আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছি । আজ আমাদের আলোচনার বিষয় বস্তু হল বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটার । আশা করি আমি আপনাদের সামনে এর খুঁটিনাটি বিশয় গুলো বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করব।
প্রিপেইড মিটার এর পরিচিতি
সবার মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে বিদ্যুতের (কারেন্টের) আবার প্রিপেইড মিটার আবার কি জিনিস ? দেখতে কেমন ? ব্যাবহারে ফলে গ্রাহকের কি কি সবিধা ? এবং এটা কিভাবে রিচার্জ করতে হয়ে ? এর সব প্রশ্নের উত্তর একে একে পাবেন এখানে ।
প্রিপেইড মিটার কি ?
প্রিপেইড মিটার এক ধরনের বিশেষ বৈদ্যুতিক মিটার যাতে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের ফলে ধীরে ধীরে টাকা কেটে নেয়া হয় এবং টাকা শেষ হয়ে গেলে মিটার টি এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় । অতঃপর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করতে হলে পুনরায় মিটার টি রিচার্জ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার ২ ধরনের হয় যেমন, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার এবং কী প্যাড প্রিপেইড মিটার ।
এরা দেখতে কেমন ?
স্মার্ট কার্ড প্রিপেইড মিটারঃ–
স্মার্ট কার্ড প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্রাহককে একটি স্মার্ড কার্ড প্রদান করা হয়। এই স্মার্ড কার্ড টি ভেন্ডিং স্টেশনে ( কিংবা চিহ্নিত বিদ্যুৎ অফিস , যার আওতায় আপনার বাসা কিংবা অফিস ) থেকে রিচার্জ করে মিটারে প্রবেশ করাতে হয়। কিন্তু যদি আপনি মোবাইল ব্যাংকিং যেমন– বিকাশ কিংবা গ্রামীনফোন এর জি পে ব্যাবহার করেন সে ক্ষেত্রে মিটারে টাকা সনংক্রিয় ভাবে চলে আসবে । কার্ড মিটারে প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হবে না ।
কি প্যাড প্রিপেইড মিটারঃ–
কী প্যাড প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্রাহক ভেন্ডিং স্টেশনে রিচার্জ করাতে হবে , সেখান থকে একটা টোকেন নম্বর দেওয়া হবে । এই টোকেন নম্বর টি মিটারের গায়ে থাকা কী প্যাড চেপে মিটারে প্রবেশ করাতে হবে ।
কার্ড প্রবেশ করানোর নিয়মঃ–
প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকের সুবিধা
-
গ্রাহক যে কোন সময়ে দেখতে পারবেন তার কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কত টাকা অবশিষ্ট আছে ।
-
বিদ্যুৎ বিল বকেয়া না হওয়ার কারণে লাইন কাটার কোন টেনশন থাকে না ।
-
ভুল মিটার রিডিং এর কারণে অতিরিক্ত বিল প্রদানের কোন ঝামেলা নাই । গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যাবহার অনুযায়ী মিটার থেকে টাকা কাটা হবে।
-
মিটারে টাকা শেষ হওয়ার আগেই মিটার স্বয়ংক্রিয় ভাবে গ্রেহক কে সংকেত দিবে, ফলে বিদ্যুৎ ব্যাবহারে গ্রাহক আরও সচেতন হবেন ।
-
গ্রাহক অসুবিধার কথা চিন্তা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন, অন্যান্য বিশেষ ছুটির দিন ও ফ্রেন্ডলি আওয়ার ( বিকেল ৪ টা থেকে পরের দিন সকাল ১০ টা পর্জন্ত ) মিটারে টাকা না থাকলেও মিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে না । এই সময় মিটার ক্রেডিট বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে যা আপনি টাকা রিচার্জের পর সমন্বয় করা হবে।
-
তাছাড়া ইমার্জেন্সি ক্রেডিটের ও ব্যাবস্থা আছে। উপরোক্ত সময় গুলো ছাড়াও যদি কোন সময় বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় তবে গ্রাহক কার্ড কিংবা বিশেষ বোতাম চেপে ইমার্জেন্সি ক্রেডিট চালু করতে পারে।
