সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে যে কয়টি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালী।সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা,দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু,পূর্বে ভারতের মিজোরাম,পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে।রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায়।খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার।আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার।বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার ।
সাজেক ভ্রমণের বিস্তারিত
সাজেক নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা, মেঘে আচ্ছন্ন এক মেঘের রাজ্য। যেখানে দেখা মিলে সাদা তুলার ন্যায় মেঘের এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ের চূড়া জয় করার নৈসর্গিক দৃশ্য।
সাজেক ট্যুর প্লান
সাজেক ট্যুরঃ ( দুই দিন একরাত)
মোট সদস্যঃ ১৮ জন।
মোট খরচঃ ৩২০০ টাকা ( জনপ্রতি)
১ম রাত ও ১ম দিনঃ
১৪ নভেম্বর, ২০১৯, বৃহস্পতিবার। রাত ১০.৩০ এর বাসে আমরা সায়েদাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করি। শান্তি পরিবহনের বাসে। ভাড়া ৫৮০ টাকা। সাজেক যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি নামলেও হয় আবার দীঘিনালা নামলেও হয়। সব বাস খাগড়াছড়ি শহরে যায় ভাড়া ৫২০ টাকা। আর দীঘিনালা যায় শুধু ‘শান্তি পরিবহন’ ভাড়া ৫৮০ টাকা। শান্তি পরিবহনে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। আমরা যে বাসে গিয়েছিলাম সেটার সীটের অবস্থা খুব বাজে ছিল। রাতে দুই একজন বাদে কেউ ঘুমাইতে পারে নাই। আর সীট পিছনে হলে তো কথাই নাই। তবে হ্যাঁ বাস খুব ভাল টানে। বাসের টিকিট অবশ্যই আগেই কেটে রাখা উচিত। এখন সিজন তাই কমপক্ষে ১৫ দিন আগে টিকেট কেটে রাখা উচিত যদি আমাদের মত বড় টিম হয়। আমাদের ভোর ৫ টায় নামিয়ে দিয়েছিল দীঘিনালায়। অন্যান্য বাস খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছায় প্রায় একই সময়ে। বাস শাপলা চত্বরে নামায়, যেখানে চান্দের গাড়ির কাউন্টার। আর ওটাই লাস্ট স্টপেজ। আর যদি বাস শাপলা চত্ত্বর না যায় তবে ওদের কাউন্টারের সামনে নামাবে, ওখান থেকে হেটে শাপলা চত্ত্বর যেতে হবে, মাত্র ৩/৪ মিনিট এর রাস্তা।
দীঘিনালা থেকে সাজেকের দুরত্ব কম। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৬৫ কিমি, দিঘিনালা থেকে ৪৪ আর বাঘাইছড়ি থেকে ৩২ কিমি। আমরা যখন বাস থেকে নামি তখন অন্ধকার। ফজরের আযান দিচ্ছে। নামাজ পরে দেখি হোটেল খুলতে শুরু করেছে। দীঘিনালাতেই শান্তি পরিবহনের টিকেট কাউন্টার আছে। আপনারা চাইলে রিটার্ন টিকেট কেটে ফেলতে পারেন। আমাদের শান্তি পরিবহনের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ হওয়ায় আমরা টিকেট যাওয়ায় দিন কাটার সিদ্ধান্ত নেই। সকালের খাবার খেয়ে শান্তি পরিবহনের পাশেই চান্দের গাড়ির কাউন্টার থেকেই চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করি। সকালের খাবারে ছিল খিচুড়ি ( ৫০ টাকা) / রুটি (১০ টাকা) ,ডিম (২০ টাকা) ,সবজি (২০ টাকা)। সব মিলিয়ে ১৮ জনে ১০০০ টাকা খরচ। দীঘিনালা থেকে চান্দের গাড়ির ভাড়া ৭১০০/= ( দুই দিন একরাতের প্যাকেজ) চান্দের গাড়ির ড্রাইভার, হেলপারের থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা ওদের নিজেদের। এই প্যাকেজে আছে সাজেকে একরাত খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা, রিচাং ঝর্না,ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং। এসব আগে থেকে বলে নিবেন ৷ চাঁদের গাড়িতে ১০ থেকে ১২ জন বসা যায়। আমরা দুইটা চান্দের গাড়ি নিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে পরেছিল ১৪৬০০ (৪০০ টাকা বকশিস। এর মাঝে ২০০০ টাকা এডভান্স আর বাকি টাকা ট্যুর শেষে। পানি, টয়লেট টিস্যু, সাবান শ্যম্পু ৪৫০ টাকার কিনে যাত্রা শুরু করলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে।
মাঝে ৩ জায়গায় বিজিবি চেকপোস্টে এন্ট্রি করতে হয়। যাওয়ার পথে বাঘাইহাট নামক জায়গায় যেয়ে সব গাড়ি/সিএনজি কে বাধ্যতামূলক ভাবে দাঁড়াতে হয়, সকাল ১০.০০ এর মধ্যে যত জিপ বা সিএনজি বাঘাইহাট পৌঁছাবে সেসব গাড়িগুলোকে নিরাপত্তা জনিত কারণে সামনে ও পিছনে প্রটেকশন দিয়ে পুলিশ বা আর্মি সাজেক পর্যন্ত পৌঁছায় দেয়। ঠিক ১২.১৫ তে সাজেকে।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুটো এস্কর্টে গাড়ি সাজেক ঢুকে।প্রথমটা সকাল ১০টায়।দ্বিতীয় টা বিকেল ৩টায়। সাজেকে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০/= ও গাড়ি রাখার ভাড়া ১০০/=
বাঘাইহাট বাজারে ৩৩০ টাকার নাস্তা করেছিলাম অপেক্ষা করতে গিয়ে। (এক ছড়ি কলা মাত্র ১৮০ টাকা নিয়েছিল)। ১২.৩০ আমরা সাজেকে পৌছাই। প্রবেশের জন্য আমাদের মোট ৫৬০ টাকা লেগেছে।
পূর্ব দিকের রিসোর্টগুলোতে সব থেকে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। আর রিসোর্ট থেকে বের হলে সাজেক সবার জন্য এক। সবগুলো রিসোর্টের রেন্ট একই। আগে ফোন করে রিসোর্ট বুক করলে এডভান্সড ২০০০ টাকা দিতে হয়।এসব রিসোর্টে বলতে গেলে তেমন কিছুই নেই। তাই প্রয়োজনীয় সবকিছু ঢাকা থেকে নিয়ে যেতে হবে। যেমন-ব্রাশ-পেস্ট, মিনিপ্যাক শ্যাম্পু, সাবান, টাওয়াল। সাজেকে কারেন্ট সাপ্লাই নেই। সবকিছু সোলার বিদ্যুৎ এ চলে। তাই দিনে হয়তো একবার এবং সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত একবার পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া হয়। তবে রুমে আর টয়লেটে দুটো লাইট সার্বক্ষণিক জ্বলবে। আমরা এবার