বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি শহর।প্রাকৃতিক স্বপ্নিল সৌন্দর্যের লীলাভুমি রুপসী কন্যা বান্দরবান।বান্দরবান – যেখানে আমাকে বারবার যেতে বলা হলেও আমার মধ্যে বিরক্তি আসবে না।প্রতিবারই এর ভয়ংকর পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবেন।পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা।এখানে পাবেন বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের বিবরণ।
বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান সমূহ
১. সাকাহাফং, বান্দরবানঃ
বাংলাদেশের একটি পাহাড়চূঁড়া। চূঁড়াটিকে অনেক সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর উচ্চতা ১,০৫২ মিটার । বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে চূড়াটি অবস্থিত।
২. তিনাপ সাইতার/ পাইন্দু সাইতার
তিনাপ সাইতার (Tinap Saitar) বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত যা এখন বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত। অনেকের কাছে এটি পাইন্দু সাইতার নামেও পরিচিত। তিনাপ সাইতার যেতে হলে হেঁটে পাড়ি দিতে হবে ৪০ কিলোমিটার পথ। আবার সেই পথেই ফিরে আসতে হবে।
৩. ৎলাবং ঝর্না/ ডাবল ফলস/ ক্লিবুং ঝর্না/ ত্লাবং ঝর্না
ডাবল ফলস (Double Falls) বা ত্লাবং ঝর্ণা বান্দরবন জেলার অন্যতম আকর্ষনীয় জলপ্রপাত যা দ্বৈত ঝর্ণা কিংবা জোড়া ঝর্ণা বা ক্লিবুং খাম নামেও পরিচিত। এটি রিমাক্রি খালের আদ্যস্থল। দুটি প্রবাহ প্রানশা বা প্রাংশা (বামে) ও পাঙ্খিয়াং বা পাংখিয়াং (ডানে) ঝিরি মিলে দুটি আকর্ষনীয় জলপ্রপাত তৈরী হয়েছে। ২টা ঝর্ণা একসাথে থাকার কারণের একে ডাবল ফলস বলা হয়। এটি বম গ্রাম হতে মাত্র ২.৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্ব এবং কেওক্রাডং থেকে ১-২ ঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত।
৪. মিলনছড়ি, বান্দরবান
মিলনছড়ি বান্দরবান শহর থেকে ৩ কিঃমিঃ দক্ষিণ পূর্বে শৈলপ্রপাত বা চিম্বুক যাওয়ার পথে পড়ে। এখানে একটি পুলিশ ফাড়ি আছে। পাহাড়ের বেশ উপরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে অবারিত সবুজের খেলা এবং সবুজ প্রকৃতির বুক ছিঁড়ে সর্পিল গতিতে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নামের মোহনীয় নদীটি দেখা যাবে।
৫. নাফাখুম জলপ্রপাত
নাফাখুম ঝর্ণাটি (Nafakhum Waterfall), বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবন হতে ৭৯ কিমি. দুরে অবস্থিত থানচি। এটি একটি উপজেলা। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। প্রকৃতি এখানে এত সুন্দর আর নির্মল হতে পারে ভাবাই যায় না। নদীর দুপাশে উচু উচু পাহাড়। সবুজে মোড়ানো প্রতিটি পাহাড় যেন মেঘের কোলে শুয়ে আছে অবলিলায়। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে আছে মেঘের আস্তরে।
৬. কেওক্রাডং
কেওক্রাডং (Keokradong) বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। এটি বাংলাদেশের বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত। এক সময় এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ছিল। যদিও আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সাকাহাফং বা মদক তুং। দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়াকে ধোয়াটে মনে হয়। সাদা মেঘে ঢাকা। হওয়ায় ঝাপটায় দাঁড়ানো দায়। বৃষ্টি–বাতাস-মেঘ সময় সময় দখল নেয় চূড়ার আশপাশ।
৭. তাজিং ডং বিজয়
স্থানীয় উপজাতীয়দের ভাষায় ‘তাজিং’ শব্দের অর্থ বড় আর ‘ডং’ শব্দের অর্থ পাহাড়, এ দুটি শব্দ থেকে তাজিংডং পর্বতের নামকরণ করা হয়। সরকারি ভাবে, একে বিজয় পর্বত নামেও সম্বোধন করা হয়। তাজিংডং বাংলাদেশের বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে সাইচল পর্বতসারিতে অবস্থিত। এটি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার, উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্বতের অবস্থান। তাজিংডং (বিজয় নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের একটি পর্বতশৃঙ্গ।
৮. নীলাচল