-
প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয় না।
বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ পদ্ধতি
এটা বিকাশের USSD সার্ভিসের মাধ্যমে বিল প্রদান পদ্ধতি ।
বিকাশ এপ্স এর মাধ্যমে বিল পরিশোধের পদ্ধতি
এছাড়াও গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যায় , সেক্ষেত্রে নিকটস্থ গ্রামীনফোন কেয়ার কিংবা সার্ভিস সেন্টারে গেলে তারা বিল পরিশোধ করে দিবে , উল্লেখ্য গ্রামীণ ফোন নিবে ১০ টা অতিরিক্ত চার্জ এবং বিকাশ নিবে ১৫ – ২০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ ।
শুধু মাত্র প্রিপেইড মিটারের এর কিছু কোড এর সেগুলোর অর্থ এখানে উল্লেখ করা হল
বর্তমান ডিপিডিসি তে Shenzhen Inhemeter Co. Ltd , Hexing Electrical Co. Ltd কর্তিক ক্রয় কৃত মিটার বব্যাবহার করা হচ্ছে । নিচে মিটারের বিভিন্ন কোড এবং তার অর্থ বর্ণনা করা হল ।
এটি Shenzhen Inhemeter Co. Ltd এর মিটার যা সাত মসজিদ , শেরেবাংলা নগর , মুগদাপাড়া ও শ্যামলী এলাকায় বসানো হয়েছে।
এটি Hexing Electrical Co. Ltd এর মিটার যা কিনা কাজলা, খিলগাঁও , রাজারবাগ , স্বামীবাগ , তেজগাঁও ও শ্যামলী এলাকায় বসানো হয়েছে।
প্রিপেইড মিটারের কিছু Error List
Shenzhen Inhemeter Co. Ltd মিটারের কিছু Error List
Hexing Electrical Co. Ltd মিটারের কিছু Error List
সর্বাধিক জিজ্ঞাসাকৃত কিছু প্রশ্ন যা হয়তো আপনাদের মনেও আসতে পারে (FAQ)
প্রিপেইড মিটারের তুলনায় পোস্ট পেইড মিটারের বিল কম নাকি বেশি ?
উত্তরঃ– না । প্রিপেইড মিটারে কিংবা পোস্ট পেইড মিটারে সমান বিল হবে । পোস্ট পেইড মিটারের বিল প্রতি ইউনিটের জন্য যেই মূল্য হিসাব করা হয় , সেই মূল্য তালিকা প্রিপেইড মিটারের মেমরিতেও দেওয়া আছে । তাই দুই প্রকারের মিটারের বিদ্যুৎ বিল সমান হবে ।
এক এরিয়ার গ্রাহক কি অন্য এলাকায় কার্ড রিচার্জ করতে পারবে ?
উত্তরঃ– ডিপিডিসির যেকোন এরিয়ার গ্রাহক অন্য যেকোন এরিয়ার যেখানে প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার ব্যাবস্থা আছে সেখানে কার্ড রিচার্জ করতে পারবে । শুধু মাত্র আজিমপুর এবং লালবাগের এনওসিএস দপ্তরের গ্রাহক ব্যাতিত
কার্ড নষ্ট কিংবা হারিয়ে গেলে করনীয় কি ?
উত্তরঃ– কার্ড নষ্ট কিংবা হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট এনওসিএস দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। নির্দিস্ট পরিমাণ ফী প্রদান করে গ্রাহক নতুন কার্ড সংগ্রহ করতে পারেন । যদি নষ্ট কিংবা হারানো কার্ডে কোর রিচার্জ ব্যাল্যান্স থাকে তবে তা নতুন কার্ডে দেওয়া হবে ।
এক মিটারের কার্ড কি অন্য মিটারে রিচার্জ করা যাবে ?
উত্তরঃ– না । কারণ প্রতিটি কার্ড নির্দিষ্ট মিটরের সাথে সংযুক্ত করা আছে। কার্ড টি জেই মিটারের শুধু সেই মিটারে ব্যাবহার করে রিচার্জ করা যাবে ।
মিটার কিংবা রিচার্জে সমস্যা দেখা দিলে কোথায় যোগাযোগ করবো ?
উত্তরঃ– মিটার কিংবা রিচার্জে সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট এনওডিসি দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।
কার্ডে রিচার্জ করে যদি মিটার চার্জ না করি তাহলে কি ব্যালেন্স চলে যায় ?
উত্তরঃ– কার্ডে রিচার্জ করে মিটারে চার্জ না করে রেখে দিলে কোন সমস্যা নেই। পরবর্তি তে যেকোন সময়ে কার্ড মিটারে প্রবেশ করইয়ে একই টাকা রিচার্জ হবে।
এক মাসে একে অধিক রিচার্জ করলে কি ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া কাটবে ?
