দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ও ভ্রমন খরচ! দার্জিলিং ট্যুর প্ল্যানের বিস্তারিত

দার্জিলিং যাকে কিনা বলা হয় ” Queen of the Himalayas “।কেনোই বা বলবে না হিমালয়ের কোলঘেসে গড়া ওঠা সুন্দর একটি শহর দার্জিলিং, যেখান থেকে আপনি সূর্যদয়ের সময়কার হিমালয় কে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও রয়েছে সবুজে ভরা পাহাড় যার গায়ে চাদরের মতো জড়িয়ে আছে চা গাছ।ভারতের দার্জিলিং ভ্রমণ যারা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বা যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুবই উপকারে আসবে। অনেকে মনে করেন যে ভারতের দার্জিলিং যেতে মনে হয় অনেক টাকা লাগে। যারা এই সকল চিন্তা করছেন তাদের ধারণা কিন্তু ভুল। আপনাদের ভুল ধারণা থেকে আমি অত্যন্ত সহজ করে বিস্তারিত গাইড লাইন তুলে ধরব। আপনারা মনোযোগ দিয়ে আমার এই ভারতের দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ভালো ভাবে পড়বেন তাহলে আপনাদের কাছে খুবই সহজ এবং সকল ধরণের ধারণা পরিস্কার হয়ে যাবে।

ঢাকা টু দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ও ভ্রমন খরচ

ঢাকা থেকে  যাত্রাঃ
বেশির ভাগ গাড়ি রাত ৮টায় ঢাকা থেকে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সকাল ৬-৭টার মধ্যেই বুড়িমারী সীমান্তে আপনাকে পৌঁছে দেবে। সীমান্তে পৌঁছে যাওয়ার পর সকালের নাশতা বাংলাদেশেই সেরে ফেলুন, তারপর দুই দেশের ইমিগ্রেশন (বাংলাদেশ ও ভারতের) পাড়ি দিন। আপনি যখন চ্যাংড়াবান্ধায় পৌঁছে যাবেন, অল্প একটু পথ পায়ে হেঁটে বাসে উঠতে পারবেন।
 বাস ভাড়াঃ 
এসি বাস বা পরিবহনের মধ্যে এস আর ট্র্যাভেলস ভাড়া ৮০০ টাকা, যদিও শ্যামলী শিলিগুড়ি পর্যন্ত ভাড়া ১৫০০ টাকা নেয়।
দার্জিলিং পৌঁছানোর পরঃ
আপনাকে মাথায় রাখতে হবে দাজিলিং রাত ৭ টা ৮টার মধ্যে পৌছাতে হবে। কারন রাত ৯টা ১০টার মধ্যে দাজিলিং এর সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়।
এবারের গন্তব্য ময়নাগুড়ি। বাসে যেতে সময় লাগবে আধঘণ্টা। জনপ্রতি খরচ হবে ২০ রুপি। সেখান থেকে এবিএসটিসি বাসে চড়ে পৌঁছাতে হবে শিলিগুঁড়ি। জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ৮০ রুপি। শিলিগুঁড়ি পৌছে যদি মোবাইল সিম দরকার থাকে তাহলে এখান থেকে কিনে নিন। তার পর আবার যাত্রা শুরু করুন দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। শিলিগুঁড়ি জংশন থেকে জিপে চড়ে দার্জিলিং যেতে হবে। সেখানে পৌঁছাতে লাগবে ৩/৪ ঘণ্টা। অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই পথ শেষ হবে। রির্জাভ জিপ ভাড়া পড়বে ২০০০ টাকা এবং রির্জাভ জিপে যেতে পারবেন ৮/১০ জন অথবা শেয়ার জিপে জনপ্রতি ভাড়া নিবে ২০০/২৫০ রুপি।
হোটেল বুকিংঃ
১০০০ থেকে ১৫০০ রুপির মধ্যেই আপনি খুব ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন দার্জিলিংয়ে রাত ৮টার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং হোটেল বুকিং এবং রাতের খাওয়া ৮টার মধ্যেই শেষ করতে হবে।

