মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড ও খরচ -Monpura dip in Bangladesh

হরিণ খোঁজার এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাথে অল্প সময়ে- স্বল্প বাজেটে ঘুরে আসুন বঙ্গোপসাগরের কোলে উত্তর ও পশ্চিমে মেঘনার শাখা নদী আর দক্ষিণ এবং পূর্বে সৈকত সমুদ্র বালুচর বিশিষ্ট বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন- নিঝুম দ্বীপে।

১২ থেকে ১৩ ঘন্টার এই দীর্ঘ যাত্রায় লঞ্চের ডেক ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা। নন-এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকা। ডিলাক্স ডাবলের জন্য খরচ করতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, যেখানে ভিআইপি কেবিনে পড়বে ৫ হাজার টাকা।

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড

মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ গাইড

১৯৫০ সালে জেগে ওঠা ১৪ হাজার একরের চারিদিকে পানিবেষ্টিত ২৭ কিঃমিঃ এর এই দ্বীপে রয়েছে প্রায় ২২০০০ হরিণ, প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি, মৌসুমের ইলিশ আর সারি সারি খেজুরের বাগান। এছাড়া শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এই নিঝুম দ্বীপ।।সবুজের সমাহার ও হরিণের অভয়ারণ্য জন্য ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে “জাতীয় উদ্যান” হিসেবে ঘোষণা করেন।

স্পষ্ট সমূহঃ
১) চৌধুরী খাল
২) চোয়াখালী
৩) নামারবাজার বীচ
৪) কবিরাজের চর
৫) ফরেস্ট অফিস
৬) কমলার চর
৭) ডুবার চর
৮) দমার চর

যাত্রাপথ:
ঢাকা(সদরঘাট)- হাতিয়া(তমরুদ্দি ফেরিঘাট)-মোক্তার বাজার- বন্দর টিলা বাজার- নামার বাজার- নিঝুম দ্বীপ।

যেকোন বৃহস্পতিবার ভার্সিটি/অফিস থেকে হাফ বেলা কাটিয়ে বিকেল ৫ টার মধ্যে সদরঘাট চলে আসুন। ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়- ফারহান ৩/৪ (সন্ধা ৫:৩০) ও তাসরিফ ১/২ (সন্ধ্যা ৬:০০)। সিঙ্গেল কেবিন ৯০০/- ডাবল কেবিন ১৮০০/- আর ডেকে ৩০০ টাকা ভাড়া। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার যাত্রায় সাথে কিছু হালকা শুকনা খাবার আর পানি নিতে ভুলবেন না। রাতের খাবার কিন্তু লঞ্চেই করতে হবে। লঞ্চে উঠার পর পরই একজন এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে যাবে। সবাই মিলে আড্ডা, কার্ড খেলা আর লঞ্চের পাল্লা দিয়ে চলা দেখতে দেখতে রাতটা কাটিয়ে দিন। বন্ধু মহলে কেউ গিটার নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।

পরেরদিন সকাল ৬:৩০- ৭:০০টার মধ্যে আপনারা হাতিয়ার তমরুদ্দিন ঘাটে পৌঁছে যাবেন। ওখানে নাস্তা সেরে আপনারা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাবেন মুক্তারিয়া ঘাটে। ৩৭ কিঃমিঃ যেতে ঘন্টা ১:৩০-২:০০ সময় লাগবে। তমরুদ্দিন ঘাঁটেই আপনারা মোটরসাইকেল পাবেন (জনপ্রতি ২০০ টাকা)। মুক্তারিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে (জনপ্রতি ৬০৳, সময়, ৫ মিনিট) অথবা নৌকায় (ভাড়া ২০৳ , সময় ১৫-২০ মিনিট) নিঝুমদ্বীপ। ঘাটে নেমে আপনাকে যেতে হবে নামার বাজার, ১২ কিঃ মিঃ যেতে মোটর সাইকেলে ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৫০৳ টাকা করে (সময় ৩০ মিনিট)।

