ভারতে প্রতিটি প্রদেশে মুগ্ধ করার মত সৌন্দার্য আছে। কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত শহর। কলকাতা শহটি অপরূপ সৌন্দার্য নিয়ে সবাইকে স্বাগতম জানাই। খুব কম খরচে কলাকাতার আশপাশে অনেক দর্শনীয় জায়গা আছে। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত কলকাতার আশেপাশে বেশ কিছু পর্যটন স্থান রয়েছে। কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে, সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শান্তিনিকেতন থেকে শান্ত সমুদ্র সৈকত আর জাতীয় উদ্যানগুলির মতো দেখার জন্য কয়েকটি দারুণ জায়গা ৷ কলকাতার কাছেই অবস্থিত এই জায়গাগুলি।
অল্প খরচে কলকাতার এই সুন্দর জায়গা গুলি আপনি উপভোগ করতে পারেন। আপনি অল্প খরচে কলকাতায় ঘুরতে চাইলে আমাদের লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জন্য কিছু জায়গা
অল্প খরচে কলকাতার কাছাকাছি কিছু সুন্দর জায়গা আছে। অনেকে এই জায়গা গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে থাকলে আমাদের অনুচ্ছেদটি ভাল করে পড়লে খুব সহজে জায়গাগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
১। নীলদীপ গার্ডেন
কলকাতার কাছাকাছি ঘোরার জায়গার মধ্যে নীলদীপ গার্ডেন খুব জনপ্রিয় একটি জায়গা। কলকাতা থেকে ৩১ দূরে অবস্থান করছে নীলদীপ গার্ডেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের এই রিসর্টটি পিকনিক করার জন্যও দারুণ জায়গা। এই স্থানটিতে স্বপরিবারে বেড়াতে যাওয়া যায়। রং বেরঙের ফুলের বাগান, সুইমিং পুল, ছোটোদের খেলার পার্ক, ওয়াচ হাউস, সবজির খেত সবই পাবেন
২।হেনরি আইল্যান্ড
হেনরি আইল্যান্ড কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে। কলকাতা থেকে মোটামুটি ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত । সম্প্রতিকালে পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গা হেনরি আইল্যান্ড। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বকখালির কাছে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড, আইল্যান্ডটি মূলত একটি দ্বীপ।
সমুদ্র ,জঙ্গ্ল, বিচ সবকিছু মিলে বেশ সুন্দর ।মাছ ধরা সহ সমুদ্রের ধারে লাল কাঁকড়া বা নিত্যনতুন পাখির আনাগোনা অথবা সমুদ্রের ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা সাথে আইল্যান্ড বরাবর হেঁটে যাওয়া সব ধরনের অভিজ্ঞতা মন ভাল করে তুলবে।
৩। রায়চক
রায়চক কলাকাতার আশপাশে ঘোরার মত আদর্শ একটি জায়গা। কলকাতা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবারের একটি ছোট্ট শহর হল রায়চক। প্রাচীন সময় এখানে একটি দুর্গ ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে দুর্গটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। পরবর্তীতে গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত রেডিসন দুর্গকে পুনর্নির্মাণ করে একটি পাঁচতারা হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রায়চক থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কুকড়াহাটি বা হাওড়া জেলার গাদিয়াড়া যাওয়ার জন্য অনায়াসে নদী তীরবর্তী ফেরি পাবেন।
হোটেলটি বেশ ব্যয়বহুল, সমর্থ হলে একবার দু’দিনের জন্য এখানে গিয়ে ঘুরে আসুন। এরসাথে আপনি চাইলে গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ করার জন্য একটি ক্রুজ ভাড়া করতে পারেন। তবে এটিও খুব ব্যয়বহুল।সারা বছরই এখানে যাওয়া যায় (তবে গ্রীষ্মকাল বাদে)।
৪। সুন্দরবন
কলকাতার কাছাকাছি দেখার মত সব থেকে ভালো টুরিস্ট প্লেসগুলির অন্যতম হল সুন্দরবন ৷ কলকাতা থেকে প্রায় 109 কিমি দূরে অবস্থিত বিশ্বের মধ্যে বড় ম্যানগ্রোভ বন, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, জলপথ এবং জলজ প্রাণীগুলির জন্য৷ গরান গাছের ঘন জঙ্গলের বা ম্যানগ্রোভের একটি বড়ো অংশকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷ বাঘের অভয়ারণ্যে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ, জলপথ, খাঁড়ি এবং ছোট ছোট নদী, আপনি সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্কে উপভোগ করতে পারেন ওয়াইল্ড লাইফ বোট সাফারি৷ ইউনেস্কোর দ্বারা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে চিহ্নিত এই স্থানটি।
৫। বকখালি
আপনার সুন্দর কিছু সময় কাটতে পারে বকখালি রিসোর্টে। কলকাতা থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাকদ্বীপের নামখানায় (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্লক) সমুদ্র উপকূলবর্তী মনোমুগ্ধকর একটি রিসোর্ট হল বকখালি। এর মধ্যে কিছু সংকীর্ণ খাঁড়ির ব্রিজের সাথে সংযোগ রয়েছে।হেনরি’স আইল্যান্ড, এখানকার নিজস্ব সমুদ্র সৈকত।
