চিংড়ি ঝর্ণা ও ঋজুক ঝর্ণা, বান্দরবান। পুর্নাজ্ঞ ট্যুর প্ল্যান ও গাইড

গহীন পাহাড় আর অরণ্যে লুকানো ঝর্ণার সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসুদের টানে এক দুর্নিবার আকর্ষণে। তাই সকল দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তারা আস্বাদন করে অপরূপ সব ঝর্ণার সৌন্দর্য। অনেক সৌন্দর্যের উপাখ্যান বান্দরবানের ঝর্ণাগুলোর রূপ স্বপ্নিল সৌন্দর্যকেও হার মানায়। বান্দরবান মানেই পাহাড়ের দেশ, বান্দরবান মানেই দিগন্তজোড়া সবুজের দেশ। আর বান্দরবান মানেই ঝর্ণার দেশ। ঝর্ণা প্রেমীদের তাই প্রিয় একটি ভ্রমণ গন্তব্য হল বান্দরবান। ঝর্ণা শব্দটাই কেমন জানি রিনিঝিনি ছন্দময় আনন্দের অনুভূতি জাগায় শরীর ও মনে। ঝর্ণার সৌন্দর্য আর শীতলতায় যেন ধুয়ে যায় রাজ্যের সকল অবসাদ। এই বান্দরবানেরই এক অপূর্ব সুন্দর ঝর্ণা হল ঋজুক ঝর্ণা।

বান্দরবন জেলার রুমা বাজার থেকে নদীপথে থানচি যাওয়ার পথে পড়বে ঋজুক ঝর্না।রুমা বাজার থেকে ঋজুক ঝর্নার দুরত্ব ৫ কিলোমিটার এবং বান্দরবন সদর থেকে ৬৬ কিলোমিটার।সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ৩০০ ফিট উচু এই ঝর্না থেকে সারাবছরই  পানি পড়ে রিমঝিম শব্দে।

ঋজুক ঝর্ণা বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান

ঋজুক ঝর্ণা, বান্দরবান » আদার ব্যাপারী

এ যেন অনন্ত যৌবনা। তবে বর্ষার সময় ঋজুকের সৌন্দর্য যেন বাঁধন হারা। ঋজুক ঝর্ণা সাঙ্গুর বুকে এত বেশি পানি ঢালে যে প্রবল স্রোতের তোড়ে জলপ্রপাতের ধারে পৌঁছতে এমনকি বড় ইঞ্জিনের নৌকাগুলোরও বেগ পেতে হয়। তখন ঋজুকের সৌন্দর্য একেবারেই অন্য রকম। তবে শুকনো মৌসুমেও বেশ ভালো পরিমাণেই পানি থাকে ঝর্ণাটির বুকে।

গতি, উদ্দামতা কোনো কিছুতেই কমতি থাকে না তখন। জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষার ফলার মতো আপনার শরীরে এসে লাগবে ঠাণ্ডা পানির ফোয়ারা। মিষ্টি একটা অনুভূতি ছড়িয়ে যাবে সমস্ত শরীর ও মনে। এই দুগ্ধ স্বচ্ছ ধারায় জলকেলি করে নিমিষেই দূর হয়ে যাবে আপনার পথের সকল ক্লান্তি। যেখান থেকে ঋজুকের জলের ধারা নামছে , সেখানে পাহাড়ের গায়ে গভীর হয়ে জন্মেছে বুনো গাছপালা। চারিপাশের এই সবুজের আস্তরণ যেন এই ঝর্ণার সৌন্দর্যে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।

সাঙ্গুতে পানি একবারেই কম। নিচের বালি দেখা যায় পরিষ্কার। টলটলে স্বচ্ছ পানির নিচে ছোট ছোট নুড়ি-পাথরের রাজত্ব। এখানে নদীর হাঁটুজলে শামুক খুঁজে মারমা কিশোরীরা। ডানে পাহাড়, আর বামে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে ফসলের ক্ষেত। রুমা বাজারের দিকে আসার সময় প্রচুর বাঁশের চালি (ভেলা) চোখে পড়বে সাঙ্গুর বুকে। ভেলা বানিয়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দূর-দূরান্তে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশ।

