খুলনার কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আছে সকল বিখ্যাত ব্যাক্তির সম্পর্কে জানুন।

খুলনা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। খুলনা জেলা এবং খুলনা বিভাগের সদর দপ্তর এই খুলনা শহরে অবস্থিত। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা এবং ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনাকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়।

খুলনা বহু বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান। প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত মতো অনেক বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান খুলনা। আজ পরিচিত হবো এমনই কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে।

খুলনার বিখ্যাত ব্যক্তি

১।কাজী ইমদাদুল হকঃ কাজী ইমদাদুল হক  ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ।কাজী ইমদাদুল হক সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। তার সম্পাদনায় নবনূর পত্রিকা প্রকাশিত হত। ১৯০৩ থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় তার সাথে মোহাম্মদ হেদায়াতুল্লাহ, মোহাম্মদ আসাদ আলি ও আরো অনেকে জড়িত ছিলেন

২।প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ঃ আচার্য স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় পি সি রায় নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, শিক্ষক, দার্শনিক ও কবি। তিনি বৈজ্ঞানিক জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন। পি সি রায় বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।

৩।বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখঃ নূর মোহাম্মদ শেখ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন।

৪।কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারঃ কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও পত্রিকা সম্পাদক। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন।

৫।বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানঃ মোহাম্মদ হামিদুর রহমানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে।

৬।মাইকেল মধুসূদন দত্তঃ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার এবং প্রহসন রচকার। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৭।আব্দুল হালিমঃ আব্দুল হালিম তিনটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ডকারী বাংলাদেশি। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র রেকর্ডকারী যিনি পরপর তিনটি রেকর্ড নিজের ঝুলিতে রেখেছেন। আব্দুল হালিম ১৯৭৫ সালের ২৭ মার্চ মাগুরার শালিখা উপজেলাধীন শতখালি ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া নামক গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

৮।মোহাম্মদ লুৎফর রহমানঃ মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন বাঙালি সাহিত্যিক, সম্পাদক ও সমাজকর্মী। তিনি ‘ডাক্তার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত যশোর জেলার মাগুরা মহাকুমার (বর্তমান মাগুরা জেলা) পরনান্দুয়ালী গ্রামে ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

৯।লালন শাহঃ লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

 

১০।ফররুখ আহমদঃ ফররুখ আহমদ একজন প্রখ্যাত কবি। তিনি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে।

১১।সৈয়দ আলী আহসানঃ সৈয়দ আলী আহসান বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সৈয়দ আলী ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ বর্তমান মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১২।কাজী কাদের নেওয়াজঃ কাজী কাদের নেওয়াজ একজন বিশিষ্ট কবি। প্রেম ও পল্লীর শ্যামল প্রকৃতি তার কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত। তিনি শিশুতোষ সাহিত্যেও খ্যাতিমান ছিলেন। কাদের নেওয়াজ মুর্শিদাবাদ জেলার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে।

১৩।যতীন্দ্রমোহন বাগচীঃ যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন একজন বাঙালি কবি ও সম্পাদক। তিনি নদীয়া জেলার জমশেরপুরে জমিদার পরিবারে (বর্তমান বাগচী জমশেরপুর) জন্মেছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস বলাগড় গ্রাম, হুগলী।

১৪।প্রফুল্লচন্দ্র সেনঃ একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী গান্ধীবাদি নেতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটিতে। পিতা গোপালচন্দ্র সেন। পিতার কর্মস্থান বিহারে তার স্কুলজীবন কাটে। দেওঘরের আর কে মিত্র ইন্সটীটিউশন থেকে ম্যাট্রিক ও কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ১৯১৮ সালে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।

১৫।ব্রজলাল শাস্ত্রীঃ

সরকারি বি. এল. কলেজ বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের অন্যতম প্রধান কলেজ যা খুলনা শহরে দৌলতপুরে ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯০২ সালের জুলাই মাসে খুলনার শিক্ষায় পৃষ্ঠপোষক শিক্ষানুরাগী শ্রী ব্রজলাল চক্রবর্তী (শাস্ত্রী) কলকাতার হিন্দু কলেজের আদলে ২ একর জায়গার উপর দৌলতপুরে হিন্দু একাডেমী নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে হাজী মহম্মদ মহসীন ট্রাস্ট তার সৈয়দপুর এস্টেটের ৪০ একর জমি এই প্রতিষ্ঠানে দান করে এবং মাসিক ৫০ টাকা অনুদান বরাদ্দ করে।

খুলনা জেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা

স. ম. বাবর আলী ও হুমায়ুন কবীর দাউদ আলী, আ. ব. ম. নুরুল আলম, এনায়েত আলী, স.ম ইউসুফ আলী, মাহবুবুল আলম হিরণ, হেকমত, তৈয়েবুল বাহার, মোশারেফ হোসেন, কায়কোবাদ, হায়দার গাজী সালাউদ্দিন রুনু, শেখ শহিদুল ইসলাম, এস্কান্দার কবির বাচ্চু, আবুল কাশেম, মিজানুর, আজিজুল ইসলাম, ফ.ম. সিরাজ, নুরুল ইসলাম খোকন, সেকেন্দার আলী, আব্দুস সামাদ, স.ম. সাত্তার , আব্দুস সবুর, খায়রুল আলম

Leave a Comment