উত্তরঃ– না। যেকোন মাসে প্রথমবার রিচার্জ করার সময় এই মাসের ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া কাটবে এবং যদি পুরবের মাসের ডিমান্ড চার্জ কিংবা মিটার ভাড়া বকেয়া থাকলে সেটা কেটে নিবে । এরপর একই মাসে পরবর্তি যে কোন রিচার্জে ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া কাটা হবে না ।
বাসায় বসে কিংবা অনলাইনে কার্ড রিচার্জ করা যাবে কি ?
উত্তরঃ– ডিপিডিসি সরবরাহ করা প্রীপেইড কার্ড গুলো ক্ষেত্র বিশেষ রিচার্জ করা যাবে না , সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দপ্তরে গিয়ে রিচার্জ করতে হবে তবে স্মার্ট কার্ড গুলো Mobile Banking এর মাধ্যমে রিচার্জ করা যাবে । উপরে আমরা সেই পদ্ধতি বর্ননা করেছি । এছাড়াও আপনি চাইলে নিকটস্থ ব্যাংক গুলোতেও যোগাযোগ করতে পারেন । কিছু ব্যাংক কিছু এলাকার জন্য নির্দিষ্ট করা থেকে ।
রাতের বেলা কিংবা যেকোন ছুটির দিনে মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে কি ?
উত্তরঃ– রাতের বেলায় কিংবা ছুটির দিনে মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবে না । মিটারে এই সময়টা ফ্রেন্ডলি আওয়ার হিসেবে উল্লেখ করা আছে, এই সময়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যাবহার করা হবে তা মিটারে নেগেটিভ হিসেবে জমা থাকবে । পরবর্তি তে টাকা রিচার্জের পরে ঐ নেগেটিভ চার্জ টুকু কেটে নিবে ।
Emergency Credit কিভাবে Active করতে হয় ?
উত্তরঃ– স্মার্ট কার্ড মিটারের ক্ষেত্রে ঐ মিটারের ইউজার কার্ড টি মিটারে প্রবেশ করালে Emergency Credit Active হয়ে যাবে এবং কি প্যাড মিটারের ক্ষেত্রে Any Key অথবা Enter Key Press করলে Emergency Credit Active হয়ে যাবে ।
Over Load এর কারণে মিটার বন্ধ হলে তা কিভাবে জানা যাবে এবং তখন করনীয় কি ?
উত্তরঃ– Over Load এর কারণে মিটার বন্ধ হওয়ার পুর্বে এলার্ম দিবে এবং Load কমানো না হলে মিটার টি কিছু সময় পর পর পাঁচবার ট্রিপ করবে । তারপরেও যদি Load কমানো না হয় তাহলে মিটার টি ৩০ মিনিটের জন্য অফ হয়ে যাবে । ৩০ মিনিট পর Load কমানো না হলে পুনরায় পুর্বের মত এলার্ম দিবে ।
এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা, আশা করই সবাই কম বেশি উপকৃত হয়েছেন । আমাদের আজকে আলোচনায় কিছু বিশয় উপক্ষিত হয়েছে, যা আমরা আগামী আলোচনায় পুরন করার চেষ্টা করব। আপনাদের সকল পরামর্শ , অভিযোগ আমাদের কে লিখতে পারেন নিচের কমেন বক্সে । আপনাদের পরামর্শ নিয়েই আমরা আমাদের এই বীরবাংলা কে এগিয়ে নইয়ে যাবো ।
ধন্যবাদ
আপনি নিচের যেকোন বিষয়সহ আর কোন কোন বিষয়ে জানতে চান, কমেন্টে জানিয়ে দিন। আমাদের বিশেষজ্ঞ আপানাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মিটার যদি টাকা দিয়ে পরিশোধ করে ক্রয় করা হয় তাহলে প্রতিমাসে কেন মিটার ভাড়া দিতে হবে?
মিটারের ভাড়া পাঁচ বছর মেয়াদে গ্রাহকদের থেকে কিস্তিতে কেটে রাখ হয়। তবে কেউ যদি নিজে মিটার কিনে বসান, সেজন্য মিটার ভাড়ার খরচ দিতে হবে না।
মিটারের এই খরচ এর ধারণক্ষমতা হিসেবে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন সিঙ্গেল ফেজের মিটারের জন্য গ্রাহককে মাসে ৪০ টাকা এবং থ্রি ফেজ মিটারের জন্য মাসে ২৫০ টাকা দিতে হয়।
শুধুমাত্র মিটার ভাড়া ছাড়া বাকি চার্জগুলো পোস্ট পেইড বিলেও কাটা হতো বলে জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন।
নষ্ট কার্ড পরিবর্তনের ফি কত?