পশ্চিমবঙ্গ হল পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য যার পূর্ব সীমায় রয়েছে বাংলাদেশ ৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর হাজারো ভ্রমণ পিপাসু লোকজন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে আসে। পর্যটন শিল্পকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গের সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করছে। পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান গুলিতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সুবিধা চালু করছে যেমন টিকিট কাটা এখন আরও বেশি সহজ করেছে।
দর্শনীয় স্থানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা যাতে সহজেই টিকিট পেতে পারে ও ঘোরতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তর।
দেখার জন্য রাজ্যটিতে আছে বহু সুন্দর সুন্দর জায়গা৷ সম্ভাব্য বিকল্পগুলির একটি বিপুল সম্ভারের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া আপনার পক্ষে কঠিন হবে৷ এখানে, পশ্চিমবঙ্গে কী কী দেখতে পারেন সেই সর্বোৎকৃষ্ট সম্ভারগুলির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হল৷
পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান রচনা
আপনার যারা পরবর্তী ঘোরার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে যেতে চান তাদের জন্য অনুচ্ছেদটি সজানো হয়েছে। আপনার পরবর্তী গন্তব্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কিছু দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হল।
১। দার্জিলিং
দার্জিলিং হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের একটি অনবদ্য দর্শনীয় স্থান। ইংরেজদের শাসনকালে শৈল-শহর দার্জিলিং ছিল ভারতে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী৷ দার্জিলিং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া রোমাঞ্চকর দৃশ্যগুলির দ্বারা বেষ্টিত চা-বাগানগুলি৷ তুষারাবৃত পর্বত-শৃঙ্গ দেখতে এবং সুস্বাদু স্ট্রিট ফুডগুলির মজা নিতে পারেন৷ ভারতের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হিল স্টেশন এখানে অবস্থিত। চা বাগান, লাল রডোডেনড্রন, সাদা ম্যাগনোলিয়া, বিভিন্ন প্রজাতির পাখী, ঔপনিবেশিক যুগের ঘরবাড়ি এবং ট্রয় ট্রেনের সকল প্রকার সৌন্দার্য উপভোগ করতে পারবেন।
২। কালিম্পং
কালিম্পং উত্তরবঙ্গে অবস্থিত একটি পার্বত্য অঞ্চল। কালিম্পং এর ছোট হলেও সুন্দর শহরটি হল ভ্রমণকারীদের স্বপ্ন কারণ বিস্ময়কর আতিথ্যের মধ্যেও ব্যতিক্রমিভাবে রাজ্যের সাধারণ টুরিস্টদের কম উপস্থিতি৷ যে সকল পর্যটক পাহাড় সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দার্য উপভোগ করতে চান তারা এই জায়গাটি পছন্দ করবেন। উষ্ণ আবহাওয়া এবং বেলো পাহাড়, ক্যাকটাস নার্সারি, মরগান হাউস, মঙ্গল ধাম, জাদুঘর, সায়েন্স সিটি, গলফ কোর্স, হনুমান টপ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির এখানে দেখার মত কিছু জায়গা।
৩। শিলিগুড়ি
উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার” নামে সুপরিচিত, পার্বত্য শহর শিলিগুড়ি হল পশ্চিমবঙ্গে প্রধান ভ্রমণ গন্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম ৷ পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। শিলিগুড়ির খ্যাতি প্রধানত চা, কাষ্ঠ ও পর্যটন শিল্পের জন্য। শিলিগুড়ি শুধু রোমান্টিক গন্তব্য নয়, এখানে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, জঙ্গল, মন্দির এবং অন্যান্য আকর্ষণ রয়েছে যেগুলি শিলিগুড়িতে ভ্রমণের সময় দেখতে পারেন।
৪। কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে কলকাতা অন্যতম। কলকাতা হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের রাজধানী। যা ‘সিটি অফ জয়’ নামে পরিচিত। ভারতের পুরাতন শহরের মধ্যে কলকাতা সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া ও অতীতের ঐতিহ্য খুব সুন্দর ভাবে ধরে রেখেছে।কলকাতার দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, ব্যাণ্ডেলচার্চ, চিড়িয়াখানা, তারামণ্ডল, হাওড়াব্রিজ, হুগলীসেতু, কফি হাউজ, রাজভবন, ময়দান আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