৬। ফ্রেশারগঞ্জ
বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছে অবস্থিত ফ্রেশারগঞ্জ এমন একটি জায়গা যেটির ব্যাপারে পর্যটকরা খুব বেশি জানেন না। নিজের একান্ত কিছু সুন্দর সময় কাটাতে চাইলে একপাশে সমুদ্র অন্যদিকে বিস্তীর্ণ সৈকতে দু’টো দিন পারেন। কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দূরে অবস্থিত ফ্রেশারগঞ্জের অন্যতম আকর্ষণ হল জম্মু দ্বীপ।
৭। দীঘা
দীঘা হল পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতে মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি সমুদ্র সৈকত। এমন একটি কথা আছে যে আপনি পশ্চিমবঙ্গ ঘুরতে গেলেন আর দীঘা ঘুরতে গেলেন না তাহলে আপনার ভ্রমণটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।কলকাতাবাসীর চট করে ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে পড়লেই প্রথম পছন্দ এতাই হয় কারন এত কাছাকাছি এত ভালো সমুদ্র আর কোথায় পাবেন।ব্যস্ত জীবনের মাঝে মন হালকা করার জন্য এমন সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন।মাছ ভাজা, ঘটি গরম খাওয়া আর সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শোনা সত্যি প্রাণ ভরিয়ে দেয় ।
৮। ইকো পার্ক
কলকাতার রাজারহাটে অবস্থিত ৪৮০ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে। উদ্যানটি ভারতের বৃহত্তম উদ্যানের মধ্যে অন্যতম, এই পার্কের মধ্যে বিশাল জলাশয় আছে, মাঝখানে একটি দ্বীপ আছে, যেখানে খাবার রেস্তোরা ও আপনি ইচ্ছা করলেই থাকতে পারবেন। ইকো পার্কে মোট ছয়টি গেট আছে।চার নম্বর গেটের কাছে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের প্রতিরূপ রয়েছে।
৯। জয়পুর ফরেস্ট
জয়পুর ফরেস্ট প্রকৃতির অন্য এক রূপ। এখানে আপনি সকল প্রকার প্রাকৃতিক সোন্দার্য উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র হাজারো গাছের সবুজ দেখতে পাবেন, বন্যপ্রাণী এই জায়গাটি আদর্শ । কলকাতা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে বাঁকুড়া জেলা জয়পুর ফরেস্টে। দূরত্ব মাত্র ১২৭ কিলোমিটার। সবুজের শান্ত পরিবেশে মাঝে নানান পাখির ডাক তার সাথে যত্রতত্র হরিণ ঘুরে বেড়াতে দেখা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা । প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার অন্যতম জায়গা।
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রূপনারায়ণ নদীর কূলে গড়ে ওঠা কোলাঘাট শহর। কলকাতা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুন্দর এই জায়গাটি। নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে ঘুরতে যাওয়ার জন্য একটি সুন্দর জায়গা। নববর্ষ ক্রিসমাস এবং বিভিন্ন ছুটিতে এখানে লোকের ভিড় লেগেই থাকে। আকর্ষিত এই সুন্দর শহরটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম যা ইলিশ মাছ ও ফুলের জন্য বিখ্যাত।
১১।ডায়মন্ড হারবার
কলকাতার দক্ষিণ শহরতলীতে অবস্থিত, ডায়মন্ড হারবার হল একটি একদিনের উত্তেজনাপূর্ণ ভ্রমণ অথবা একটি সপ্তাহান্তভিত্তিক টুরিস্ট প্লেস ৷কলকাতা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মনোরম পরিবেশের এই জায়গাটি। এই আকর্ষণীয় গন্তব্যটি হল বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য আদর্শ ৷ পূর্বে হাজিপুর নামে পরিচিত, ডায়মন্ড হারবার এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখানে গঙ্গা নদী সাগরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য একটি দক্ষিণমুখী বাঁক নিয়েছে ৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও, পর্যটকরা একটি পর্তুগীজ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ এবং একটি লাইট হাউসও দেখতে পারেন৷
১২। ব্যারাকপুর
কলকাতা থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত, ব্যারাকপুর ছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রহের অন্যতম কেন্দ্রস্থল৷ শহরটিতে দেখার মতো বহু স্থান, যেমন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের ছোট সংস্করণ, শিবশক্তি অন্নপূর্ণ মন্দির ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামী মঙ্গল পান্ডের নামে নামাঙ্কিত একটি উদ্যান, শহীদ মঙ্গল পান্ডে উদ্যানটি ব্যারাকপুরে অবস্থিত৷ এখানকার সর্বাধিক জনপ্রিয় কার্যকলাপগুলির মধ্যে কয়েকটি হল চড়ুইভাতি, গঙ্গা নদীবক্ষে নৌকা-বিহার, ইত্যাদি৷ এখানে আরো দেখতে পাবেন বিজয়ান্ত মেমোরিয়ালও হল ভ্রমণকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ৷ এখানে অবস্থিত মিউজিয়ামটিতে আছে পাঁটটি গ্যালারি, একটি অধ্যয়ন কেন্দ্র এবং একটি সুবিশাল পাঠাগার ৷