ভ্রমনপাগল,ট্রেকিং ট্যুর দিয়ে অভ্যস্ত,প্রকৃতিতে হারাতে ভালোলাগে এমন মানুষ এখনো কেওক্রাডং যাননি তাদের অবশ্যই কেওক্রাডং যাওয়া উচিৎ।মাথা নষ্ট করা প্রাকৃতিক স্বর্গরাজ্য।কেওক্রাডং যেতে হলে দেশের যেকোনো যায়গা থেকে বান্দরবান, বান্দরবান থেকে রুমা বাজার হয়ে বগালেক তারপর কেওক্রাডং ট্রেকিং। এখন বগালেক পর্যন্ত গাড়ি পাওয়া যায়, তারপর বগা তে একরাত থেকে পরেরদিন খুব সকালে গাইড নিয়ে কেওক্রাডং ট্রেকিং শুরু করতে হয়। পৌছুতে সাড়ে তিনঘন্টা লাগবে। মোটামুটি ভাল কষ্টের এই পাহাড় ট্রেকিং এর পর কেওক্রাডং এর চূড়া বা হেলিপ্যাড থেকে যে ভিউ টা পাবেন : এক কথায় অসাধারণ।
কিওক্রাডং পাহাড়ের উচ্চতা
কেওক্রাডং বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। অর্থাৎ বান্দরবানেরও দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। একসময় যখন একে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মনে করা হতো তখন এর উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছিল ১,২৩০ মিটার। জিপিএস সমীক্ষায় উচ্চতা পাওয়া গেছে ৯৭৪ মিটার (৩,১৯৬ ফুট)

কখন যাবেন
বেশি গরমে না যাওয়াই ভালো।শীতের আগে পরে অথবা বর্ষায় যাওয়া ভালো।প্রকৃতি একেক ঋতুতে একেক রকম।শীতে সব ঝিরিপথ শুকনা ছিলো।বর্ষায় সেগুলো গর্জন করে।চিংড়ি ঝর্নায় ও পানি কম ছিলো।বর্ষায় ট্রেকিং রুট বাড়বে সুতরাং নিজের কন্ডিশন বুঝে যাবেন।তবে ঝিরিপথ,ঝর্নার জন্য বর্ষায় আবার যাবো।বান্দরবান থেকে রুমা রাস্তার দু পাশের রুপ দেখার জন্য হলেও আবার যাবো

1. দেশের যে কোন জায়গা থেকে বান্দরবান শহর।বাদরবান শহর থেকে ১৫ টাকা অটো ভারা দিয়ে রুমা বাজার যাওয়ার বাসস্ট্যান্ড। প্রথম বাস সকাল ৮ টায়। প্রথম বাসটাই ধরার চেষ্টা করবেন।বাসস্টান্ড থেকে রুমা বাজার। ভারা ১১০ টাকা। সময় লাগবে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা।
2. রুমা বাজার নেমে গাইডের সাথে আর্মি ক্যাম্পে সব পেপার ওয়ার্কস শেষ করবেন।এরপর ল্যান্ডক্রুজার জিপ/চান্দের গাড়ি নিয়ে বগালেক যেতে হবে। ল্যান্ড ক্রুজারে ধারন ক্ষমতা ৭/৮ জন। ভারা ১৮০০ টাকা। চান্দের গাড়ি ২০০০ টাকা ১৪/১৫ জনের মত যেতে পারবেন।
3. বগালেকে আর্মি ক্যাম্পে পেপার জমা দিয়ে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। স্যালাইন, শুকনা খাবার, পানি নিয়ে নিবেন।প্রায় ৮/৯ কিমি হাইক, বগালেক থেকে কেওক্রাডং এর এলিভেশন ডিফারেন্স প্রায় ২০০০ ফিট।টিমের ক্যাপাবিলিটির উপর ডিপেন্ড করে ৪ ঘন্টার আশেপাশে সময় লাগবে কিওক্রাডাং পৌছাতে।
