কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান ও ভ্রমন গাইড নিয়ে বিস্তারিত আলোচান করা হয়েছে।

দেশের ভেতর ঘুরতে যেতে চাইলে সবার প্রথম যে নামটা মাথায় আসে সেটা হলো কক্সবাজার ।পৃথিবীর সব থেকে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজার ।প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে বসে সুর্যাস্ত দেখার মত স্বর্গীয় অনুভুতি অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না ।কক্সবাজার গেলে যে শুধুমাত্র এই সমূদ্র দেখতা পারবেন তা কিন্তু নয় ।এছাড়া আছে নদী ,দ্বীপ,পাহাড়,স্বর্ন মন্দির যাযে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করতে বাধ্য ।যদি এখনো আপনি কক্সবাজারে না গিয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্ট টা আপনার জন্য ।

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজারে যাওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে এর দর্শনীয় স্থান  কি কি আছে ।কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানসমূহ

১।কক্সবাজার সমূদ্র সৈকত

২।মেরিন ড্রাইভ

৩।হিমছড়ি

৪।ইনানী বিচ

৫।রামু

আপনি কয়দিন থাকতে পারবেন সেভাবে আপনাকে ট্যুর প্লান করতে হবে ।কারন কক্সবাজার এমন একটা জায়গা যেখানে মাসের পর মাস শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও কখনো মনে হবে না এখান থেকে চলে যায় ।কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে আপনাকে নির্দিষ্ট প্লান করে যেতেই হবে ।

 এক দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ

(যারা কক্সবাজার যেতে চান কিন্তু হাতে সময় কম তাদের জন্য এই পোস্ট)

কিভাবে যাবেনঃ

গাবতলি থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার বাসে উঠে পড়ুন। সুপারভাইজারকে বলবেন আপনাকে যেন কক্সবাজার কলাতলী বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। বাস ওখানে পৌছবে সকাল ৬-৬ঃ৩০ এর মধ্যে। বাস থেকে নেমেই দেখবেন সামনে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত! 

 সৈকত ধরে ডান দিকে হাঁটতে থাকুন একদম শেষ মাথায় ঝাউবনের লাগোয়া লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত। ১-২ ঘন্টা বিচে ঘোরাঘুরি করে যেকোন বিচের পাশের হোটেলগুলির মাঝখান দিয়ে মেইন রোডে আসুন। রিক্সায় উঠে ১০ টাকা দিয়ে চলে আসুন কলাতলি বাস স্ট্যান্ডে। এখানে ব্রেকফাস্ট করে নিতে পারেন। তারপর দেখবেন অনেকগুলো অটো দাঁড়িয়ে আছে হিমছড়ি, ইনানী যাওয়ার জন্য। হিমছড়ি যাওয়ার জন্য ঠিক করুন একটাকে। রিজার্ভ নিতে লাগবে ১০০ টাকার মত। মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে পূর্ব দিকে যেতে থাকুন হিমছড়ির দিকে।

 

কক্সবাজার ভ্রমণমাঝখানে সুন্দর কিছু পাহাড়, ঝড়না, গুহা আছে, নেমে ছবি তুলে আসতে পারেন। হিমছড়ি পৌছে ৩০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়ুন পাহাড়ে। ওঠার ক্লান্তি মিলিয়ে যাবে উপরে উঠে ডানে বামে পুরো সৈকতের অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখে। পাহাড় থেকে নেমে দেখুন আবার অনেক অটো দাঁড়িয়ে আছে ১৬ কিমি দূরে ইনানী যাওয়ার জন্য। একটাকে রিজার্ভ করুন শুধু যাওয়ার জন্য। ২০০ টাকা লাগতে পারে।