৫। দিঘা
দীঘা হল পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে জনপ্রিয় একটি জায়গা। দিঘা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। দীঘা পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সমুদ্র কেন্দ্রীক ভ্রমণ কেন্দ্র। ৭ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্রতট এক পাশে গভীর সমুদ্র অন্যপাশে ঝাউ গছের অগভীর জঙ্গল।দিঘায়, নতুন দিঘা বিচ, তালসারি বিচ, এবং শঙ্করপুর বিচের মত সমৃদ্ধ বিচগুলিতে।
৬। সুন্দরবন
পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সুন্দরবন খুবই আকর্ষণীয় একটি জায়গা। সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। সুন্দরবন বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবন সুখ্যাতি অর্জন করেছে।ভারতের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভগুলির মধ্যে একটি এবং প্রচুর গাছ রয়েছে। সুন্দরবনের খুব কাছেই ঘোড়ারা দ্বীপ অথবা মারিচঝাঁপি দ্বীপ পরিদর্শন করতে পারেন। এটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
৭। মুর্শিদাবাদ
যদি আপনি শিল্পকলা এবং ইতিহাসের একজন প্রকৃত সমঝদার হন, তাহলে স্থানটির ঐতিহাসিক বৈপরীত্যের প্রকটতার কারণে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ হল একেবারে সর্বোৎকৃষ্ট স্থান৷ মুর্শিদাবাদে অবস্থানকালীন, আপনি ওয়াসিফ মঞ্জিল অথবা হাজারদুয়ারী প্রাসাদ দেখতে যেতে পারেন আপনার এবং পরম্পরাগত শিল্প এবং সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যের বিষয়ে আপনার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য৷
৮। কোচবিহার
পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান হিসেবেও বিবেচনা করা হয় কোচবিহারকে। ১৯৪৯ সালের ২৮ শে আগস্টের আগে পর্যন্ত কোচবিহার রাজা দ্বারা শাসি। সুন্দর প্রকৃতি, সমাজের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে শহরটিকে ‘রাজার শহর’ বলা হয়। কোচবিহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় স্থান হল রাজবাড়ি। এটি লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের পরে ডিজাইন এবং মডেল করা হয়েছিল। কোচবিহারের অন্যান্য স্থানগুলি হল মদনমোহন বাড়ি, সাগরদিঘি, বোরোদেবী বাড়ি, মধুপুর ধাম ইত্যাদি। কোচবিহারে একটি বিখ্যাত অনুষ্ঠান হল রাসমেলা, মেলাটি উত্তর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় মেলা।
৯। শান্তিনিকেতন
পশ্চিমবঙ্গ শান্তিনিকেতনের নাম সবার উপরের দিকে আসবে।১৮৬৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব স্থান হিসেবে পরিচিত এই জায়গা’টি। এখানে দেখার জায়গাগুলো হল শান্তিনিকেতন ভবন, উপাসনা মন্দির, তিন পাহাড়, নোটুন বাড়ি, সাল বিধি, আম্রকুঞ্জ ইত্যাদি। শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে বিখ্যাত অনুষ্ঠান হল পৌষ মেলা যা মূলত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
১০। মেদিনীপুর
পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের নগরী বলা হয় মেদিনীপুর জেলাকে। পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত সুন্দর ও নিরিবিলি দর্শনীয় স্থান। ঘন শাল বন রয়েছে যা প্রকৃতিপ্রেমীদের সর্বদা তার রহস্যময় রাজ্যে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন মন্দির ও মসজিদ। এই জায়গাটি বিশেষভাবে বিখ্যাত মুক্তি যোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধের জন্য। এখানকার মিষ্টি’ও যথেষ্ট বিখ্যাত এছাড়াও কাজুবাদাম’ এর জন্য মেদিনীপুর বিখ্যাত।
সারা ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থানের জন্য খুবই বিখ্যাত। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলাতে দর্শনীয় স্থান আছে আপনার যে সকল দর্শনীয় স্থান পছন্দের শীর্ষে আছে সেগুলি ভ্রমণ করতে পারেন।