বেলা ১০টা নাগাদ বাইক থেকে নামার বাজার নেমে আমরা শাহিন হোটেলে উঠেছিলাম (৪ জনের একটি মোটামুটি রুমের ভাড়া ১০০০৳ টাকা)। তবে “নিঝুম রিসোর্ট” বা “সোহেল রিসোর্ট” এ থাকার পরামর্শ দিব। কারন অন্য হোটেল থেকে এই ২ হোটেলের out-look/invironment ভালো মনে হয়েছে। ভাড়া মোটামুটি একই ।
রুমে ফ্রেশ হয়ে চট করে নামার বাজার “ভাই ভাই” হোটেলের পাশে একটি খাবার হোটেল রয়েছে, সেখানে নাশতা সেরে টলার ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন। ঐ হোটেলে খাবারের মান ভালো এবং দাম মোটামুটি সস্তা। সেখানে আপনি অবশ্যই কাকড়া খাবেন, কারন ওরা কাকড়ার একটি অসাধারণ রান্না করে থাকে। অবশ্যই বেশি বেশি করে মহিষের খাঁটি দুধের দই খাবেন। ওখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। দুপুরে বা রাতের জন্য অর্ডার দিলে ওরা রান্না করে রাখবে।।
ইতিমধ্যেই আপনার কাছে টলারের মাঝিরা চলে আসবে। না আসলেও, বাজারে বললেই মাঝির সন্ধান পেয়ে যাবেন। টলারে চৌধুরী খাল, কবিরাজের চর প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের জন্য ৮০০-১০০০৳ টাকা নিবে। চরে গোছল করতে চাইলে সাথে জামাকাপড় নিতে পারেন।

১২:৩০/১:০০টার মধ্যে আবার নামার বাজার হোটেলে চলে আসুন। গোছল সেরে বাজারে লাঞ্চ করে বেড়িয়ে পড়ুন বাইক যোগে চোয়াখালির দিকে। আনুসঙ্গিক দ্বীপের সব স্থান ঘুরে ৫ টার মধ্যেই নামার বাজার এসে সোজা বীচে চলে যান। আর কোলাহল মুক্ত এই নিরব- নিস্তব্ধতার মাঝে উপভোগ করুন- “সূর্যাস্ত”।

সন্ধ্যায় বাজারের গরম গরম শীতের পিঠা আর খেজুর গুড়ের জিলাপির পরিবেশন আপনার জিভে জল এনে দিবে। রাতে হোটেলে/বীচে BBQ করতে চাইলে কিন্তু আপনাকে এখনই বাজার করতে হবে। ভাগ্য ভাল থাকলে সামুদ্রিক কোরাল মাছ পেতে পারেন (৪৫০-৫০০৳/কেজি)।।
পরের দিন (শনিবার) ভোরে উঠে বীচে সূর্যোদয় দেখতে চলে যান। নিঝুম দ্বীপের বিচে আপনি অনেক লাল কাকড়া দেখতে পাবেন। তারপর টলারে চলে যান “মনপুরা”। নামার বাজার থেকে এই মনপুরা যাওয়ার ১:৩০-২:০০ টা ঘণ্টার টলার জার্নি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। সমুদ্র ঘেষে মোহনার উপর দিয়ে ছোট-বড় ঢেউ কাটিয়ে টলারের এই ভ্রমণ আপনাকে “সেন্টমার্টিন” এর ফিল এনে দিবে।।
মনপুরা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া লঞ্চ বেলা ২:০০টা নাগাদ ঘাটে ভিড়বে। এর মধ্যে ইচ্ছেমত দ্বীপটি ঘুরে নিন। সময়মতো লঞ্চ আসলে উঠে পড়ুন। পরেরদিন ভোর ৪/৪:৩০ টার মধ্যে সদরঘাট পৌঁছে যাবেন। আলোকিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি চাইলে লঞ্চে থেকে ফযর নামাজের পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন।

 

বিঃদ্রঃ ময়লা আবর্জনা ফেলে কেও দ্বীপের পরিবেশ নোংরা করবেন না

Leave a Comment