ইনানী বিচ

অন্যান্য বিচের চেয়ে ইনানীর পার্থক্য হল প্রবাল পাথরের উপস্থিতি । ইনানী দেখে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেরার জন্য কক্সবাজার কলাতলির দিকে রওনা দিন। রিজার্ভ নিলে ৩০০ টাকার মত লাগবে আর অন্য কয়েকজনের সাথে মিলে আসলে আরো অনেক কম। কলাতলিতে এসে বাসের কাউন্টার থেকে রাত ৮টা, ৯টা অথবা ১০ টার বাসের টিকেট কাটুন। কলাতলিতে না পেলে ১০ টাকা দিয়ে কক্সবাজার বাস টার্মিনালে আসুন। এসে দেখবেন অনেক বাসের কাউন্টার। একটায় না একটায় টিকেট পাবেন ১০০% নিশ্চিত। ঢাকা এসে পৌছবেন পরদিন দুপুরের আগেই। ধন্যবাদ সবাইকে।

                                                               দুই দিনের কক্সবাজার ভ্রমণ

যাত্রা  ঃ ঢাকা ফকিরাপুল থেকে “হানিফ পরিবহণের”  বাসে করে সন্ধ্যা ৭টায় টেকনাফের উদ্দেশ্য বাস পাবেন।

টেকনাফ   ঃ সকাল ৮টার মধ্যে  টেকনাফের “কেয়ারী ঘাটে” পৌঁছাবেন।   তাই আর দেরি না করে কেয়ারী ঘাটেই সকালের নাস্তা সেরে “সরাসরি স্পেশাল” পরিবহণে করে কক্সবাজার চলে যাবেন।  বাস ভাড়া ১৮০টাকার মত।সকালের নাস্তা টা ওখানেই সেরে নিন।

কক্সবাজার  ঃ কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ১২টা বেজে যাবে।   হোটেল কনফার্ম করে হোটেলে চলে যবেন।

হোটেল ঃ আমরা কলাতলি বিচের কাছাকাছি বিচ ওয়ে হোটেলের গোলিতে অনেক হোটেল পাবেন । এপার্টমেন্টে ৩,৫০০ টাকায় (২ দিনের জন্য) একটি ফ্লাট ভাড়া নেই। ৩ রুমের ফ্লাট, ২টা বাথরুম, ২টা বেলকনি, একরুম এসি, এক কথায় আমাদের ১০ জনের জন্য অসাধারণ। তবে একটু দামাদামি করলে দিন প্রতি ১৫০০ টাকা মানে দু’দিনের জন্য ৩০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। (খরচঃ হোটেল ভাড়া বাবদ ৩৫০ টাকা)

সমুদ্রে  গোসল  ঃ সমুদ্রে গোসল করতে চাইলে অবশ্যই ২টার আগে যাবেন। ২টার পর দ্রুত ভাটা চলতে থাকে। তখন সমুদ্রের পানি দ্রুত নেমে যেতে থাকে তাই স্রোতে ভেসে যাবার রিস্ক থাকে এবং গোলস করেও মজা থাকে না। সমুদ্রে গোসল করতে যাবার আগে মোবাইল ফোন, জুতা, টাকা-পয়সা অন্যান্য সরঞ্জাম না নিয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা বিচে এগুলো রাখার কোন সেফটি প্লেস নেই। বিচ ফটোগ্রাফারদের দিয়ে ছবি তুলে নেবার আগে দামাদামি করে নিন। এরা ৫টাকা করে চাবে। দামাদামি করলে ২.৫-৩ টাকায় রাজি হয়। ছবি তুলে দেবার পর ছবিগুলো নেবার আগে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ছবিগুলো সিলেক্ট করে নিন কোন কোন ছবিগুলো আপনার ভালো লেগেছে এবং বাকিগুলান ডিলিট করে দিন। কেননা তারা এক ছবি ৩/৪বার স্নাপ নেয় যার ফলে বারতি টাকা দাবি করে। মনে রাখবেন ছবি সিলেক্ট করবার সময় একবারই সিলেক্ট এবং ডিলিট করবেন। তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয় না।

