ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে এ সময় ঘর থেকেই যেখানে বের হওয়া যায় না সেখানে ভ্রমণ কীভাবে সম্ভব? তাও আবার পাহাড়ে ভ্রমণ! মন চাইলে সবই সম্ভব। বিশেষ করে যারা বর্ষায় প্রকৃতির রূপ দেখতে চান তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই ভরা বাদলেও ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে পারেন।
বর্ষাকাল মানেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি মানেই প্রকৃতির সৌন্দর্য বেড়ে যাবে কয়েকগুণে। সবুজের সমারোহে পাহাড়, নদী আর ঝর্ণার অপরূপ সম্মিলনের দেশ বাংলাদেশ। বর্ষায় প্রকৃতির রূপ খোলে। সবুজ হয়ে ওঠে গাছপালা। পাহাড়ী ঝর্ণায় দেখা যায় জলের উল্লাস। ফলে পাহাড়-প্রেমিকেরা পা বাড়ান সেদিকে। এই বৃষ্টির ঋতুতে আপনার ভ্রমণকে আরও সুন্দর করতে পাহাড় ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু টিপস জানাচ্ছি-
পাহাড় ভ্রমণের টিপস-পাহাড়ে ভ্রমণের দরকারি টিপস ও প্রস্তুতি
১।ম্যালেরিয়া-প্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ কীটনাশকযুক্ত মশারি বাজারে পাওয়া যায় এখন, সেগুলো ভালো। এ ছাড়া মশা তাড়ানোর বিশেষ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে হাতে-পায়ে এই ক্রিম মেখে ফুলহাতা জামা ও পাজামা বা প্যান্ট পরে মশারির বাইরে বেরোতে হবে। এ ছাড়া হোটেল বা রিসোর্টের ঘরে, বাথরুমে ও বারান্দায় মশার ওষুধ স্প্রে করে নিন।
পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও রাখতে হবে।
২।পাহাড়ে হাঁটতে গিয়ে উরুতে ঘা হতে পারে। সঙ্গে বেটনোবেট ওয়েন্টম্যান্ট ক্রিম রাখুন। অবশ্যই গামছা রাখতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজলে সঙ্গে সঙ্গে শরীর, মাথা মুছে ফেলুন।
৩।পাহাড়ে হাঁটার সময় এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না। মশা, জোঁক কামড়াবে। লাঠি এবং ট্রেকিং উপযোগী জুতা সঙ্গে রাখুন। কারণ এ সময় পাহাড়ি রাস্তা পিচ্ছিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
৪।ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ব্যাগ সাবধানে রাখুন। ভাড়া দেওয়ার জন্য ভাংতি সাথে রাখুন।
৫।পাহাড় ভ্রমণে সতর্কতা সবসময় অবলম্বন করে চলতে হবেই। তাই স্থানীয় সহায়তা ও পুলিশ সহায়তা জন্য স্মার্টফোনে বাংলাদেশ পুলিশ গুগোল প্লে-স্টোর থেকে নামিয়ে রাখুন। বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের পুলিশ সহায়তা নাম্বার পাবেন। নিরাপত্তা সবার আগে, তাই এই এপস আপনার দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ প্রয়োজন।
পাহাড় ভ্রমণের প্রয়োজনীয় টিপসঃ
১। প্রথমেই যা করতে হবে তা হচ্ছে বেশী বেশী হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ ট্রেকিং ও হাইকিংয়ে সবচে বেশী হাঁটতে হয়। আর হাঁটার রাস্তাও খুব একটা সহজ নয়। আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথ পেড়িয়েই আপনি দেখতে পারবেন সবচে আকর্ষণীয় দৃশ্য। পাহাড়ের উপর থেকে সূর্য ওঠা বা সূর্য ডোবা দেখতে চান, কিন্তু একটু কষ্ট করবেন না তা কি হয়?
২। হাঁটার সাথে সাথে কিছুদিন একটু অতিরিক্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার অভ্যাসটিও করে ফেলুন। সঙ্গে যদি একটু ওজন নিয়ে চেষ্টাটা করেন, তাহলে আরও ভালো।
৩। যেকোনো ট্যুরেই ব্যাগ নেয়া আবশ্যক বিষয়। কিন্তু পাহাড় চড়ার ক্ষেত্রে ব্যাগ নির্বাচন করাটা অন্য সব ট্যুরের চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনাকে পানি, শুঁকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাগপ্যাক নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে করে আপনার দুহাত খালি থাকবে।
৪। ভালো গ্রিপ হয় এমন জুতা কিনে নিবেন আগেই। এতে পাহাড়ে উঠতে অনেক সুবিধা হবে। একটা সময় আসে যখন পা একদমই সঙ্গ দিতে চায় না। তখন গ্রিপওয়ালা জুতা জোর করে হলেও আপনার পা টেনে ওঠাবে।
৫। ওডোমোস, গ্লুকোজ, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রাখবেন। কারণ পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ খুব বেশী। অবশ্যই নখ কেটে যাবেন।
৬ । আমরা যখন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়েছিলাম তখন সঙ্গে খেজুর নিয়েছিলাম। কারণ খেজুরে রয়েছে অনেক শক্তি, যা নিমিষেই আপনার দুর্বলতা কমিয়ে দিবে। দুইটি খেজুর খেয়ে আপনি সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
৭। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি নেবেন। আরও ভালো হয় যদি স্যালাইন নিয়ে যান। পাহাড়ের ওঠার সময় অনেক দুর্বল লাগে, মাথা ঘুরায়- তখন স্যালাইন খেলে ভালো লাগবে। কিন্তু অল্প করে পানি খাবেন। বেশী পানি খেলে শরীর ছেড়ে দিবে, তখন আর উপরে উঠতে পারবেন না।
৮। পাহাড় ওঠার টাইম অবশ্যই লাঠি কিনে নেবেন। এই ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা করবেন না। বিপদআপদ এড়াতে লাঠি অনেক কাজে আসে। এরই সাথে উপরে ওঠার একটা সাপোর্টও পাওয়া যায়।
৯। আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক সঙ্গে নেবেন।
১০। যতটা সম্ভব হয় ব্যাগ ততটা হালকা রাখবেন। এবং ওঠার সময় খুব দ্রুত ওঠার চেষ্টা করবেন না এবং নামার সময়ও দ্রুত নামার চেষ্টা করবেন না। এতে করে বিপদ হতে পারে। জীবনের চাইতে বড় আর কিছু হতে পারে না। পরিশেষে বলবো পাহাড় চড়া একটা নেশা। একবার যে ব্যক্তি পাহাড় চড়বে তাকে আর কেউ থামাতে পারবে না আরেকটি পাহাড় চড়তে। এটি অনেকটাই ভাত খাওয়ার ক্ষুধার মতো। যে ব্যক্তি পাহাড় দেখলো না তার যেন এই পৃথিবীর মায়াটাই জানা হলো না।