রাজধানি ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল

আমরা অনেকেই ঢাকায় বসবাস করি । কেউ জন্ম সুত্রে আবার কেউ জিবিকার তাগিদে । কেউ কেউ আবার পড়াশুনার জন্যেও ঢাকায় থাকি । কিন্তু আমরা কয়জন ই বা ঢাকা কে ভালো ভাবে চিনি । ব্যাস্ত এই ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা ক্রমেই চিত্তবিনোদন থেকে দূরে সরে পড়ি  । তাই সবার জন্য নিয়ে এলাম ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ এর  ধারাবাহিক পর্ব। যার মাধ্যমে ঢাকার কিছু দৃষ্টি নন্দন ও সময় কাটানোর মত কিছু স্থান সমূহ এর সাথে পরিচিত হবেন যেখানে পরিবার বা প্রিয়োজন কে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন  । আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব ।   

ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ পর্ব – ১

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার 


আমাদের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জল স্মৃতির ফলক হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার । ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পাশেই এর অবস্থান । রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী হওয়া আন্দোলন রত ছাত্রদের মিছিলে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনীর নির্বিচারে গুলি বর্সনে নিহিত হন  সালাম, বরকত , জব্বার , রফিক সহ নাম না জানা অনেকে । সময় পেলে যে কোন একদিন বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে ।

bibrangla.com
ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

রোজ গার্ডেন প্যালেস


হিন্দু জমিদার হৃষীকেশ দাস ১৯ শতকে রাজধানী ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেন প্যালেস টা নির্মান করেন । রোজ গার্ডেনের নয়নাভিরাম সাজঘর ছিল তৎকালীন সময়ের মুল আকর্শনের কেন্দ্র বিন্দু। প্রাসাদের সামনে বাগানে রয়েছে মার্বেল পাথরের তৈরি কয়েকটি সুদৃশ্য মুর্তি। ছুটির দিন ছাড়া অন্য সকল দিনেই আপনি রোজ গার্ডেন এ ঘুরতে পারবেন । কিন্তু মুল ভবনের  ভিতরে ঢুকার ক্ষেত্রে আপনাকে কর্তিপক্ষের পুর্ব অনুমতির প্রয়োজন হবে ।

ঢাকার আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

birbangla.com
রোজ গার্ডেন প্যালেস

তারা মসজিদ


পুরান ঢাকার আরমানিটোলার আবুল খয়রাত সড়কে তারা মসজিদ টি অবস্থিত। তৎকালীন ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম পীর ১৮ শতকের শুরুর দিকেএই মসজিদ টি নির্মান করে । মোঘল স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদ টি অনেকের কাছে সিতারা মসজিদ বা মির্জা গোলাম পীরের মসজিদ নামেও পরিচিত। পুরো মসজিদের নকশায় তারা র চিত্র কর্ম এবং মসজিদ প্রাঙ্গনে তারা র স্থাপনা বিশেশ ভাবে লক্ষণীয়। এই বিশেষ নকশার কারনে মসজিদ টি সকলের কাছে তারা মসজিদ নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

birbangla.com
তারা মসজিদ

লালবাগ এর কেল্লা


যুবরাজ শাহাজাদা আজম যিনি কিনা সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র ছিলেন, ১৬৭৮ সালে লালবাগে একটি দুর্গ নির্মান করেন । বর্ত্মানে লালবাগ কেল্লা সুবেদার শায়েস্তা খানের বাসভবন ও দরবার হল জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । এখনে উল্লেখ যোগ্য দর্শনিয় স্থান হল শায়েস্তা খানের কন্যা ও সুলতান আজম শাহ এর স্ত্রী পরিবিবির সমাধি সৌধ এছাড়াও রয়েছে মনোরম বাগান, লালবাগ কেল্লার মসজিদ, ফোয়ারা, অরো কিছু সমাধি, তৎকালীন সময়ে যুদ্ধে ব্যবহৃত কিছু কামান, এবং একটি গোপন সুড়ংগ (যদিও সুড়ংগ টি দেখার উপযোগী নেই) ইত্যাদি। সপ্তাহের রবি ও সোমবার যথাক্রমে পুর্ন দিবস ও অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে এছাড়াও সকল সরকারী ছুটির দিনেও লালবাগের কেল্লা বন্ধ থাকে।