চাঁদের গাড়ি ভাড়া  ঃ সমুদ্রে গোসল সেরে হোটেলে ফিরে আধা ঘন্টার মধ্যে সবাই রেডি হয়ে  যান।  দুপুরের খাবার শেষ করে “ইনানী বিচে” এর দিকে যেতে পারেন । সুগন্ধা বিচের মাথায় মেইন রোডে ইনানী বিচে যাবার জন্য চাদের গাড়ি এবং অটো ভাড়া পাওয়া যায়। দামাদামি করে ১২০০ টাকায় একটা চাদের গাড়ি রিজার্ভে ভাড়া করবেন। যেটা আমাদের ইনানী বিচে নিয়ে যাবে এবং নিয়ে আসবে।

দুপুরের খাবার  ঃ  কক্সবাজারে দুটি জনপ্রিয় খাবার হোটেল আছে। একটি “শালিক” এবং অন্যটি “পোউশি”। ইনানী বিচে যাবার পথে শালিক রেস্তোরা পরে। খাবার আইটেমঃ ভাত,২ প্লেট ভর্তা (৫জের জন্য এক প্লেট এনাফ), ডাল ২ বাটি, বিফ মাংস (২টা)। রেটিং ৮.৫/১০। কক্সবাজারে মাছের দামও বেশি।

মেরিন ড্রাইভ  ঃ  সমুদ্রের পারে বিচ ঘেসে চলে গেছে দীর্ঘ পিচঢালা পথ। মেরিন ড্রাইভ। এই পথ দিয়ে গাড়িতে চলবার অনুভূতিও অন্যরকম। গাড়ি চলছে, পাশেই সমুদ্রের বেলাভূমি। বেলাভূমি ঘেসে সমুদ্র। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেলাভুমির তটে। সূর্যও ডুবি ডুবি করছে। সমুদ্রের গর্জন। কিছুদুর পরপর পথের দুধারে ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, সুপারি আর পানের বাগান। সব মিলিয়ে মেরিড ড্রাইভের পিচঢালা পথ সমুদ্রের দীর্ঘ সী-বিচের মতই অপূর্ব।

মেরিন ড্রাইভ

ইনানী বিচ  ঃ  মেরিন ড্রাইভ ধরে ইনানী বিচে পৌঁছে যাবেন।  পরপর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এসে শীতল জলে বারবার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর আমি ফিরে যাচ্ছি ফ্যান্টাসিতে। এখানেও ফটোগ্রাফারে গিজগিজ করছে। একজন ফটোগ্রাফার ঠিক করে নিবেন।। কিছুক্ষণ পর সূর্যাস্ত শুরু হলো। ওয়েদার ভালো ছিলনা, তাই সূর্যাস্ত মন মত দেখা গেল না। একটু সূর্য থাকে আবার মেঘ ঢেকে দেয়। হাটু পানিতে নেমে সূর্যের লুকোচুরি দেখতে পারবেন। বিচের একপাশে ডাব বিক্রি হয়। প্রতিটি ডাব ৪০-৪৫ টাকা নেবে।

 হিমছড়ি ঃ কক্সবাজারের কলাতলী মোড় থেকে খোলা জিপে হিমছড়ি যেতে হয়।জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৭০ থেকে ১০০।রিজার্ভ যাওয়া যাবে ১০০০-১৫০০।ইজিবাইক/অটোরিক্সায় যাওয়া যায় ৪০০-৫০০ টাকায়।হিমছড়ির ইকোপার্কে যেতে লাগে ২০ টাকা।

হিমছড়ি ভ্রমণ

রামু ঃকক্সবাজার থেকে রামু যেতে হলে সব থেকে সহজ উপায় গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া ।জনপ্রতি ৪০/৫০ টাকা লাগে ।রিজার্ভ  করলে ৪০০/৫০০ টাকা ।৪/৫ ঘন্টায় সবগুলো বৌদ্ধ মন্দির দেখতে পারবেন।

রামু

কেনাকাটা  ঃ কেনাকাটার জন্য চলে যাবেন বিচের পাশেই লাবনি পয়েন্টের মার্কেটে । কেনার মত অনেক কিছু পাবেন ।আচার ,চকলেট ,বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক জিনিস দিয়ে বানানো শো-পিচ।

Leave a Comment