যাওয়ার সময় দেখলাম সাজেকে কারেন্ট নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। কারেন্ট নিলে হয়ত সাজেকের সৌন্দর্যের মাঝে একটা কৃত্রিমতা চলে আসবে৷ যাই হোক, প্রতিটা রুমে এক্সট্রা বেডিং আর বালিশ দেয়া থাকে অনেকজনের গ্রুপ গেলে যেন থাকা যায় সেভাবে। রুম আর টয়লেট মোটামুটি পরিষ্কার । বারান্দায় চেয়ার থাকে। এক্সট্রা বেডিং বিছিয়ে আড্ডাও দেয়া যায়।সাধারণ রিসোর্ট এর ভাড়া ১৫০০-২০০০ এর মধ্যে(শুক্র,শনি ও ছুটির দিনগুলোতে ভাড়া ২৫০০-৩০০০)।বেস্ট ভিউ রিসোর্ট গুলো ৩০০০-৪৫০০ টাকা ভাড়া নেবে।আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাওয়া ভাল।বারটার মধ্যে রিসোর্ট চেকআউট করবার নিয়ম।পানি খাগড়াছড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া ভাল। দাম অনেক বেশি সাজেকে ।
আমরা ছিলাম হিমালয় হোটেলে। হোটেলটা ভালই৷ প্রতিরুমে ৪ জন করে। দুইটা বেড প্রতিরুমে। ৫ জন অনায়াসে থাকা যায়। আমাদের প্রতিরুম ২৫০০ টাকায় ৪ রুম মোট ১০০০০ টাকা। ( দুই হাজার টাকা এডভ্যান্স দিয়েছিলাম বুকিং এর জন্য) শুক্র শনি গেলে অবশ্যই হোটেল বুক দিয়ে যাবেন। হোটেলে চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম প্রথমেই। সাজেকে নিয়ম হচ্ছে আপনি অর্ডার দিবেন তারপর ওরা রান্না করবে। কিন্তু আমাদের অর্ডার দেয়া ছিল না। কিন্তু মনটানা হোটেলে গিয়ে দেখলাম তারা ব্যাবস্থা করা পারবে। আর দেরী না করে খেয়ে নিলাম।
খাবারের দোকানগুলো প্যাকেজ সিস্টেম যেমন —
১. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+দেশি মুরগী দাম ১৮০/=
২. ভাত+ডাল+আলুভর্তা+সবজি+ফার্মের মুরগী দাম ১৪০/=
৩.ভাত+ডাল+আলুভর্তা+ সবজি দাম ১২০/=
আমরা মনটানা হোটেলে ১২০ টাকার প্যাকেজ নিয়েছিলাম। ১৮ জন অল্প কিছু ডিসকাউন্ট দিয়ে ২২০০ টাকা রেখেছিল। এরপর হিমালয় হোটেলে আমরা ব্যাম্বো চিকেনের অর্ডার দিয়ে চলে গেলাম সাজেকের ঝর্না দেখতে। ঝর্নার নাম ঠিক বলতে পারলাম না। আমাদের চান্দের গাড়ির হেলপার নিয়ে গিয়েছিল আমাদের তারাও বলতে পারলো না নাম।
সাজেকের ঝর্নাঃ সাজেক থেকে গাড়িতে কিছুদূর যাওয়া যায়। গাড়ি যাওয়ার রাস্তা শেষে হাঁটতে হয়। মূলত পাহাড় থেকে তলদেশে নামতে হবে গাছগাছালি আর জঙ্গলের মাঝের ছোট সরু পথ দিয়ে। অনেকটা পথ হাটতে হয়। পথ পিচ্ছিল আর খাড়া। নামতে তেমন কষ্ট হয় না কিন্তু উঠতে অনেক কষ্ট হয়। অবশ্যই পানি, গ্লুকোজ, স্যালাইন নিয়ে যাবেন। আমাদের সামনেই এক আপু সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল। প্রায় ২ কিমি খাড়া পথ বেয়ে নামতে ননস্টপ ২০ মিনিটের মত নামতে হবে আর একই পথ আসতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মত। তবে ঝর্নাতে গিয়ে অনেক ভাল লাগলো। প্রায় ৭০-৮০ ফুট উপর থেকে ঝর্নার পানি পড়ছে। অনেক ঠান্ডা। পানিতে গোসল করে আসতে আসতে ৪ টা বেজে গেল। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম হ্যালিপ্যাডে। সূর্যাস্ত দেখতে।