ঢাকার মধ্যে ঘোরার জায়গা

birbangla.com
লালবাগ এর কেল্লা

আহসান মঞ্জিল


পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকা শহরের প্রথম ইট পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হল আহসান মঞ্জিল।আহসান মঞ্জিল ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গণি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন।১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।

এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম খিলান আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিলের রঙ্গমহলের ২৩ টি কক্ষে ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন রয়েছে।

birbangla.com
আহসান মঞ্জিল

জাতীয় জাদুঘর


জাতীয় জাদুঘর রাজধানী ঢাকার শাহাবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিস্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, ও চারুকলা ইন্সটিটিউট এর পাশে অবস্থিত। ১৯১৩ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের  একটি কক্ষে স্থাপিত হলেও ১৯৮৩ সালের ১৭ই নভেম্বর এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।জাদুঘরে ৪৬ টি গ্যালারীতে প্রায় ৮৩ হাজার এর ও বেশি নিদর্শন আছে। এটি দক্ষিন এশিয়ার সর্ব বৃহৎ যাদুঘর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সরকারী ছুটির দিন ব্যাতিত সব দিন যাদুঘর খোলা থাকে । তবে ২১শে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি বিশেষ দিন গুলো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মোক্ত থাকে। জাদুঘরে প্রতিদিন গড়ে ২০০০ এর বেশি দর্শনার্থী আসেন। এদের মধ্যে বিদেশিরাও আছেন । দর্শনার্থীর পরিমান প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা।  বিদেশীদের জন্য ১০০ টাকা। তবে সার্কভুক্ত দেহস্রে দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকার টিকিটেই প্রবেশাধিকার পাবেন। বাংলাদেশের যুগ যুগ ধরে বেড়ে উঠার সমস্থ স্মৃতি চিহ্ন ধারাবাহিকতার সাথে আগলে রেখে চলা জাতীয় জাদুঘর থেকে আপনি আপনার প্রিয়জনদেন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

birbangla.com
জাতীয় জাদুঘর

মৈনট ঘাট


দোহার উপজেলার মৈনট ঘাট বর্তমানে “মিনি কক্সবাজার” নামে পরিচিত। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে সোজা একটি রাস্তা এসে মিলেছে দোহারের মৈনট ঘাটের সাথে। পদ্মার এক পাড়ে দোহার এবং অপর পাড়ে ফরিদপুর। ঘাটের পুর্ব পাশে বিশাল চর মানুশ কে সাগরের বেলা ভূমির কথা মনে করিয়ে দেয় । আর সামনের বিস্তির্ন পদ্মা পায় সাগরের রুপ। যে কেউ চাইলে এখান থেকে নৌযান করে পদ্মার বুকে ঘুরে আসতে পারেন কিংবা পদ্মার পাড়ে হেটে বেড়াতে পারেন ইচ্ছা মত। যেহেতু এটি ঢাকার অদুরে এবং দিনে গিয়ে ফিরে আসা যায় তাই প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। চাইলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন এই মিনি কক্সবাজার থেকে।

birbangla.com
মৈনট ঘাট

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের রাজধানী ঢাকার কিন্তু দেখার শেষ নাই, কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কোথায় কি আছে । তাই সবার ধারনা দেওয়ার জন্য আজকের এই আয়োজন । আপনাদের সকল প্রকার মতামত, অভিযোগ কিংবা পরামর্শ আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। আশা করি খুব শিগগিরি ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ এর ২য় পর্ব নিয়ে হাজির হবো ।

Leave a Comment