বান্দরবান শহরের কাছে প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর অবস্থিত নীলাচল (Nilachal) পর্যটন কেন্দ্র। শহর থেকে মাত্র ৫কিমি দুরে অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এই নীলাচল যা টাইগার পাড়া এলাকায় অবস্থিত। চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢালে কোথাও আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাহাড়ী পাড়া আর রূপালী নদী গুলো যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। এই পাহাড় থেকে এক নজরে দেখা যাবে পুরো বান্দরবান শহর। সুর্যোদয় আর সুর্যাস্ত দেখা যেতে পারে এখান থেকেও। নীলাচল পাহাড়ি এলাকাটি অনেকেই স্বর্গভূমি বলে থাকেন।
৯. ঋজুক ঝর্না
বান্দরবন জেলার রুমা বাজার থেকে নদীপথে থানছি যাওয়ার পথে পড়বে ঋজুক ঝর্ণা (Rijuk Waterfalls)। মার্মা ভাষায় একে রী স্বং স্বং বলা হয়। রুমা বাজার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং বান্দরবন সদর হতে ৬৬ কিঃমিঃ। সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে সারা বছরই এ জলপ্রপাতটির রিমঝিম শব্দে পানি পড়ে। এই জলপ্রপাতে সারা বছর পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় ঋজুক সাঙ্গুর বুকে এত বেশি পানি ঢালে যে প্রবল স্রোতের তোড়ে জলপ্রপাতের ধারে পৌঁছতে এমনকি বড় ইঞ্জিনের নৌকাগুলোরও বেগ পেতে হয়।
১০. বগালেক
বগা লেক (Boga Lake) যা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট একটি লেক। ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয়। মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বগা লেক এর অবস্থান। পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এই লেকের অবস্থান।
১১. নীলগিরি
মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে যেতে হবে বান্দরবনের নীলগিরি। নীলগিরি গেলে মেঘ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করে নীলগিরির পাহাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি। নীলগিরির কারণে বান্দরবানকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান। নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে।
১২. চিম্বুক পাহাড়ঃ
এক সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল উঁচু পাহাড় মানেই চিম্বুক। আর পাহাড় কাকে বলে সেটা দেখতে হলেও যেতে হবে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটনের প্রাণ বান্দরবান। চিম্বুককে বলা হতো বাংলার দার্জিলিং। শহর থেকে কোনো পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া মানেই সবার আগে আসতো চিম্বুকের নাম।কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ট্রেকারদের অদম্য মানসিকতা, পর্যটদের প্রবল আকর্ষণের কাছে এক সময় একেবারেই জৌলুস হারায় শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের এ পাহাড়টি। কারণ ততদিনে সব আকর্ষণ টেনে নিয়েছে নীলগিরি, নীলাচল, কেওক্রাডং কিংবা সাফা হাফং।
১৩. লুং ফের ভা সাইতার
১৪.আন্ধারমানিক
১৫. ডিম পাহাড়
১৬. রূপ মুহুরী ঝর্না
১৭. আলীর সূড়ঙ্গ
১৮. কেওক্রাডং
১৯. জাদিপাই ঝর্না
২০. মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স
২১. প্রান্তিক লেক
২২. সাতভাইখুম
২৩. তুক অ/ লামোনই ঝর্না/ ডমতুয়া ঝর্না
২৪. মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স
২৫. তিন্দু
২৬. নীল দিগন্ত
২৭. আমিয়াখুম
২৮. শৈল প্রপাত
২৯. বুদ্ধ ধাতু জাদি (স্বর্ন মন্দির)
৩০. জাদি পাড়ার রাজবিহার
৩১. উজানিপাড়ার বিহার
৩২. চিম্বুক বম ও ম্রো উপজাতির গ্রাম
৩৩. কিয়াচলং হ্রদ
৩৪. চিনরি ঝিরি/ চিংড়ী ঝর্না
৩৫. ফাইপি ঝর্না
৩৬. রেমাক্রি
৩৭. থানচি
৩৮. পতংঝিড়ি ঝর্না
৩৯. সাংগু নদী
৪০. সিপ্পি আরসুয়াং
৪১. মুনলাই পাড়া, রূমা
৪২. নাইক্ষংছড়ি উপবন পর্যটন লেক
৪৩. ভেলাখুম
৪৪. তিনাম ঝর্না
৪৫. পালং খিয়াং ঝর্না
৪৬. দেবতাখুম
৪৭. লামা
৪৮. মারায়ন ডং
৪৯. কং দুক/ যোগীহাফং
৫০. জৎলং/ মোদকমুয়াল
৫১. জীবননগর পাহাড়
৫২. শুভ্র নীল
৫৩. ক্যামলং জলাশয়
৫৪. উপবন লেক
৫৫. কানাপাড়া পাহাড়
সচেতনতা ও সতর্কতাঃ
-
কংলাক পাহাড়ের আশেপাশে অনেকেই খাবারের প্যাকেট বা পানির বোতল ফেলে রেখে যান, যেটা মোটেই কাম্য নয়
-
যে কোন যানবাহনেই পাহাড়ে উঠা একটু ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আপনার ড্রাইভারকে সচেতন ও সজাগভাবে গাড়ি চালাতে বলবেন
-
যেখানে যাবেন সেখানকার মানুষ এবং সংস্কৃতিকে মানিয়ে চলার চেষ্টা করবেন
-
রেমাক্রিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবেন না একদমই, কাজেই রেমাক্রি যাবার পূর্বে সবাইকে বিষয়টা জানিয়ে তারপর যাবেন
-
সব জায়গায় ভাড়া বা দাম নেগোশিয়েট করার চেষ্টা করবেন, এটা আপনার খরচ অনেকখানি কমিয়ে দেবে