4. কিওক্রাডাং এর পাদদেশে দার্জিলিং পাড়ায় পোছাতে প্রায় বিকাল হয় সেখানে আইরিন দিদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। অসাধারন রান্না আর আতিথেয়তা পাবেন। কি খাবেন তা গাইডকে আগে থেকে বলে রাখবেন, গাইড দিদির সাথে কথা বলে সব ঠিক করে রাখবে।
5.কিওক্রাডং এ রাতে থাকার জন্য জন প্রতি ৩০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন:
কেওক্রাডং এ সবাই ৩০০ টাকা জন প্রতি কটেজে থাকতে পছন্দ করে,মনে করে ভালো ভিউ পাবে।তবে ২০০ টাকার গুলোও অাসলে একই ভিউ পাবেন।বরং সুবিধা রাতে বাথরুম লাগবে কাছেই পাবেন।
কোথায় খাবেনঃ
কেওক্রাডং এর ক্ষেত্রে খাওয়া দাওয়া আদিবাসীদের ঘরেই করতে হয়।রাতে খাবার জনপ্রতি ১২০ টাকা ( ভাত,ভর্তা,ডাল,ডিম) সাথে যদি মুরগি খান অতিরিক্ত টাকা এড করা লাগবে।কেওক্রাডংএ খাবার জনপ্রতি ১৩০ টাকা,মোবাইল চার্জ জনপ্রতি ৩০ টাকা এক ঘন্টা,গোসল করলে জনপ্রতি ৫০ টাকা,রাতে থাকা জনপ্রতি ৩০০ টাকা।গাইড আবশ্যক, পারডে ৬০০ টাকা থাকা খাওয়া আপনাকে দিতে হবে।
পাহাড় জয়ের শর্তঃ
এখন গাড়িতেই বগালেক,কেওক্রাডং যাওয়া যায়।সেক্ষেত্রে আপনার ক্রেডিট কই?পাহাড় তো জয় করলো চান্দের গাড়ি।রাখেন আপনার চান্দের গাড়ি,হেটে ট্রেকিং করে পাহাড়ে উঠুন।বগালেকের ৪০ মিনিট,কেওক্রাডং এর ৩ ঘন্টার ট্রেকিং খুব না হলেও অন্য ট্রেকিং ট্যুর থেকে আলাদা।মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন।
গাইডঃ
প্রকাশ গাইড- 01887 65 93 60
আমি গিয়েই প্রকাশ দা কে খুঁজেছিলাম। তিনি নাকি খুব অমায়িক মানুষ। কিন্তু গাইড একদিন আগে থেকে বুকিং করে সিরিয়াল দিতে হয় বিধায় তাকে আমরা পাইনি।
সজীব দাশ- 01828 23 58 03
গাইড মেইনটেইনেন্স এর দায়িত্বে উনিই থাকেন। গাইড বুক না করে গেলে ওনাকে গিয়ে ফোন দিলেই হবে।
কেওক্রাডং এর সৌন্দর্য নিয়ে তেমন কিছু বলবো না শুধু বলবো, আপনি প্রকৃতিক সৌন্দর্যৈ বিমোহিত হয়ে যাবেন। আর মনে মনে বলবেন অপরূপ বাংলাদেশ।
সবচে বড় যে কথা সেটা, পাহাড়িরা খুবই পরিচ্ছন্ন। সেখানে গিয়ে আমাদের উচিত নোংরা না করা। চিংড়ি ঝর্ণায় অনেক ময়লা দেখতে পেয়েছি। সিগারেট, চিপ্সের প্যাকেট এগুলা যেখান সেখানে না ফেলি। ওখানে জায়গায় জায়গায় বাস্কেট দেয়া আছে। সেগুলো ব্যবহার করি।ঘুরতে যেয়ে পরিবেশব নোংড়া করবেন না। সবশেষে কিংবা অবশেষে সবার সুন্দর ট্যুর হোক এই কামনা করি।