বর্তমানে আমারা যে পৃথিবীকে দেখতে পারছি, আজ থেকে ১০০ বছর বা তারো আগে আমাদের পৃথিবী এমন ছিল না। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের আজকের পৃথিবী এখানে এসেছে। বিজ্ঞান মানেই নতুন নতুন আবিষ্কার।বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের জীবন হয়েছে সুন্দর, সহজ আর গতিময়। নতুন আবিষ্কারে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিজ্ঞানে বাঙালি বিজ্ঞানীরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বাংলাদেশ তথা বিজ্ঞানের উন্নয়নের যারা অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের কিছু তালিকা তুলে ধরব।
পরিবর্তনশীল পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানিদের নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক নাগরিক গণ বাংলাদেশের কৃতি বিজ্ঞানীদের নাম ও কোন বিষয়ে অবদান রেখেছেন সেই বিষয়ে হয়তো ভাল করে জানেন না , আপনাদের সঠিক তথ্য গুলি জানানোর জন্য আমাদের অনুচ্ছেদেটি লেখা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের নাম ও আবিষ্কার
জগদীশ চন্দ্র বসু
বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী এবং বাংলার গর্ব আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব সর্বপ্রথম অনুভব করেছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। ১৯০০ সালের আগে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু পদার্থবিজ্ঞান নিয়েই বেশি গবেষণা করে। বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। ১৯১০ সালের দিকে তাঁর গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ হয়।
কুদরাত-এ-খুদা
কুদরাত-এ-খুদা একজন বাংলাদেশী রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ। বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের মধ্যে নয়টি পাটসংক্রান্ত। পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন ও কাগজ, রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশে মোট ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা হিগস-বোসন কণাটি ‘ঈশ্বর কণা’ হিসেবেও পরিচিত। সত্যেন বোসের গবেষণা পার্টিকেল স্ট্যাটিস্টিক্স ১৯২২ সালে আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর গবেষণা কোয়ান্টাম থিওরির অনেক পথ খুলে দেয়।বিজ্ঞানী হিগস ১৯৬৪ সালে শক্তি হিসেবে এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। এর ফলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ নামে পরিচিতি পায়।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় একজন বাঙালি রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে পি সি রায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি ১৮৯৫ সালে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে বাংলাদেশে বাগেরহাট জেলায় একটা বিখ্যাত কলেজ “প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ”, সংক্ষেপে পিসি কলেজ। কলেজটি ১৯৭৯ সালে সরকারিকরণ করা হয়।
মেঘনাদ সাহা
মেঘনাদ সাহা এফআরএস (অক্টোবর ৬, ১৮৯৩ – ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৫৬) ছিলেন একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত। মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলো ব্যাখ্যা করতে অপরিহার্য। তিনি ভারতে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে আধুনিক গবেষণার জন্য ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা করেন।
ডাক্তার শাহ এম ফারুকঃ
শাহ এম ফারুক ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেছেন। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি`র আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন। যখন বিশ্বব্যাপী কলেরার কারণ হিসেবে নতুন ধরণের ব্যাক্টেরিয়াকে দায়ী বলে ধারনা করা হচ্ছে তখন গবেষক দলটি এ সাফল্য অর্জন করল। তারা বলছে, `ভিবরিও` নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ড. জামালউদ্দিনঃ
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন। ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির নেনোট্যাকনোলজি রিচার্স সেন্টারের গবেষক ডঃ জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিশ গবেষকরা স্পেক্ট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায় প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।