হ্যালিপ্যাডঃ সূর্যদয়, সূর্যাস্ত আর চাঁদ ওঠা দেখা যায় । হ্যালিপ্যাডে ব্যাম্বু টি মানে বাঁশের চা পাওয়া যায়, মূলত তেঁতুল দিয়ে তৈরি চা সাইজ করা ছোট বাঁশে পরিবেশন করা হয় বলেই ওটাকে ব্যাম্বু টি বলে। ঝালমুড়ি আর ব্যাম্বু টি খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখলাম আর ফটোসেশান। নাস্তার মোট খরচ ৩৫০ টাকা।
২য় রাত ও ২য় দিনঃ
সন্ধ্যার পর বেশ কিছুক্ষণ বসে বসে আড্ডা দিলাম হ্যালিপ্যাডে। আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যা। উপভোগ করলাম সাজেক রাতের সৌন্দর্য। আকাশে প্রচুর তারা। দেখলাম চাদের আলোতে মেঘের সৌন্দর্য। মনে হয় একটা নদী এঁকেবেঁকে চলে গেছে। এই সৌন্দর্য শুধু অনুভব করা যায়। ছবিতে ধারণ করা যায় না। রাতে হোটেলে গিয়ে দেখি ব্যাম্বো চিকেন রেডি। খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে রাত ১০ টা। ১৮ জন ২৭০০ টাকা। একটু আড্ডা দিয়ে ঘুম৷ কাল অনেক সকালে উঠা লাগবে।
ভোর ৪.৩০ এ ঘুম ভেংগে গেল। সবার ফ্রেশ হতে হতে ৫ টার মত বেজে গেল। বাইরে তখনও অন্ধকার। আমাদের প্ল্যান কংলাক পাহাডে গিয়ে সূর্যোদয় দেখা। সবাই মিলে রওনা দিলাম কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। গাড়ি অর্ধেক রাস্তা এগিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের ড্রাইভারের ফোন অফ ছিল তাই আমাদের হেটেই যেতে হয়েছিল। পরে অবশ্য ড্রাইভার অনেক সরি বলেছিল।
কংলাক পাহাড়ঃ কংলাক পাহাড় সাজেকের সবথেকে উঁচু পাহাড়ের চূড়া। কংলাকে যাওয়ার জন্য যত আগে আগে রওনা হওয়া যায় ততই ভাল, তাতে পাহাড় ট্রেকিংয়ের কষ্ট কম হয়।কটেজের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে যতদূর পর্যন্ত গাড়ি যেতে পারে ততদূর পর্যন্ত যেয়ে তারপর হাঁটা পথ। হেঁটে ২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় কংলাকের চূড়ায়। পাহাড়ের চূড়া থেকে সবচেয়ে সুন্দর ভিঊ দেখা যায়। পাহাড়ে মেঘ দেখতে দেখতে চা খাওয়ার ফীলটা অসাধারণ। নাস্তা আর বাশ বাবদ খরচ ৫০০ টাকা।
৮ টার মাঝে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম। ১৮ জন খেতে খরচ পড়ল ১৩০০ টাকা। শেষ মুহুর্তে কারেন্ট দিতে বললাম আর চার্জ দিয়ে ১০ টার এস্কোর্টে চলে আসলাম খাগড়াছড়ি। এসেই রিটার্ন টিকেট কেতে ফেললাম। ১৮ জন মোট ৯৪০০ টাকা ( খাগড়াছড়ি টু ঢাকা ৫২০ টাকা)। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। ১০০ টাকার প্যাকেজ ( ভাত, ভর্তা, ডাল, ফার্মের মুরগী ১ পিছ) মোট ২২০০ টাকা।
রিচাং ঝরণাঃ গাড়ি থেকে নেমে ১.৫ কিলো হাঁটতে হয়। সাথে ২৩৪ টা সিড়ি। ঝর্নাটা সুন্দর। এখানে স্লাইড করা যায়। স্লাইড অনেক মজার কিন্তু একটু রিস্ক। রিসাং ঝর্নায় গোসল করে আসতে আসতে ৪ টা বেজে গেল। এরপর তারেং এ যাওয়ার পালা।
তারেংঃ মূলত সাজেকে যেটাকে হ্যালিপ্যাড বলে সেটাই এখানে তারেং নামে পরিচিত। হেলিকপ্টার নামতে পারে আর মূলত পাহাড়ের অনেক উঁচুতে হওয়ায় দূরের সব পাহাড়ের চূড়া আর ছোট নদীটা দেখা যায়।তারেং এ অল্প কিছুক্ষন থেকে সোজা চলে গেলাম আলুটিলা গুহায়।
আলুটিলা গুহাঃ প্রতিজন ২০ টাকা আর গাড়ির জন্য ৫০ টাকা টিকিট লাগে আলুটিলা এরিয়াতে ঢুকতে। খাগড়াছড়ি শহরটা একনজরে দেখা যায় এই আলুটিলা এরিয়া থেকে। আগে মশাল নিয়ে গুহায় যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এখন সেটা নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ১৮ জনে ৩৬০ টাকার টিকেট কেটে বাইরে গাড়ি রেখে ভিতরে গেলাম। খাগড়াছড়ির সবথেকে ভাল লেগেছে আমার আলুটিলা গুহাটাই। ১০০ মিটার লম্বা গুহাটার ভিতরে ভীষণ ঠান্ডা। পায়ের নীচে হালকা পানির ফ্লো। আর ভীষণ অন্ধকার। গুহার সব যায়গায় সমান চওড়া না। সবমিলিয়ে দারুণ একটা এডভেঞ্চার। ঝুলন্ত ব্রিজ যাওয়ার সময় পাইনি। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আর চান্দের গাড়ি আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেল খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে। এবার ফেরার পালা। রাতে নান, ডিম, ডাল দিয়ে ডিনার করে অপেক্ষা করতে লাগলাম বাসের জন্য৷ রাতে খাবার খরচ ১১৪০ টাকা। বাস ৯ টায় ছাড়ল ঢাকার উদ্দেশ্যে। আর আমাদের সাজের ট্যুরের সফল পরিসমাপ্তি ঘটল।
টিপসঃ
১।খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার সময় পাহাড়ের বেস্ট ভিউ পাওয়া যায় চান্দের গাড়ির উপরে/ছাদে বসে। না বসলে আসলেই অনেক কিছু মিস হবে। (বাঘাইছড়ির পর থেকে আর জীপের উপরে বসা যাবে না কারণ সাথে আর্মির গাড়িও থাকবে)
২। কংলাক পাহাড়ে উঠার সময় ছোট বাঁশ সাথে নিতে হবে তাতে পাহাড় ট্রেকিং এ সুবিধা হয় ইভেন ওটা ঝরণায় যাওয়ার সময়ও কাজে লাগবে। কংলাকে উঠার পথেই বাঁশ কিনতে পাওয়া যায়।
৩।ঝরণায় যাওয়ার সময় গাইড লাগে না, একটু খোঁজ খবর নিয়ে নিজেরাই যাওয়া যায়।
৪।ঝরণায় যাওয়ার সময় ট্রেকিং করা শক্ত গ্রীপের জুতা পড়ে যাওয়া ভাল আর সাথে বাধ্যতামূলক ভাবে পানির বোতল রাখতে হবে সবাইকে। সাথে পলিথিনও।
৫।সাজেক থেকে ব্যাক করে রিচাং ঝর্ণা সহ আলুটিলা গুহা, তারেং, ঝুলন্ত ব্রিজ এগুলোই যাইতে চাইলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি বের হতে হবে, অন্যথায় সবকিছু দেখে শেষ করা যাবে না।
৬।পাহাড়ি মুরগীর ব্যাম্বু চিকেন আর ব্যাম্বু টি অবশ্যই ট্রাই করা উচিত৷
৭।পথে আদিবাসীদের বাজারে ডাব,পেপে,আখ অবশ্যই ট্রাই করা উচিত। এখানকার আখ প্রচুর মিস্টি আর ডাবে প্রচুর পানি হয়।পাহাড়ি জুম চাষের ফল খুব টেস্ট।
৮।রবি আর এয়ারটেল নেটওয়ার্ক থাকে।