ঋজুকের উল্টো পাশে নতুন ঋজুক পাড়া নামে মারমাদের একটা পাড়া আছে। আর এ পাশে পাহাড়ের ওপর বমদের যে পাড়াটি এর নামও ঋজুক পাড়া। হাতে সময় থাকলে ঋজুকের সৌন্দর্য  দেখার সাথে সাথে এসব আদিবাসীদের বিচিত্র জীবনধারাও অবলোকন করে আসতে পারেন। এটি আপনার জন্য হতে পারে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এই বম বা মারমাদের আতিথেয়তা আর আন্তরিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

কিভাবে যাবেন:

দেশের যেকোন জেলা থেকেই বান্দরবানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। ঢাকার কলাবাগান, সায়দাবাদ এবং ফকিরাপুল থেকে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর যেকোন একটি বাসে চড়ে সহজেই বান্দরবানের আসতে পারেন। এসব নন-এসি ও এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা।

এছাড়া মহানগর, তূর্ণা কিংবা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে চট্টগ্রামে তারপর সোজা বান্দরবানে চলে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরের বদ্দারহাট থেকেও পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের নন-এসি বাস ৩০ মিনিট পরপর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

কোথায় থাকবেন:

রুমায় যদি রাতে থাকতে চান তাহলে উঠতে পারেন হোটেল হিলটনে। এছাড়া বান্দরবান শহরে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউজ আছে। যেখানে ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। কিছু উল্লেখযোগ্য রিসোর্ট ও হোটেল হলো- হলিডে ইন রিসোর্ট, হিলসাইড রিসোর্ট, হোটেল ফোর স্টার, হোটেল থ্রি স্টার, হোটেল রিভার ভিউ ইত্যাদি।

চিংড়ি ঝর্ণা

বগালেক থেকে কেওক্রাডং এর পথে ঘণ্টাখানেকের পাহাড়ি পথ হাটলে চিংড়ি ঝর্ণাধারা দেখা যায়। নিচ থেকে ঝর্ণার ছোট একটি অংশ দেখা যায়। মূল ঝর্ণা দেখতে হলে বিশালাকারে পিচ্ছিল পাথরগুলো পার হয়ে ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে হবে।

কীভাবে যাবেন:

প্রথমেই পৌঁছাতে হবে বান্দরবান শহরে। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি যাতায়াত করে এই রুটে। হানিফ, শ্যামলী। এস আলম সহ আরো কয়েকটি বাস পাবেন। এসি নন এসি ভেদে ভাড়া ৫৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম পৌঁছে ওখান থেকে বাসে করেও বান্দরবান পৌঁছাতে পারেন।

বান্দরবান হতে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার আসতে হবে। এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে আবার রুমা থেকে বগালেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে।  মনে রাখা ভাল রুমা বাজার থেকে বিকাল ৪টার আগেই নাম এন্ট্রি করাতে হবে আর্মি ক্যাম্প-এ।

বগালেকের ১১৭৬ ফুট উঠার পর আবারও নাম এন্ট্রি করাতে হবে আর্মি ক্যাম্প-এ। এখানে খাওয়া দাওয়া শেষে আবার ট্র্যাকিং করতে হবে, প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটলেই এই চিংড়ি ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবেন।

কোথায় থাকবেন:

বগালেকে থাকতে পারেন। এখানে আবাসিক, অনাবাসিক থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় দের কাছে থাকতে পারেন। আর নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র সুলভ মূল্যেই পেয়ে যাবেন।স্থানীয় বম উপজাতি সম্প্রদায় কিছু ঘর ভাড়ায় দিয়ে থাকে । বগালেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করে থাকে । রুমা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ক্রয় করে নেওয়াই ভালো।

যারা কেওকারাডং যাবেন তারা সেইদিনই চাইলে কেওকারাডং চলে যেতে পারেন।  চিংড়ি থেকে কেওকারাডং যেতে ২/৩ ঘণ্টা লাগবে। তবে অবশ্যই স্থানীয় গাইড ছাড়া পায়ে হেটে রুমা থেকে অন্য কোন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া উচিত নয়।এছাড়া বান্দরবানে বেশ কয়েকটি হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। এখানে ফিরে এসেও থাকতে পারেন।

খেয়াল রাখবেনঃ

  • নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা থেকে গাইড ভাড়া করে নেবেন অবশ্যই।
  • শুকনা খাবার দাবার এবং পানি সাথে রাখবেন।
  • ফার্স্ট এইড সাথে রাখবেন সব সময়।
  • স্থানীয়দের সাথে ভালো আচরণ করবেন।
  • যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

Leave a Comment