বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান এটি। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এক শিমুল গাছের বাগান।
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরের দূরত্ব ৩৩.৫ কিলোমিটার যেতে আনুমানিক সময় লাগে ১ ঘন্টা বা তার একটু বেশি। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ, অগুণতি পাখির কলকাকলি।বসন্ত এলে যখন একসাথে দুহাজার গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে তখন পর্যটকদের নজর না কেড়ে উপায় কি!
সুনামগঞ্জ শিমুল বাগান ভ্রমণ
শত বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জাদুকাটা নদীর তীরে এই শিমুল ফুলের বাগান। পাশাপাশি আছে লেবু গাছ। বসন্তের দুপুরে পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বন। সব মিলে মিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউয়ের গড়। ১৪ বছর আগে ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে শুধুই সৌখিনতার বসে এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন, জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। বসন্ত এলে যখন একসাথে দুহাজার গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে তখন পর্যটকদের নজর না কেড়ে উপায় কি!
শিমুল বাগান যাওয়ার উপায়
কখন যাবেনঃ
শিমুল বনের রক্ত রাঙ্গা সৌন্দর্যের দেখা মেলে বছরে একটি মাসে। ফাল্গুনের শুরুতে গেলে গাছে ফুল দেখতে পারবেন।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে শ্যামলী/মামুন/এনা বাস যায় সুনামগঞ্জ ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা। সুনামগঞ্জ নেমে নতুন ব্রীজের ওই পাড়ে মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকে অনেক। কথা বলে বারেক টিলা নদীর এই পাড় পর্যন্ত ভাড়া নিবে ২০০ টাকা। দামাদামি করে ১৫০ তেও নাকি যাওয়া সম্ভব! একটাতে ২ জন চড়া যায়। জনপ্রতি তাহলে পরল ১০০ করে। জাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দিবে। ৫ টাকা দিয়ে খেয়া অতিক্রম করে ওইপাড়ে গেলেই বারেক টিলা, যা থেকে সুন্দর পুরো জাদুকাটা নদী দেখা যায়।
বারেক টিলা থেকে নেমে চায়ের দোকান আছে কিছু। তাদের জিজ্ঞেস করলেই ছবির মত সুন্দর এই শিমুল ফুলের বাগান এ যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। এছাড়া কেউ ট্রেনে যেতে চাইলে সিলেট হয়ে যেতে পারেন। ঢাকার কমলাপুর থেকে রাতের ট্রেনে (৯.৫০ এ ছাড়ে ) চলে যেতে পারেন সিলেট। শোভন চেয়ার ভাড়া নিবে ৩২০ টাকা। সিট পেতে হলে অবশ্যই কস্ট করে ২-১ দিন আগে যেয়ে টিকেট কেটে আনতে হবে। অনলাইনেও সম্ভবত কাটা যায়। ভোর বেলা নামিয়ে দিবে সিলেট। সিলেটের কুমারগাও বাসস্ট্যান্ড থেকে উঠে পড়ুন সুনামগঞ্জ গামী বিরতিহীন বাসে। ভাড়া ৯০ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ
সুনামগঞ্জ শহরে ভালো অনেকগুলো হোটেল আছে, সাধ্য ও বাজেট অনুযায়ী যেকোনো একটাতে থাকা যাবে। তাহিরপুরেও হোটেল আছে, ডাকবাংলোও আছে। তবে রুম সীমিত। খালি থাকলে থাকা যাবে। এছাড়াও বড়ছড়া বাজার ও নীলাদ্রী লেকের পাশে টেকেরঘাটে গেস্ট হাউজ ও রেস্ট হাউজ আছে। রাত কাটানো যাবে সেসব জায়গাতেও।
কোথায় খাবেনঃ
সুনামগঞ্জে পানসীসহ অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। তাহিরপুর, বড়ছড়া বাজার, টেকেরঘাট, বারেক্কা টিলায়ও খাওয়ার জন্য হোটেল আছে। যাত্রাপথে কাজ চালিয়ে নেয়ার মত খাওয়াদাওয়ায় আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।
অপরূপ এই প্রকৃতির কাছে মানুষ আজন্ম ঋণী। তাই আমরা যেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে না দাঁড়াই, সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।