সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ।চারদিক থেকে নীল জলরাশি দিয়ে ঘেরা এই দ্বীপ পর্যটনদের বিমোহিত করে রেখেছে।প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক অপার্থিব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই দ্বীপে ছুটে আসে।নীল জলরাশি আর নারকেলের দ্বীপ সেন্টমার্টিন যার অন্য নাম দারুচিনি দ্বীপ, নারিকেল জিঞ্জিরা। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদ এই দ্বীপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই দ্বীপ নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন, মুভি বানিয়েছেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ
টেকনাফ বা শাহপরীর দ্বীপ হতে ট্রলারে ও জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করা যায়।তবে বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজসমূহ মূলত শাহপরীর দ্বীপের জাহাজ ঘাট হতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা করে থাকে।শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।এই ১৮ কিলোমিটারের পথ ‘বাংলা চ্যানেল ‘ নামে পরিচিত।এই পথ দিয়ে যাবার সময় মাছ ধরার অনেক ট্রলার দেখবেন।
সমুদ্র যাত্রার এই পথে অসংখ্য গাঙচিল দেখবেন কিছুক্ষণ পর পর।জাহাজ হতে বাংলাদেশ অংশের সীমানা ও জঙ্গল দেখতে পারবেন।বিপরীত পাশে মিয়ানমারের অংশের সীমানা,পাহাড় ও জঙ্গল দেখতে পাবেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ হতে আসার পথে নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখতে পাবেন যদি জাহাজ টেকনাফ জাহাজ ঘাটকে গন্তব্য হিসেবে নেয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ খরচ
সিজন অপেক্ষা অনেক কমে থাকার জন্য রিসোর্ট পেয়ে যাবেন, তবে অফ সিজনে সব রিসোর্ট খোলা থাকে না। যারা একটু বেশি নির্জন ও নিস্তব্ধতা পছন্দ করেন তাদের জন্য বেস্ট বীচ ভিউ রিসোর্ট গুলো। আমরা বাজার থেকে মোটামুটি দূরত্বের “নিসর্গ কুটির” রিসোর্ট এর (কোরাল) এ উঠেছিলাম। দুই বেড অনেক বড় রুম, ভাড়া ৬০০/- টাকা মাত্র। যা সিজনে মোটামুটি প্রায় তিন হাজার টাকায় ভাড়া হয়। রিসোর্ট এর লোকদের সাথে কথা বলে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার ঠিক করে নেওয়াই ভালো,,এতে খাবার খরচ অনেক কম পরবে। যা বাহিরে খেতে গেলে অনেক বেশি পরবে। আমরা টুনা মাছ ভর্তা, ডাল, রুপচাঁদা ফ্রাই, আর কোরাল মাছ দিয়ে লাঞ্চ এবং ডিনার করি। জনপ্রতি প্রতিবেলা ১২০/- টাকা যা বাহিরের খবার এর দাম অপেক্ষা অনেক কম।
সেন্টমার্টিন এর মূল দ্বীপ থেকে ছেড়া দ্বীপ যেতে চাইলে আপনি হেটে কিংবা সাইকেল প্যাডেল করতে করতে ও চলে যেতে পারেন। যাওয়ার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিয়ে যাবেন, সাইকেল ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৪০ টাকা নিয়েছিল।
সেন্টমার্টিন গেলে অবশ্যই কয়েক দিন সময় হাতে নিয়ে যাবে।কারন সেন্টমার্টিন গেলে দুই এক দিন না থাকলে রাতের সেন্টমার্টিন উপভোগ করতে পারবেন না। রাতের সেন্টমার্টিন সত্যি মনোমুগ্ধকর। সেন্টমার্টিন গেলে অবশ্যই ডাব এর টেষ্ট নিতে ভূল করবেন না, না হলে আপনার মনে হতেই পারে অসম্পূর্ণ ট্যুর। বাজারে জেটির কাছেই ২০/২৫ টাকায় পেয়ে যাবেন বড় মিষ্টি ডাব। তবে আমাদের মতো ভাগ্যে ভালো থাকলে আর গ্রুপ মেম্বার কেউ গাছে উঠতে জানলে গাছ থেকে ডাব পেরে খাওয়ার অভিজ্ঞতা ও পেয়ে যেতে পারেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ
এই দ্বীপের গভীর নীল জলের সৈকতই এই দ্বীপের মূল আকর্ষন।এখানে অসংখ্য নারিকেল গাছ, কেয়া বন দেখতে পাবেন।এই দ্বীপে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অফিস রয়েছে।এখানে বিখ্যাত লেখক হুমায়ন আহমেদের ‘সমুদ্র বিলাস’ বাড়ি দেখতে পাবেন।এছাড়া এখানে সহজ সরল ধর্ম পরায়ণ মানুষের জীবন জীবিকা দেখতে পাবেন।সাইকেল ভাড়া (ঘন্টা – ৫০ টাকা) করে সমগ্র দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন।ট্রলার ভাড়া পাশের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমন করতে পারবের।রাত ১২.০০ বেলার পর সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৈকতে আড্ডা দেওয়ার অনুভুতিই আলাদা।
খেয়াল রাখবেন ঃ
১। প্রথমেই আপনার মাথায় রাখা উচিত আপনি ট্রলারে যাচ্ছেন যা অনিরাপদ, তাই আপনার মনোবল শক্ত হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে অফ সিজন আপনার জন্য নয়।
২। সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে যেনে বের হন।
৩।সেন্টমার্টিন যাওয়ার আগে আপনার জন্মনিবন্ধন, পরিচয় পত্র অথবা পার্সপোর্ট এর ফটোকপি সাথে রাখুন, চেকিং এর সময় প্রয়োজন হতে পারে।
৪।সাথে টুপি কিংবা ছাতা অবশ্যই রাখবেন, ট্রলারে প্রচন্ড রোদে এর প্রয়োজন ঠিক তখনই বুঝতে পারবেন।
৫। যারা সী – সিকনেসে ভুগেন তারা অবশ্যই ভরাপেটে ট্রলার ভ্রমণ পরিহার করুন।
৬। ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাথে অবশ্যই পানির বোতল সাথে নিয়ে যাবেন।
৭। অফ সিজনে সেন্টমার্টিন তুলনামূলক নির্জন থাকে। তাই রুম থেকে বের হবার সময় দড়জার সাথে সাথে জানালা গুলো বন্ধ করতে ভূল করবেন না।
৮। সেন্টমার্টিন এর স্থানীয়রা খুব বন্ধু সুলভ তাই তাদের সাথে ও বন্ধু সুলভ আচরণ করুন।
৯। সেন্টমার্টিনে মিষ্টিপানির পরিমান খুব কম।তাই আপনার সন্তনকে ব্যাগ ভর্তি পনি নিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পাঠাতে না চাইলে, মিষ্টিপানির অপব্যবহার পরিহার করুন।
১০। আপনার ব্যবহৃত এবং আপনার চোঁখের সামনে যদি কোন ময়লা আবর্জনা থাকে তবে তা তুলে এনে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন ।এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা করুন । সেন্টমার্টিন এ আবর্জনা ফেলার জন্য পেঙ্গুইন আকৃতির ডাস্টবিন রয়েছে।
আপনার ভ্রমণের সময় পরিবেশ নষ্ট করা হতে বিরত থাকুন।নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলুন।প্রকৃতি কে সবসময় ভালোবাসুন।