ডেঙ্গু জ্বর একটি অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে।
ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যায়। এপ্রিল মাসে এই হাড় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাধারণত হ্রাস পেতে দেখা যায়। ডেঙ্গু রোগ প্রতি বছর রাজধানীতে বেশি হয়। এই রোগের প্রধান সমস্যা হল রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়।
অনুচ্ছেদটিতে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য তুলে ধরব। আশাকরি অনুচ্ছেদটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ডেঙ্গু রোগের কারণ
শুরুতে আমাদের জানতে হবে ডেঙ্গু রোগ কি কি কারণে হয়। ডেঙ্গু থেকে বাচতে হলে সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই। ডেঙ্গু হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে ডেঙ্গু থেকে অনেকটা সচেতন হওয়া যায়।
স্ত্রী এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু রোগের একমাত্র বাহন হল স্ত্রী এডিস মশা। তবে এডিস মশা কামড়ালেই যে ডেঙ্গু জ্বর হবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তরা এমন মনে করে না। ডাক্তারের কথা অনুসারে পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এডিস মশা জমা থাকা ময়লা , পানি ও বিভিন্ন আবর্জনা থেকে জন্ম নেয়। সব সময় চেষ্টা করতে হবে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২৪
জ্বর হলেই যে ডেঙ্গু জ্বর হবে বিষয়টা এমন নয়। ডেঙ্গু রোগের বিশেষ কিছু লক্ষণ আছে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলি উপস্থাপন করা হল
- ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হল তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
- মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে।
- হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
- ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
- মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
- রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।
- পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়।
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে।
- প্রস্রাব কমে যাওয়।
- হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার
শরীরে জ্বর তিন থেকে চারদিন থাকলে সর্ব প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। ডেঙ্গু রোগ বিচলিত না হয়ে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেটে যে সকল প্রতিকার আছে সে গুলি অবলম্বন করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।
- বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- ডেঙ্গু হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ
- জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
- জ্বরের উপর নির্ভর করে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর পর এই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাড়তি কোন ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- জ্বর কমানোর জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছতে পারেন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।
- ডেঙ্গু হলে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে তরল খাবার ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত কাজ করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
- ডেঙ্গুর জ্বর হলে অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক এনএসএআইডি গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার না করার প্রতি ডাক্তাররা কঠোরভাবে নিষেধ করে থাকে।