আমিয়াখুম জলপ্রপাত, সবুজ পাহাড়ে ঘেরা পাথরের গায়ে বেয়ে নেমে আসে প্রবল জলধারা। এ যেন এক অন্যরকম প্রকৃতি! বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের থানচিতে অবস্থি আমিয়াখুমের ঝর্ণা। এখান থেকে সামান্য উপরে উঠলেই শুরু হয় ছোট-বড় অনেক পাথর দিয়ে সাজানো পাথুরে রাস্তা।
খুব সাবধানাতর সাথে রাস্তুটুকু পার করার পরে সামনে পড়বে বিশাল আকৃতির পাথরের পাহাড় আর তার মাঝে সবুজ, শান্ত ও স্বচ্ছ জলধারা। আর এখান থেকেই শুরু সাতভাইখুম। অনেকে একে ভেলাখুমও বলে।
আমিয়াখুম ভ্রমণ গাইড
পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসছে জলধারা। দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে তা বয়ে চলেছে পাথরের গা বেয়ে। নিমেষেই ভিজিয়ে দিচ্ছে পাশের পাথুরে চাতাল। সঙ্গে অবিরাম চলছে জলধারার পতন আর প্রবাহের শব্দতরঙ্গ। লোকালয় ছেড়ে গহিন পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্য—একবার দেখলে মনের গভীরে গেঁথে থাকবে আজীবন।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা-বান্দারবন, বান্দারবান থেকে জিপ/বাস করে থানচি, থানচি থেকে নৌকা করে রেমাক্রি। থানচি থেকে বোটে চড়ে রেমাক্রি। রেমাক্রি পৌঁছাতেও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে। রেমাক্রি থেকে পায়ে হেঁটে আমিয়াখুম। রেমাক্রি থেকে নাফাকুম হয়ে, নাইক্ষ্যং ঝিরি ধরে জিনা পাড়া পৌঁছাবেন। এখানে আপনার সময় ব্যয় হবে প্রায় চার ঘণ্টায়। এতেই প্রথম দিন রাত হয়ে যাবে। সেই রাত জিনাপাড়ায় আপনাকে অবস্থান করতে হবে। জিনাপাড়া থেকে পরের দিন হেঁটে দেবতা পাহাড় দিয়ে আমিয়াখুম পৌঁছে যাবেন। সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা। সেখান থেকে ভেলায় চড়ে সাতভাইখুম।
সাতভাইখুম ট্যুর প্ল্যান
খরচ
বান্দরবান থেকে থানচি যেতে চান্দের গাড়ির ভাড়া পড়বে জন প্রতি তিনশত টাকা। আর চার হাজার টাকায় আপনি গাড়ি রিজার্ভ নিতে পারেন। একটি চান্দের গাড়িতে ১৪ থেকে ১৫ জন যাতায়াত করতে পারবেন। গাড়ির ড্রাইভাররা একটু বেশি ভাড়া চাইবে। আপনাকে একটু দামাদামি করে নিতে হবে।
থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত আপ ডাউন বোট ভাড়া চার হাজার ৫০০টাকা। সাথে দুইজন মাঝির খাওয়ার খরচ। এটা সেনাবাহিনীর দ্বারা নির্ধারিত ভাড়া। রাস্তা দুর্গম হওয়ার কারণে এখানে আপনাকে গাইডের সাহায্য নিতে হবে। শুধু নাফাকুম পর্যন্ত গাইড ভাড়া দুই হাজার টাকা। তবে গাইডের মানভেদে টাকার পরিমান কম বেশি হতে পারে। এখানে আপনি রেজিস্টার্ড এবং লোকাল গাইড পাবেন। এখানেও দামা দামি করে নিবেন।
আমিয়াখুম পর্যন্ত গেলে ৫০০০টাকা প্লাস নিবে। রেজিস্টার্ড গাইডগুলো হয়ত অনুমুতি না থাকায় আমিয়াখুম যেতে চাইবে না। তবে কিছু আনরেজিস্টার্ড লোকাল গাইড পাওয়া যেতে পারে যারা আপনাকে গাইড প্রদান করবে।
কোন আর্মি ক্যাম্প এরিয়ায় ছবি তোলা বা ভিডিও করা Allowed নাহ। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে এটা খুবি Restricted. আপনি যদি ভুলে ভিডিও বা ছবি তুলে ফেলেন, তাহলে আপনার Permission নিয়ে ঝামেলা করতে পারে, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করাতে পারে, আপনার গ্যালারী চেক করে ইমেজ ওর ভিডিও ফুটেজ ডিলিট করতে পারে এবং খারাপ ব্যাবহার ও করতে পারে।
যে ব্যাপার গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবেঃ
1.এটি একটি এডভেঞ্চার ট্রিপ। এখানে প্রথমে ৭-৮ ঘন্টা হেটে থুইসাপাড়া যেতে হবে। যেতে দেবতাপাহাড় পারি দিতে হবে অর্থাৎ ৪/৫ ঘন্টার মত হেটে যেতে হবে, আবার ফিরেও আসতে হবে হেঁটে। আর পুরোটাই পাহাড়ি পথ, তাই যারা যেতে চাচ্ছেন অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়েই যাবেন।
আপনাকে মোবাইল নেট এর বাইরে থাকতে হবে দুই দিনের মতো।
2.খুব প্রয়োজনীয় ছাড়া কিছু নিবেন না, অতিরিক্ত কাপড় ভ্রমণের প্রধান শত্রু। দুটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, একটি বা দুটি টি শার্ট নিলেই যথেষ্ট, কারণ ওখানে আপনাকে কেও দেখবেনা কেমন দেখাচ্ছে, বরং আপনার অতিরিক্ত ভারি কিছু আপনার ভ্রমণের আনন্দ নষ্ট করে দিবে।
3.মোটামুটি কষ্ট করতে হবে ধরেই নিবেন, তাইলে কষ্ট টা অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হবে না
যা যা সঙ্গে নেবেন
1.ন্যাশনাল আইডি এর ফটোকপি এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
2.ট্র্যাকিং এর জন্য খুব পাতলা জুতা। নিউ মার্কেটের সামনে পেগাসাস নামে ১৩০-১৫০ টাকায় এই জুতা পাওয়া যায়। থানচি বাজারেও পাওয়া যায়
3.মশা থেকে বাঁচার জন্য অডোমস। এবং ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক Cap Doxycycline 100mg – ১৩ মার্চ থেকে প্রতি রাতে খাবার পরে ১টা করে খাওয়া শুরু করবেন, মোট ৩৩টি ক্যাপসুল খেতে হবে।
4.গামছা নিবেন পাতলা, কিন্তু বড় যেন রোদে মাথায় ঢেকে হাঁটা যায়
5.সোলার লাইট
6.ছোট টর্চ
7.সানগ্লাস, হ্যাট, সান ক্রিম (যদি অতিরিক্ত ত্বক সচেতন হন)
8.ব্রাশ,প্রয়োজনীয় ঔষধ
9.ক্যামেরা এবং এক্সট্রা ব্যাটারি
10.চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক