নড়াইল জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ ও ভ্রমণ গাইড

নড়াইল জেলার নাম শুনলেই প্রথমেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম মাথায় আসবে। কিন্তু  মাশরাফি ছাড়াও নড়াইলে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছে- বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএমসুলতান,জনপ্রিয় বাঙ্গালী  ঔপন্যাসিক নিহার রঞ্জন গুপ্ত,বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ এর সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ  জন্মগ্রহন  এই  নড়াইল  জেলায়।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ নড়াইল জেলা শ্যামল সবুজ প্রান্তর, ইছামতি, চাচুড়ী সহ অসংখ্য বিলের জলধারা, মধুমতি, চিত্রা আর নবগঙ্গা নদী বেষ্টিত খুলনা বিভাগের একটি জেলা। যাত্রাগান, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গাজিরগান, বৃষ্টির গান, নৌকাবাইচ, হাডুডু খেলা, লাঠি খেলা, ষাড়ের লড়াই, পিঠাগুলি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে উল্লেখযোগ্য এই জনপদ।

নড়াইল জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

নড়াইল জেলার  দর্শনীয় স্থান সমূহঃ

১। সুলতান কমপ্লেক্স, নড়াইল

২।বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স

৩।অরুণিমা কান্ট্রিসাইড এন্ড গলফ রিসোর্ট

৪। নিরিবিলি পিকনিক স্পট

৫।৭১-এর বধ্যভূমি, নড়াইল

৬।অরুনিমা ইকোপার্ক

৭।বাঁধা ঘাট

৮।স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট

 আসুন জেনে নেওয়া যাক  নড়াইল জেলার বিখ্যাত জায়গা সম্পর্কেঃ

১।সুলতান  কমপ্লেক্সঃ

বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম. সুলতানের বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে সুলতান কমপ্লেক্স (Sultan Complex)। চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকার মনোরম পরিবেশে এই কমপ্লেক্সের অবস্থান। প্রায় ২৭ একর জায়গার উপরে প্রতিষ্ঠিত এ কমপ্লেক্সের ভেতরেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শিল্পীসমাধি সৌধের সামনেই রয়েছে সুলতানের আদি বাসস্থানের খানিক অংশ। এর পিছনে দ্বিতল আধুনিক ফটোগ্যালারিতে সুলতানের দুর্লভ কিছু চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলি সংরক্ষণ করে রাখা আছে। সুলতানের দুর্লভ সব চিত্র কর্মগুলি দেখার জন্য প্রতিদিনই গ্যালারি খোলা থাকে।

দুর্লভ নানা প্রজাতির গাছের সমারহ ও লাল সিরামিকে মোড়া এই কমপ্লেক্স শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ আর অপূর্ব সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন।সুলতান শিশুদের ছবি আঁকানো শিখানোর জন্য নদীতে তৈরী করেছিলেন বজরা “শিশু স্বর্গ”। শিল্পীর তৈরী সেই শিশুস্বর্গটি কমপ্লেক্সের পাশেই চিত্রানদীর ধারে সংরক্ষণ করা হয়েছে । এই কমপ্লেক্সটির সংলগ্ন এলাকাতে শিল্পীর দেয়া নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিশুস্বর্গ – যেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানো হয় ।

২।অরুণিমা রিসোর্টঃ

৫০ একর জমি নিয়ে ২০০৯ সালের ১৪ মে অরুনিমা ইকো পার্ক ও রিসোর্ট (Arunima Echo Park) যাত্রা শুরু হয়। ছোট বড় মোট ১৯টি পুকুর আছে এখানে। একটি বড় লেক আছে। এর মাঝে একটি কৃত্তিম দ্বীপ আছে। দ্বীপের মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, কটেজ ও কনফারেন্স রুম আছে।

কনফারেন্স রুম গুলোতে এক সঙ্গে ২০০ হতে ৭০০ মানুষ বসতে পারে। বড় অনুষ্ঠান আযোজনের জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাদা বোর্ড সহ সবই আছে এখানে। রাত্রিযাপনের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে এখানে। এস এম সুলতান হল, রয়েল কজেট, মধুমতি নবগঙ্গা কটেজ ও দ্বীপ কটেজ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর আবাসস্থল তৈরী করা হয়েছে অতিথিদের জন্য। বিভিন্ন ধরনের মানুষের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা।

সময় কাটানের জন্য আছে গলফ, টেনিস, টেবিল টেনিস, দাবা, লুডু, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেট বল প্রভৃতি খেলার ব্যবস্থা। বিনোদনের জন্য রয়েছে কয়েক প্রকারের নৌকা, ঘোড়ার গাড়ী প্রভৃতি। এছাড়াও পার্কের ভেতরে রয়েছে নিজস্ব ভ্যান ও রিক্সা। এই সব ভ্যান, রিক্সায় চড়েও অতিথিরা পার্কটি ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন। লেকের পাড়ে বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ ও গাছে ঝোলানো দোলনা। লেকের উপর রয়েছে ৪টি বাঁশের সেতু আছে।

