের সবাইকেই মুগ্ধ করেছে। এখন এই ছোট্ট ভূ-স্বর্গ টাকে দেখে আসুন।

বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলা সদরের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক আকর্ষণের কারণে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী পর্যটকদের কাছে তিন্দু অঞ্চলটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবেই বেশ পরিচিত। আকাশ-কুয়াশা-মেঘ-নদী-পাথর-পাহাড়-ঝরনা-বন-নীল সবুজ পানি আর রহস্য-রোমাঞ্চ-ভয়—সব যদি একবারে পেতে চান, তাহলে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন তিন্দু। সকালে ঘরের ভেতরে ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে যখন দরজা খুঁজে বের করতে হয় তখন নিজেকে বারবার ধন্যবাদ দিতে হয় এই দেশে জন্মানোর জন্য।

তিন্দু , বান্দরবান ভ্রমণ গাইড

তিন্দুর সৌন্দর্যঃ

তিন্দুর অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা আসলে লিখে প্রকাশ করার মত না। আকাশকুয়াশামেঘনদীপাথরপাহাড়ঝর্ণাবননীল-সবুজ পানি, পাহাড়িদের জীবন আর রহস্য-রোমাঞ্চ-ভয় সবকিছুর এক অসাধারণ মেলবন্ধন এই তিন্দু। মেঘ-কুয়াশার দেশ তিন্দুর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এখানে বর্ষাকালে নৌকায় চড়ে মেঘের ওপরে যাওয়া যায়। সাদাটে মেঘের ভিতর দিয়ে কিছুক্ষণ চললেই দেখবেন আপনার মাথা ভিজে গেছে।

মেঘের ভিতর নৌকা নিয়ে ভেসে চলার অনুভূতি স্বর্গীয়মেঘের এই সিক্ততা আপনার শরীর ও মন দুটোই ভিজিয়ে দেবে। সকালে ঘরের ভেতরে ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে যখন দরজা খুঁজে বের করতে হয় তখন নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হবে আপনার এই দেশে জন্মানোর জন্য।

এখানে শক্ত কঠিন পাথরগুলো বুকে নিয়ে বয়ে চলে স্বচ্ছ পানির ঢল। নুড়ি পাথরে হাঁটতে হাঁটতে ইচ্ছে করে টুপ দিয়ে ডুব দিয়ে শরীর ভিজিয়ে নেই কিছুক্ষণ এই টলটলে পানিতে। তিন্দুর দুই পাশ দিয়ে চলে গেছে দুটো ঝিরিপথসারাদিন সেখান থেকে কলকল করে ছুটে আসছে পাহাড়গলা স্বচ্ছ পানি। পানি আর পাথর মিলে এখানে যে নকশিকাঁথা তৈরি করেছে তার সৌন্দর্য আপনাকে সম্মোহিত করে রাখবে। তিন্দু পাড়ের পাথুরে সৈকত এখানে যোগ করেছে নতুন একটা মাত্রা।

তিন্দুকে ফেলে আরো ওপরের দিকে যখন এগোতে থাকবেন তখন মনে হবে মিনিটে মিনিটে বদলে যাচ্ছে পানির নিচের পাথুরে জগতটা। ছোট ছোট পাথর যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতে থাকল। জায়গাটির নাম বড় পাথর। তিন্দুর এই বড় পাথর আর বাঘিসং এর সৌন্দর্য আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। এখানে শুধু পাথর আর পাথর। নানা আকৃতির পাথরের ফাঁক গলে এগিয়ে চলে নৌকা। এখানে দুই পাশে পাহাড় উঁচু হয়ে যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো গাছগুলো দেখে বিমুগ্ধ হবেন।

আর পায়ের নিচে পাথুরে সাদা বালি চিক চিক করছে। এখানে পাথর আর পানি মিলে ভরদুপুরে তৈরি করে রংধনু। উত্তরের হাওয়ায় ভাসতে থাকা সেই রংধনু লুকোচুরি খেলে নদীর পাড়জুড়ে ঝুলতে থাকা গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে। এই মেঘের রাজ্যে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপার সৌন্দর্য দেখতে হয় ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে। এ এক অন্য সৌন্দর্যের ভুবন। প্রকৃতি যেন এখানে সব সৌন্দর্য উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা – বান্দারবান যাওয়ার ইউনিক, এস আলম, ডলফিন এর বাস আছে ।রাত ১১:৩০ টায় কলাবাগান থেকে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। আমি ইউনিক প্রেফার করব। নতুন বাস। তাদের সার্ভিস ও ভালো।

বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি নিয়ে সোজা থানচির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। এক্ষেত্রে গ্রুপে গেলে খরচ কম হবে। চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে তিন থেকে চার হাজার টাকা। এছাড়া লোকাল চান্দের গাড়ি আছেতাতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা।

থানচি বাজারে পৌঁছে সবার আগে যে কাজটি করবেন তা হচ্ছে বিজিবিকে আপনার পরিচয় দিয়ে তাদের নিকট থেকে অনুমতি নেয়া। বাজার থেকে আপনাকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন তিন্দু। নৌকা ভাড়া পড়বে দিনপ্রতি আটশ থেকে নয়শ টাকা।

কোথায় থাকবেন:

তিন্দুতে রাতে থাকতে পারেন এখানকার ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বারের বাসায়। আর যদি  তাঁবু নিতে পারেন তবে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন অনায়াসে। এছাড়া মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মারমাদের প্রতিটি বাড়িতেই খুব অল্প টাকায় থাকা-খাওয়ার সুবিধা রয়েছে।

Leave a Comment