দার্জিলিং ট্যুর প্ল্যানঃ

 প্রথম দিন
রাত ৩টায় ঘুম থেকে উঠে টাইগার হিলের উদ্দেশে রওনা দিন। সূর্যোদয়ের হাসির চিকিমিকি দেখতে পাবেন হিমালয়ের বরফ ছুঁয়ে। তারপর, সারাদিন বাতাসিয়া লুপ, রক গার্ডেন ঘুম স্টেশন, চিড়িয়াখানা (বেশ সুন্দর), টি গার্ডেন, মল রোড ঘুরতে থাকুন। দার্জিলিংয়ে বেশ কিছু মসজিদ রয়েছে, বড় দুটি মসজিদ অবশ্যই দেখার চেষ্টা করবেন।
 দ্বিতীয় দিন
কাঞ্চন জং এর উদ্দেশে রওনা দিন, দার্জিলিং শহর থেকে খানিকটা দূরে আরেকটা শহর, যেখানে প্যারাগ্লাইডিং করা যায়। আর হিমালয়ের একটা পাশ দেখা যায়।
 তৃতীয় দিন
আপনি চাইলে পাহাড় আর লেকে ঘেরা ছোট্ট শহর মিরিক ঘুরে আসতে পারেন। আবার চাইলে দার্জিলিং থেকেও মিরিক ঘুরে আসতে পারেন। অথবা মিরিকেও থাকতে পারেন। যেহেতু মিরিক থেকে শিলিগুঁড়ি কাছাকাছি, তাই আপনার মিরিকে থাকাটাই ভালো।মিরিকে ঘোরার জন্য লেক আর মোটেলের টপভিউ টাই অসাধারণ। সুতরাং একদিনের বেশি অবস্থান করার প্রশ্নই ওঠে না।
চতুর্থ দিন
সকাল সকাল শিলিগুঁড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিন। মিরিক থেকে শিলিগুঁড়ি আসতে মাত্র দুই ঘণ্টা লাগে আর শিলিগুঁড়ি থেকে সীমান্তে আসতে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে। মনে রাখবেন, সন্ধ্যা ৬টার পর সীমান্তের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
এছাড়া আপনার ইচ্ছা হলে টয় ট্রেন করে ঘুম স্টেশন যেতে পারেন।। দার্জিলিং গিয়ে টয় ট্রেনে চাপার মজাই আলাদা।। ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিং এর রোপ ওয়ে।। যেতে পারেন দার্জিলিং চিড়িয়াখানা।। টাইগার হিলে যেতে পারেন সূর্যোদয় দেখতে।। যাওয়ার ও আসার পথে পুরো গাড়ি বুক করলে একটা সাজেশন দিচ্ছি: যাওয়ার সময় শিলিগুড়ি থেকে মিরিক, নেপাল বাজার, লেপচা জগৎ ইত্যাদি দেখে বিকেলে পৌঁছে যান দার্জিলিং।। ফেরার সময় ঘুম, কার্শিয়াং ইত্যাদি দেখে ফিরতে পারেন শিলিগুড়ি।। এতে সময়/টাকা বাঁচবে ও অনেক কিছু দেখে নিতে পারবেন।
 সতর্কতাঃ
  • পাসপোর্ট সব সময় সাথে রাখবেন।
  • ভারতের লোকাল ট্রেন প্রতি স্টেশনে ২৫ থেকে ১২০ সেকেন্ড দাঁড়ায়। সেকেন্ডে না বললে হিসাব মেলানো কষ্টকর। এর মধ্যে লোক নামবে এমন উঠবে। তাই লোকাল ট্রেনে মাত্রাতিরিক্ত সাবধানতা।
  • এক্সপেস ট্রেনগুলো ৫ থেকে ১০ মাঝে মধ্যে সিগন্যাল না পেলে ১৫ মিনিটও থামে।
  • দার্জিলিং যেয়ে যেখানে সেখানে ময়লা তো দূরে থাক প্রসাব করার কথাও ভাববেন না। প্রচুর পাবলিক টয়লেট আছে। ওরা পাহাড়কে অনেক ভালোবাসে, চাইনা বাংলাদেশের মান ওখানে ক্ষুন্ন হোক।
  • ভারতের কোনো নাগরিক কে ওদের পতাকা নিয়ে প্রশ্ন বা অপমান করবেন না।
  • বিপদে পড়লে পুলিশ কে বলবেন, কোনো সমস্যা হবেনা।
  • ওপেন রাস্তায়  সিগারেট খাবেন না। দার্জিলিং এ তো কোনোভাবেই না।
কিওয়ার্ডঃ
দার্জিলিং ট্যুর প্যাকেজ,দার্জিলিং ভ্রমণ স্থান,দার্জিলিং কিসের জন্য বিখ্যাত,দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ,দার্জিলিং এর খাবার,কলকাতা টু দার্জিলিং ট্রেন ভাড়া কত,ঢাকা টু দার্জিলিং ট্রেন ভাড়া কত

2 thoughts on “দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড ও ভ্রমন খরচ! দার্জিলিং ট্যুর প্ল্যানের বিস্তারিত”

  1. ঢাকা থেকে দার্জিলিং পযন্ত কত খরচ হতে পারে, সলো ট্যুর দিলে?

    Reply

Leave a Comment