রিসোর্টের ভেতরে পুকুর ও লেকের পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ আছে। বাচ্চাদের জন্যেও রয়েছে এ আনন্দের ব্যবস্থা। অল্প পানিতে নেমে মাছ ধরতে পারবে তারা। এর জন্য ৩০ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হয়।লেকের চারপাশে শত শত বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ রয়েছে। ফুল ও ঔষধী গাছের সংখ্যাও রয়েছে প্রচুর সংখ্যক। আছে ঝাউবন ও পাহাড়। শীতকালে এখানে দেশী বিদেশী নানা প্রজাতির অতিথি পাখি বেড়াতে আসে। তাদের কলকাকলিতে সর্বদা মুখরিত হয়ে থাকে রিসোর্টটি।

৩।নিরিবিলি পিকনিক স্পটঃ

দক্ষিনবঙ্গের অন্যতম চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র হল নিরিবিলি পিকনিক স্পট । প্রায় ১৪ একর জায়গা নিয়ে নড়াইল জেলার লোহগড়া থানার রামপুরে অবস্থিত বনভোজন কেন্দ্র নিরিবিলি।দর্শনার্থীদের জন্য নিরিবিলি পিকনিক স্পটে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা , শিশু পার্ক , এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী গ্যালারি, দোলনা, রোপওয়ে ও মিনি ট্রেন, পুকুরে নৌকা চালানোর সুযোগ, ফুল ও ফলের বাগানসহ বনভোজন ও অবকাশ যাপনের সব ব্যবস্থা।

নিরিবিলি পিকনিক স্পটটির যাত্রা শুরু হয় দিতে ১৯৯১ সালে। এরপর গত প্রায় দুই দশকে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে চিত্ত-বিনোদনের নানা উপকরণ। এখানে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীদের উপযোগী ১২টি রাইড যার মধ্যে রোপওয়ে, ট্রেন, ওয়াটার বোর্ড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।এ ছাড়া রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য।

আর পিকনিক স্পট লাগোয়া মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে হরিণ, কুমির, ভাল্লুক, অজগরসহ নানা জাতের পশুপাখি এবং বিরল প্রজাতির পেলিকন পাখি। এ ছাড়া এখানকার আর একটি চমত্কার সংগ্রহ হচ্ছে শরণখোলা থেকে সংগ্রহ করা ৭০ ফুট লম্বা একটি তিমি মাছের কঙ্কাল।

৪।স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পটঃ

কাঠের তৈরি ঘর, শ্যালেট, বোটহাউজ, নৌকার উপর ভাসমান কটেজসহ থাকার জন্য রয়েছে আধুনিক সব কটেজ। এছাড়াও আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ চিত্রা কনফারেন্স হল ও এস এম সুলতান লাউঞ্জ নামক দুটি কনফারেন্স রুম রয়েছে।

স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট

ধর্ম পালনে নামাজ আদায়ের জন্য রয়েছে সুন্দর ব্যবস্থা। রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা, উৎপাদিত শাকসবজি, মাছ,ফলমূল সহ ফ্রেশ ফুড অতিথিদেরকে সরবরাহ করছে কর্তৃপক্ষ । রয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের এফিলেশন প্রাপ্ত গলফ ক্লাবে গলফ খেলার ব্যবস্থা। এছাড়াও আর্চারি, ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডিসহ নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা।

৫।ঔপন্যাসিক নিহার রঞ্জন গুপ্ত এর বাড়িঃ

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র কাহিনীকার ডা: নীহাররঞ্জন গুপ্তের পৈত্রিক নিবাস নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলার ইতনা গ্রামে। প্রায় ৭০ শতক জমির ওপর নীহাররঞ্জন গুপ্তের পৈত্রিক বাড়িটি অবস্থিত। বাড়িতে এখনোও একটি দ্বিতল বাড়ি, পুকুরসহ অসংখ গাছপালা রয়েছে। বাড়ির দুই দিকে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ।

নীহার রঞ্জন গুপ্ত ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতা শহরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯০ দশকে ডাক্তার নীহার রঞ্জন গুপ্তের পৈত্রিক বাড়িতে ইতনার চিত্রশিল্পী আলী আজগর রাজা ও শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস ‘শিশু স্বর্গ-২’ গড়ে তোলেন এবং এটির উদ্বোধন করেন বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী প্রয়াত এস এম সুলতান।

Leave a Comment