হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। হিরণ পয়েন্ট, সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। হিরণ পয়েন্ট একটি অভয়ারণ্য হওয়ায় এই স্থান অনেক বাঘ, হরিণ, বানর, পাখি এবং সরিসৃপের নিরাপদ আবসস্থল। সুন্দরবন এলাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার অন্যতম একটি স্থান হলো এই হিরণ পয়েন্ট।চিত্রা হরিণ, বন্য শুকরের; পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বুক মাছরাঙা, হলুদ বুক মাছরাঙা, কালোমাথা মাছরাঙা, লার্জ এগ্রেট, কাঁদা খোঁচা, ধ্যানী বক প্রভৃতি।
হিরণ পয়েন্ট ভ্রমণ
হিরণ পয়েন্ট আপনাকে স্বাগতম জানাবে, কাঠের গেটে লেখা দেখবেন ‘নীলকমলে স্বাগতম’। এখানকার লুকায়িত সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে বেশি সময় লাগবে না আপনার, হাঁটতে হাঁটতে প্রায়ই চোখে পড়বে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লজ্জাবতী কোনো হরিণের। এখানকার ট্রেইলের মাঝপথে পাবেন চমৎকার একটি শেড, বসার জায়গা। যেখানে বিশ্রাম নিয়ে আপনি আপনার ক্লান্তি কিছুটা কমিয়ে নিতে পারেন।
হাঁটার সময় ট্রেইলের দুপাশে পাবেন বেশ খোলামেলা জায়গা, এখানে কেবল বড় বড় সুন্দরী গাছ, মাটি থেকে উপরের দিকে চোখা হয়ে জেগে আছে অজস্র শ্বাসমূল। এর মাঝে দৌড়ে বেড়ায় বানরের দল। ট্রেইলটির প্রায় শেষের দিকে আছে উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার, এখান থেকে তাকালেও বনের বেশ খানিকটা এক নজরে দেখে নয়নজোড়া জুড়িয়ে নেওয়া যায়। ট্রেইলটি একটি জলাশয়ের ধারে গিয়ে শেষ হয়েছে। জলাশয়টি ওখান থেকে বনের ভেতরের দিকে চলে গেছে। জলাশয়ের পাশেই রয়েছে ঘন সবুজ জঙ্গল। এখানে বসেও আপনি উপভোগ করতে পারেন বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন
দেশের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণের চেয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ একটু আলাদা।বনাঞ্চল হওয়ায় অনেক নিয়ম-কানুন মানা প্রয়োজন-বনবিভাগের অনুমতি নেওয়া গার্ড নেওয়া।তাই নিজে নিজে যেতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।এর জন্য কোনো ট্রাভেল এজেন্সির সাথে গেলে ঝামেলামুক্ত হয়ে আপনি সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।খুলনা থেকে জনপ্রতি ১৫০০-২০০০টাকা/দিন খরচ হতে পারে।এর বেশী খরচ করার মত জায়গা নাই।
যাওয়ার উপায়:
ঢাকার গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে মেঘনা পরিবহন (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), পর্যটক পরিবহন (০১৭১১১৩১০৭৮) সাকুরা পরিবহন (০১৭১১০১০৪৫০), সোহাগ পরিবহন (০১৭১৮৬৭৯৩০২) ইত্যাদি বাসে খুলনা বা বাগেরহাট যেতে হবে।
খুলনা লঞ্চঘাট বা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে লঞ্চযোগে হিরণ পয়েন্ট যাওয়া যাবে। রাতে ও সকালে লঞ্চ রয়েছে। এছাড়াও বাগেরহাটের মংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকে পাবেন সুন্দরবন যাওয়ার নৌযান।
এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে সরাসরি মংলা যায় সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাস। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।
কোথায় থাকবেন:
সুন্দরবনে রাত কাটাতে চাইলে পর্যটন জাহাজে রাত কাটানো যায়। জাহাজে তিনদিনের ভ্রমণে গেলে থাকা খাওয়ার সব সুব্যবস্থা জাহাজেই থাকে। এছাড়া হিরণপয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করা যাবে। নীলকমল ও কচিখালীতে কক্ষ প্রতি ৩০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তবে কচিখালীতে ৪ কক্ষ ভাড়া নিলে ১০,০০০ টাকায় থাকা যাবে। কটকা রেস্ট হাউজে রুম নিতে লাগে ২০০০ টাকা। বিদেশি ভ্রমণকারীদের এই সব রেস্ট হাউজে রাত কাটাতে রুম প্রতি ৫০০০ টাকা দিতে হয়।
এছাড়া সারাদিন ঘুরাঘুরি করে রাতে এসে থাকতে পারেন বন্দর শহর মংলায়। এখানে আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর (০৪৬৬২-৭৫১০০)। রুম (ডাবল) প্রতি ভাড়া পড়বে ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা (নন এসি/এসি)। ইকনোমি বেড ৬শ’ টাকা।