ভারতে পর্যটকদের কাছে এখন প্রথম সারির পছন্দ তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন। পশ্চিমবঙ্গ আকর্ষণীয় পর্যটন স্থল পরিদর্শনের চমৎকার সুযোগ পেতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে সারা বছর ধরে প্রচুর পর্যটকদের ভিড় হয়, তারা এই পর্যটন স্থলগুলির ব্যাপক সমাগম তাদেরকে শিহরিত করে তোলে। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনের আকর্ষণ আরও বাড়াতে, ক্রমাগত নতুন উদ্যোগ নিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে নিও-গথিক, ক্যারোক, নিও-ক্ল্যাসিকাল, প্রাচ্য ও ইসলামি শৈলীর প্রচুর অট্টালিকা ও অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে দিয়ে এই রাজ্যের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যগত প্রথা প্রতিফলিত হয়, যা আধুনিক যুগের ক্ষেত্রে এক আলোড়নের সৃষ্টি করে।প্রতি বছর কলকাতা, দার্জিলিং, সুন্দরবন ইত্যাদি সব জায়গাগুলোতে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে যায়।
পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থান রচনা
সমৃদ্ধ বৈচিত্র, দর্শনীয় স্থান, প্রাকৃতিক এক বিস্ময় হল পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় চমৎকার পর্যটন স্থান আছে। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই রাজ্যটি আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।
১। দার্জিলিং
পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক জায়গার মধ্যে দার্জিলিং শহরটি অন্যতম। দার্জিলিং শহরের সোন্দার্যের কারণে পাহাড়ের রানী বলা হয়। শহর নিম্ন হিমালয়ের মহাভারত শৈলশ্রেণীতে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭,১০০ ফুট (২,১৬৪.১ মি) উচ্চতায় অবস্থিত। দার্জিলিং তার ভূ-প্রাকৃতিক সোন্দর্য, চা ও দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের জন্য বিখ্যাত। কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের চিত্তাকর্ষক সূর্যোদয় দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করেন।
২। চন্দননগর
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত চন্দননগর হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে হুগলি জেলার মহকুমা শহর। কলকাতা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে খলিসানি, বোরো ও গোন্দলপাড়া নামক তিনটি প্রাচীন মৌজা এবং গৌরহাটির ছিটমহল সমেত নয় বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে শহরটি গঠিত। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড শহরের মধ্য দিয়েই হাওড়া-ব্যান্ডেল রেলপথের উপর মানকুন্ডু ও চন্দননগর রেল স্টেশন অবস্থিত। বস্ত্রশিল্প, রেশম, শোলা, ঝিনুক প্রভৃতির সুপ্রতিষ্ঠিত কুটির শিল্প গড়ে উঠেছিল চন্দননগরে। এ শহরে অনেক অতীত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
৩। বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুর পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। কলকাতা থেকে আনুমানিক ১৩০ কিমি দূরে অবস্থিত বিষ্ণুপুর, সর্বাধিক দর্শনীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান। ১৭ এবং ১৮ শতকের বিভিন্ন উপসানালয় এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনা ও এখানের পরিবেশ আপনাকে বিমোহিত করবে।
৪। কালিম্পং
কালিম্পং পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি পূর্ব ভারতীয় পাহাড়ি শহর। তিস্তা নদীর উপরে একটি শৈলশিরার উপর অবস্থিত, শহরটি প্রায় ১২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি জেলা হল কালিম্পং। অতীতে ভারত ও তিব্বতের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই শহর। বিভিন্ন কারণে কালিম্পং শহরটি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক জায়গায় পরিনত হয়েছে।
৫। কালনা
কালনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ববর্ধমান জেলার একটি ঐতিহাসিক শহর। শহরটি ভাগীরঘীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত | অন্বিকা কালনা নামে আরও বেশি পরিচিত, এর রয়েছে অসংখ্য ঞ্ঁতিহাসিক নিদর্শন, ষেমন রাজবাড়ি (প্রাসাদ), এবং ১০৮ টি শিব মন্দির রয়েছে। অন্বিকা কালনা এক সময়ে তাশ্রলিপ্ত রাজ্যের একটি সীমান্ত শহর ছিল। সেই সময় শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই শহরে একটি নৌ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮ শশতকের শেষদিকে বর্ধমানের মহারাজদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই শহরটি শীর্ষে পৌইছেছিল, মহারাজগন বিভিন্ন ঐহাতিহাসিক স্থাপনা নির্মান করেছিল।
৬। কর্ণগড়
কর্ণগড় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি গ্রাম। কর্ণগড়ের রাজত্বকৃত রাজবংশের মধ্যে রয়েছে রাজা লক্ষণ সিংহ, রাজা শ্যাম সিং, রাজা ছোটু রায়, রাজা রঘুনাথ রায়, রাজা রাম সিংহ, রাজা যশবন্ত সিং রাজা অজিত সিং এবংরানী
শিরোমনি। কর্ণগড়ের শেষ রাজা রাজা অজিত সিং নিঃসন্তান মারা যান। তাঁর সম্পত্তি তাঁর দুই রানী, রানী ভবানী এবং রানী শিরোমণির হাতে চলে যায়। রাজপালের শাসন আমলে রাজাগণ অনেক প্রসাদ ও স্থাপনা নির্মান করেছে।
৭। মুর্শিদাবাদ
মুর্শিদাবাদ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। মুর্শিদাবাদ হুগলি নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার গৌড় রাজ্য এবং বঙ্গ রাজ্যের অংশ ছিল। রিয়াজ-উস-সালাতিন এই শহরের প্রাথমিক বিকাশকে মখসুস খান নামে একবণিকের কাছে জমা দেয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ তন্ত্র নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নগরটির পতন শুরু হয়েছিল। নবাবকে মুর্শিদাবাদের নবাব নামে পরিচিত জমিদার হিসাবে মর্ধাদাবান করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা কোষাগার, আদালত এবং রাজৰ অফিস কলকাতায়
৮। নবদ্বীপ
নবদ্বীপ একসময়ে রাজনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণআসনছিল এবং বল্নাল সেনের নেতৃত্বে বাংলার রাজধানী এবং পরবর্তীকালে সেন সামাজ্যের রাজা লক্ষণ সেনরাজা ছিলেন। ভারতের এই বিখ্যাত শহর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলায় অবস্থিত। রাজা লক্ষণ সেন অনেক সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। ১২০২ সালে নবদ্বীপ বখতিয়ার খিলজি দ্বারা আক্রমিত হয়েছিল। এই বিজয় বাংলায় মুসলিম শাসনের পথ সুগম করেছিল।
৯। গৌড়
গৌড় প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল।গৌড় একটি পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক শহর। শহরটি মালদা জেলায় অবস্থিত।গৌড় ছিল প্রাচীন বাংলার তিনটি রাজবংশের রাজধানী।বেশ কয়েকটি রাজ্যের অধীনে গৌড় ছিল বাংলার রাজধানী শহর। সপ্তম শতাব্দীতে গৌড় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা শশাঙ্ক। সেন রাজবংশের সময় গৌড় লখনৌতি নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এটি ১২০৪ সালেদিল্লি সুলতান দেড় অন্তগ ছিল।একসময় গৌড়ের ক্ষমতার বিকল্প আসন ছিল, বাংলার তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে রয়েছে মসজিদ জামে মসজিদ এবং নদীর ওপারে অবস্থিত নিমাসারি টাওয়ার।
১০। মুর্শিদাবাদ
মুর্শিদাবাদ হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক শহর।মুর্শিদাবাদ হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। অঞ্চলটি প্রাটীন বাংলার গৌড় রাজ্য এবং বঙ্গ রাজ্যের অংশ ছিল। আঠারো শতকে বাংলার নওয়াবদের আবাসস্থল ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ তন্ত্র নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নগরটির পতন শুরু হয়েছিল। ব্রিটিশরা কোষাগার, আদালত এবং রাজঅফিস কলকাতায় স্থানান্তরিত করে। মুর্শিদাবাদের আম আর মিষ্টির খ্যাতি রয়েছে। খাগড়ার ছানাবড়া, আজিমগঞ্জের বরফি সন্দেশ, রঘুনাথগঞ্জের রসকদম্ব, ধুলিয়ানের খোয়া চমচম, কমলাভোগ, ক্ষীরমোহন ইত্যাদির স্বাদ নিতে হবে। মুর্শিদাবাদের সিল্ক বিখ্যাত।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। প্রতি বছর দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে যায় এসকল ঐতিহ্যবাহী রাজ্যটিতে। আশাকরি আমাদের উপস্থাপন করা পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক স্থান গুলি পরিদর্শন করে ইতিহাস সম্পর্কে আরো ভাল জানতে পারবেন।